চীনের ওপর আরও ৫০% শুল্ক আরোপের হুমকি ট্রাম্পের

ডেস্ক রিপোর্ট
  ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ১৩:১৫


চীন যদি ৩৪ শতাংশের পাল্টা শুল্ক প্রত্যাহার না করে, সেক্ষেত্রে তাদের পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে অতিরিক্ত ৫০ শতাংশ শুল্কের মুখোমুখি হবে বলে হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প।
গত সপ্তাহে ট্রাম্প তার ‘অর্থনৈতিক স্বাধীনতা দিবসের' অংশ হিসেবে চীনা আমদানির ওপর ৩৪ শতাংশ কর আরোপের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর রোববার পাল্টা শুল্ক বসায় বেইজিং।
ট্রাম্প সোমবার সোশাল মিডিয়ার এক পোস্টে ওই শুল্ক বাতিলে চীনকে মঙ্গলবার পর্যন্ত সময় বেধে দিয়েছেন। বেইজিং তা না করলে ৫০ শতাংশ নতুন শুল্ক বসবে।
এর প্রতিক্রিয়ায় ওয়াশিংটনের বিরুদ্ধে ‘অর্থনৈতিক উৎপীড়নের’ অভিযোগ তুলে যুক্তরাষ্ট্রে চীনা দূতাবাস বলেছে, “বেইজিং তার বৈধ অধিকার ও স্বার্থ দৃঢ়ভাবে রক্ষা করবে।”
বিবিসি লিখেছে, ট্রাম্প যদি নিজের হুমকি অনুযায়ী আদেশ দেন, তাহলে মার্কিন কোম্পানিগুলোকে চীনা পণ্য আমদানিতে ১০৪ শতাংশ শুল্ক গুনতে হতে পারে। কারণ মার্চেই ২০ শতাংশ এবং গত সপ্তাহে ৩৪ শতাংশ- মোট ৫৪ শতাংশ শুল্ক ইতোমধ্যে রয়েছে। নতুন করে ৫০ শতাংশ বসলে বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতি ও বৈশ্বিক প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ আরও গভীর হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ট্রাম্প ট্রুথ সোশাল পোস্টে এও বলেন, “আমাদের সঙ্গে [শুল্ক নিয়ে] চীনের অনুরোধে চলা সব আলোচনা বন্ধ করা হবে!”
মার্কিন প্রেসিডেন্ট সোমবার বলেন, শুল্ক প্রশ্নে অন্যান্য দেশকে আলোচনার সুযোগ করে দিতে তিনি বৈশ্বিক আমদানি শুল্ক স্থগিত করার কথা বিবেচনা করছেন না।
“আমরা সেদিকে নজর দিচ্ছি না। অনেক, অনেক দেশ আমাদের সঙ্গে চুক্তি করতে আসছে এবং সেখানে ন্যায্য চুক্তি হতে যাচ্ছে।”
ট্রাম্প বলেন, “মার্কিন শুল্কের পাল্টায় কোনো দেশ যদি শুল্ক বসায়, অবিলম্বে উচ্চ হারের নতুন শুল্কের মুখোমুখি হতে হবে বলে যে সতর্কবার্তা দিয়েছিলাম আমি, তা উপেক্ষা করে চীন পাল্টা শুল্ক দিয়েছে।”
বেইজিং পাল্টা বলেছে, “চীনকে চাপ দেওয়া বা হুমকি দেওয়া সমস্যা সমাধানের সঠিক উপায় নয়।”
চীনা দূতাবাসের মুখপাত্র লিউ পেংইউ বলেন, “‘পারস্পরিক সহযোগিতার’ নাম করে মার্কিন আধিপত্যবাদী পদক্ষেপ অন্যান্য দেশের বৈধ স্বার্থের বিরুদ্ধে নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য কাজ করছে এবং আন্তর্জাতিক নিয়মের বাইরে গিয়ে 'সবার আগে আমেরিকা’ নীতিকে রেখেছে।
“একতরফাবাদ, সংরক্ষণবাদ এবং অর্থনৈতিক নিপীড়নের একটি প্রচলিত পদক্ষেপ।”
