প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঘোষিত ট্যারিফের প্রভাবে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে সুপারমার্কেটের ১০টি পণ্যের দাম ব্যাপক হারে বাড়বে। এতে করে সুপারমার্কেট কিংবা গ্রোসারী থেকে নিত্যপণ্য ক্রয়ে অতিরিক্ত দাম গুণতে হবে ক্রেতাদের। সাধারণ মানুষের আয়ের ওপর এর প্রভাব পড়তে পারে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও সংশ্লিষ্টরা।
অর্থনীতিবিদদের মতে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঘোষিত নতুন ট্যারিফের ফলে গ্রোসারি দোকান বা লিকার স্টোরে কেনাকাটা আরও ব্যয়বহুল হয়ে উঠতে চলেছে। সামুদ্রিক খাবার, থেকে জলপাইয়ের তেল এই সমস্ত পণ্যের দাম বৃদ্ধির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
বুধবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঘোষিত আমদানি শুল্কের নতুন ধাপের পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, দৈনন্দিন পণ্যের দাম বাড়বে। ব্যবসায়ীদের বিদেশি পণ্যের উপর দিতে হওয়া এই শুল্ক কানাডা, মেক্সিকো ও চীনের উপর পূর্ববর্তী শুল্কের পরিপূরক হিসেবে আসছে।
সামুদ্রিক খাবার, কফি, ওয়াইন, বাদাম ও পনিরের মতো পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এমনকি ক্যাশ কাউন্টারে দাঁড়িয়ে চকলেট বার কিনতেও আপনাকে অতিরিক্ত খরচ করতে হতে পারে।
খাদ্য শিল্প বিশ্লেষক ফিল লেম্পার্ট অনুমান করেন, ‘‘সুপারমার্কেটের প্রায় অর্ধেক পণ্য যেমন ৪০,০০০ আইটেম ট্রাম্পের ঘোষিত ট্যারিফ দ্বারা প্রভাবিত হবে। এসব পণ্য নিত্য প্রয়োজনীয়।’’
পারডিউ বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অর্থনীতির অধ্যাপক জোসেফ বালাগটাস বলেন, কানাডা থেকে সারের উচ্চ মূল্য ও ইউএস ডলারের দুর্বলতার মতো ট্যারিফ-সম্পর্কিত অন্যান্য কারণও খাদ্য মূল্যকে প্রভাবিত করবে।
যেগুলোর পণ্যের দাম বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে:
সামুদ্রিক খাবার প্রধান সরবরাহকারী: চিলি (১০%), ভারত (২৬%), ইন্দোনেশিয়া (৩২%), ভিয়েতনাম (৪৬%) থেকে আমদানীকৃত পণ্যের ওপর ট্যারিফ ঘোষণা করেছে। যুক্তরাষ্ট্র এসব দেশ থেকে ৮৫% পর্যন্ত সামুদ্রিক খাবার আমদানি করে।
কফি, প্রধান উৎস: ব্রাজিল (১০%), কলম্বিয়া (১০%) থেকে আমদানীকৃত পণ্যের ওপর ট্যারিফ ঘোষণা করেছে। যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের বৃহত্তম কফি আমদানিকারক।
ফল, প্রধান উৎস: গুয়াতেমালা (১০%), কোস্টারিকা (১০%), পেরু (১০%) থেকে আমদানীকৃত পণ্যের ওপর ট্যারিফ ঘোষণা করেছে। এসব দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্র কলা, তরমুজ, আনারস ও আমসহ ফল আমদানী করে থাকে।
গরুর মাংস, প্রধান উৎস: নিউজিল্যান্ড (১০%), অস্ট্রেলিয়া (১০%) থেকে আমদানীকৃত পণ্যের ওপর ট্যারিফ ঘোষণা করেছে। যুক্তরাষ্ট্রে গবাদি পশুর সংখ্যা ১৯৫১ সালের পর সর্বনিম্ন।
চাল, প্রধান উৎস: থাইল্যান্ড (৩৬%), ভারত (২৬%) থেকে আমদানীকৃত পণ্যের ওপর ট্যারিফ ঘোষণা করেছে। এতে করে যুক্তরাষ্ট্রে জেসমিন ও বাসমতি চালের দাম প্রভাবিত হতে পারে।
পনির, প্রধান উৎস: ইতালি, ফ্রান্স, স্পেন (২০% ইউ ট্যারিফ),পারমিজান, ব্রি ও গৌডা পনিরের দাম বাড়তে পারে।
বাদাম, প্রধান উৎস: ভিয়েতনাম (৪৬%), আইভরি কোস্ট (২১%), ব্রাজিল (১০%)। এতে কাজু ও ম্যাকাডামিয়া বাদামের দাম বাড়বে।
৯. চকলেট, প্রধান উৎস: আইভরি কোস্ট (২১%), ইকুয়েডর (১০%)। কোকো বিনের মূল্য ইতিমধ্যেই বৃদ্ধি পেয়েছে।
১০. জলপাই, তেল প্রধান উৎস: ইইউ (২০%), বিশেষত স্পেন, ইতালি। জলপাই তেলের দাম ইতিমধ্যেই আকাশছোঁয়া, আরো বৃদ্ধিতে ক্রয়ক্ষমতার ঊর্ধ্বে থাকবে জলপাই তেল।
বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন, এই ট্যারিফ কেবল নির্দিষ্ট পণ্যের দামই নয়, বরং সুপারমার্কেটের হাজারো পণ্যের প্রাপ্যতাকেও প্রভাবিত করতে পারে। পণ্যের সম্পূর্ণ মূল্য কতটা বৃদ্ধি পাবে তা এখনই সঠিকভাবে বলা সম্ভব না, তবে ভোক্তাদের জন্য ব্যয়বহুল সময় আসতে চলেছে বলে বিশেষজ্ঞরা মত দিচ্ছেন।