গ্রেফতার-ডিপোর্টেশনের মুখে হাজারো মানুষ, সরব মানবাধিকার সংগঠনগুলো

ডেস্ক রিপোর্ট
  ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ১৩:৪৪

যুক্তরাষ্ট্রে গত এক মাস ধরে অভিবাসীদের ঘিরে আতঙ্ক আর উৎকণ্ঠা বাড়ছে। ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন নীতি আরও কড়াকড়ি হয়ে উঠেছে, যার ফলে দেশজুড়ে বাড়ানো হয়েছে অভিবাসী গ্রেফতার, জিজ্ঞাসাবাদ ও তাৎক্ষণিক ডিপোর্টেশনের হার। এ অবস্থায় মানবাধিকার সংগঠনগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করে বলছে, এই পদক্ষেপ শুধু আইনি অভিবাসীদেরই নয়, দীর্ঘ দিন ধরে বৈধভাবে বসবাসকারী বহু মানুষের জীবনকেও ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে।
ট্রাম্প প্রশাসন গত মাসে ঘোষণা দেয়, আগের প্রশাসনের ‘সহানুভূতিশীল অভিবাসন নীতি’ বাতিল করে কড়া আইন প্রয়োগের মাধ্যমে ‘অবৈধ অভিবাসন রোধ’ করা হবে। এর অংশ হিসেবে কিউবা, হাইতি, নিকারাগুয়া ও ভেনেজুয়েলার নাগরিকদের জন্য বাইডেনের দেওয়া মানবিক প্যারোল প্রোগ্রাম বাতিলের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস) গত এক মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যে ব্যাপক ধরপাকড় চালায়। শুধুমাত্র টেক্সাস ও ফ্লোরিডা মিলিয়ে অন্তত ৮ হাজার অভিবাসীকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানা গেছে। অনেকের বিরুদ্ধে কোনো অপরাধের অভিযোগ না থাকলেও শুধুমাত্র বৈধ কাগজপত্র না থাকার অভিযোগে তাদের আটকে রাখা হয়েছে।
এই তৎপরতার ফলে প্রবাসী কমিউনিটিতে ভয়, আতঙ্ক ও উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। স্কুল, কর্মস্থল কিংবা হাসপাতালে যেতে ভয় পাচ্ছেন অনেক অভিবাসী। নিউইয়র্ক, ক্যালিফোর্নিয়া, নিউ জার্সি ও ইলিনয়সহ অভিবাসীবহুল রাজ্যগুলোতে স্থানীয় কমিউনিটি সংগঠনগুলো অভিবাসীদের সচেতন করতে জরুরি সভা ও হেল্পলাইন চালু করেছে।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, অ্যাকলু, আমনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ বহু সংগঠন এই নীতিকে ‘অমানবিক ও বৈষম্যমূলক’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।
অ্যাকলু বিবৃতিতে জানায়, এই ধরনের নির্বিচারে গ্রেফতার ও ডিপোর্টেশন মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। বহু মানুষ বছরের পর বছর এই দেশে বসবাস করছেন, কর দিচ্ছেন, সন্তানদের শিক্ষিত করছেন- এখন হঠাৎ করে তাদের উচ্ছেদ করার চেষ্টা শুধু আইন বিরোধী নয়, বর্বরতার শামিল।’
ফেডারেল আদালতের হস্তক্ষেপে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে অভিবাসীদের মাঝে। বিচারক ইন্দিরা তালওয়ানি সম্প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের প্যারোল প্রোগ্রাম বাতিলের পরিকল্পনায় স্থগিতাদেশ জারি করেন। এতে প্রায় ৫ লাখ অভিবাসীর আপাতত ডিপোর্টেশনের ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাওয়া গেছে।
বর্তমান পরিস্থিতি অভিবাসীদের জন্য অত্যন্ত সংবেদনশীল ও সংকটময়। মানবাধিকার রক্ষা, আইনি সহায়তা ও নীতিনির্ধারকদের দায়িত্বশীল ভূমিকা এখন সময়ের দাবি। ট্রাম্প প্রশাসনের এই নতুন অভিবাসন নীতি যদি টেকসই ন্যায়বিচারের পথে পরিচালিত না হয়, তাহলে এর ফলে কেবল অভিবাসীরাই নয়, গোটা সমাজেই সংকট তৈরি হতে পারে অনেকেই মনে করছেন।