হোয়াইট হাউসে দেওয়া বক্তৃতায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, স্থায়ী শুল্ক ও আলোচনা উভয়ই হতে পারে।
“একটি কারণে আমাদের ৩৬ ট্রিলিয়ন ডলার ঋণ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র একটি ‘ন্যায্য চুক্তি ও ভালো চুক্তি’ করতে অন্যান্য দেশের পাশাপাশি চীনের সঙ্গেও কথা বলবে।”
বিবিসি লিখেছে, এই শুল্ক চীনের নির্মাতাদের জন্য একটি বড় আঘাত হিসাবে আসবে, যাদের কাছে যুক্তরাষ্ট্রই রপ্তানির প্রধান বাজার।
যুক্তরাষ্ট্রে চীনা রপ্তানি পণ্যের শীর্ষে রয়েছে বৈদ্যুতিক পণ্য এবং অন্যান্য যন্ত্রপাতি, কম্পিউটার, আসবাবপত্র, খেলনা, যানবাহন ও সরঞ্জাম।
তার বিপরীতে চীনে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ রপ্তানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে- তেলবীজ, শস্য, উড়োজাহাজ, যন্ত্রপাতি ও ওষুধ।
মার্কিন শুল্ক ঘিরে অনিশ্চয়তা বিশ্বজুড়ে শেয়ারবাজারে চরম অস্থিরতা ডেকে এনেছে। ট্রাম্প শুল্ক ঘোষণার পর থেকে বিশ্বব্যাপী বাজার পড়ে গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রে সোমবার শেয়ার বাজার খোলার পর ফের দরপতন ঘটেছে, যখন লন্ডনের এফটিএসই ১০০-সহ ইউরোপের বৃহত্তম বাজারগুলোতে ৪ শতাংশের বেশি পতন হয়েছে।
সোমবার এশিয়ার শেয়ার সূচক হ্রাস পায়; হংকংয়ের হ্যাং সেং সূচক ১৩% এরও বেশি কমে যায়, যা ১৯৯৭ সালের পর থেকে একদিনে সবচেয়ে বড় পতন। তবে মঙ্গলবার বেশিরভাগ শেয়ারবাজার ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় সামান্য সংশোধন দেখা গেছে।
সমঝোতা প্রসঙ্গ
ট্রাম্পের সোমবারের পোস্টে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে, বিভিন্ন দেশের ওপর আরোপিত শুল্ক হার নিয়ে আলোচনা ‘অবিলম্বে’ শুরু হবে।
হোয়াইট হাউসে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সোমবার বৈঠক করেন ট্রাম্প। নেতানিয়াহু বলেন, তার দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা দূর করবে।
“আমরা খুব তাড়াতাড়ি এটি করতে চাই ... এবং আমরা বাণিজ্য বাধাও দূর করতে যাচ্ছি।”ট্রাম্পের ‘অর্থনৈতিক স্বাধীনতা দিবস' নীতির আওতায় ৯ এপ্রিল থেকে ইসরায়েলের ওপর ১৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে।
এর আগে ট্রাম্প জানান, শুল্ক নিয়ে আলোচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে দল পাঠাচ্ছে জাপান।
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লেয়েনে ট্রাম্পকে ‘জিরো-ফর-জিরো শুল্ক’ চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছেন।
তিনি বলেন, “আমরা পাল্টা পদক্ষেপের মাধ্যমে জবাব দিতে এবং আমাদের স্বার্থ রক্ষার জন্যও প্রস্তুত।”
পরে ট্রাম্প বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র ও বাণিজ্যের সত্যিকার ক্ষতি করতে ইইউ গঠন করা হয়েছে।”