নদীর পানিবণ্টন নিয়ে দ্বন্দ্বের কারণে মেক্সিকোর ওপর শুল্ক ও আর্থিক নিষেধাজ্ঞা জারির হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) এক বার্তায় মেক্সিকোর বিরুদ্ধে ৮১ বছরের পুরোনো চুক্তি ভেঙে পানি চুরির অভিযোগ এনেছেন তিনি। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
নিজ মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে তিনি বলেছেন, ১৯৪৪ সালের পানি চুক্তি অনুযায়ী টেক্সাস অঙ্গরাজ্যে মেক্সিকোর ১৩ লাখ একর-ফুট পানি সরবরাহ করার কথা। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে মেক্সিকো চুক্তির বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘন করছে।
চুক্তি মেনে না চললে তার পরিণতির বিষয়ে হুমকি দিয়ে ট্রাম্প বলেছেন, আমাদের কৃষিমন্ত্রী ব্রুক রোলিনস টেক্সাসের কৃষকদের পাশে আছেন। চুক্তির প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করে টেক্সাসে প্রাপ্য পানি পাঠানোর আগ পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মেক্সিকোর ওপর শুল্ক আরোপ এমনকি প্রয়োজনের নিষেধাজ্ঞা জারির সিদ্ধান্তও নেওয়া হতে পারে।
১৯৪৪ সালের চুক্তি অনুযায়ী, আন্তঃসংযুক্ত বাঁধ ও খালের মাধ্যমে মেক্সিকোর রিও গ্রান্দে নদী থেকে প্রতি পাঁচ বছর সময়ে প্রায় সাড়ে ১৭ লাখ একর-ফুট পানি যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানোর কথা। উল্লেখ্য, এক একর-ফুট পানিতে অলিম্পিক আকৃতির একটি সুইমিং পুল পরিপূর্ণ করে ফেলা যায়।
চলতি পাঁচ বছরের চক্র শেষ হতে যাচ্ছে সামনের অক্টোবর মাসে। আন্তর্জাতিক সীমান্ত ও পানি পরিষদের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চক্র শেষ হতে চললেও মেক্সিকো থেকে ৩০ শতাংশের কম পানি পাঠানো হয়েছে।
এদিকে, ট্রাম্পের অভিযোগে জবাবে মেক্সিকান প্রেসিডেন্ট ক্লডিয়া শেইনবম বলেছেন, তারা চুক্তি ভঙ্গ করেননি। তিন বছরের খরার ধাক্কা সামলে যথাসম্ভব পানি পাঠানোর চেষ্টা করছেন তারা।
বিশ্লেষকদের মতে, তীব্র খরা, ক্রমবর্ধমান স্থানীয় চাহিদা এবং দুর্বল অবকাঠামোর কারণে চুক্তির শর্ত পুরোপুরি পালনে ব্যর্থ হচ্ছে মেক্সিকো।
বহুদিন ধরেই মেক্সিকান কর্মকর্তারা দাবি করে আসছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উদ্ভূত ভয়াবহ খরার কারণেই মেক্সিকো চুক্তি অনুযায়ী পানি পাঠাতে ব্যর্থ হচ্ছেন। চুক্তিতে অবশ্য এ ধরনের সংকটের স্বীকৃতি দেওয়া আছে। চুক্তি অনুযায়ী, এ ধরনের কোনও সমস্যায় এক চক্রের পানি প্রেরণের ঘাটতি পরের চক্রে পুষিয়ে দেওয়া যাবে।
শেইনবম জানিয়েছেন, টেক্সাসে পানি সরবরাহ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের কাছে একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছে মেক্সিকো, যেখানে স্বল্পমেয়াদি পদক্ষেপ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তিনি তার পরিবেশ, কৃষি ও পররাষ্ট্র মন্ত্রীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার নির্দেশ দিয়েছেন। তার আশা, মেক্সিকো-যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য ইস্যুর মতো এই বিষয়েও একটা বোঝাপড়ায় পৌঁছানো সম্ভব হবে।
উল্লেখ্য, ১৯৪৪ সালের চুক্তি অনুযায়ী, কলোরাডো নদী থেকে মেক্সিকোতে প্রতিবছর পনেরো লাখ একর-ফুট পানি পাঠাতে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সাম্প্রতিক খরার কারণে পানি বণ্টনের পরিমাণ কিছুটা কমে গেলেও, মোটাদাগে শর্ত বরাবরই পূরণ করে আসছে ওয়াশিংটন।