ট্রাম্পের অভিবাসী বিতাড়ণ: বারবার যে পথ দেখাচ্ছে আদালত

ডেস্ক রিপোর্ট
  ১৯ মে ২০২৫, ১৪:২৮

একের পর এক মামলায় চূড়ান্ত আইনি সিদ্ধান্ত হলো অন্ততপক্ষে বিতাড়নের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জের সুযোগ দিতে হবে অভিবাসীদের। যদিও অভিবাসীদের বিতাড়নে অভিনব ও অস্বাভাবিক ক্ষমতা পাওয়ার দাবি করছেন ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার পর অভিবাসীদের ত্বরিত বিতাড়নকে এজেন্ডার শীর্ষে রেখেছেন ডনাল্ড ট্রাম্প। এ কাজে অনুসরণ করা হচ্ছে না যথাযথ প্রক্রিয়া। ফলে আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছেন ভুক্তভোগীরা। তাদের করা মামলার রায়ের ক্ষেত্রে আদালতের অবস্থান সাধারণ একটি বিন্দুতে মিলিত হচ্ছে।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে এ বিষয়ে তুলে ধরা হয়েছে বিস্তারিত।
একই রায়ের পুনরাবৃত্তি
ট্রাম্পের আগ্রাসী বিতাড়ন নীতির নেতিবাচক প্রভাবের প্রতিক্রিয়ায় ফেডারেল আদালতগুলো বারবার একই সিদ্ধান্তে উপনীত হচ্ছে। সিদ্ধান্তটি হলো যথাযথ প্রক্রিয়ার মৌলিক নীতিকে পাশ কাটিয়ে লোকজনকে দেশছাড়া করতে তাড়াহুড়া করতে পারবে না হোয়াইট হাউজ।
একের পর এক মামলায় চূড়ান্ত আইনি সিদ্ধান্ত হলো অন্ততপক্ষে বিতাড়নের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জের সুযোগ দিতে হবে অভিবাসীদের। যদিও অভিবাসীদের বিতাড়নে অভিনব ও অস্বাভাবিক ক্ষমতা পাওয়ার দাবি করছেন ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
প্রশাসনের এমন অবস্থানের বিষয়ে আদালতের সর্বশেষ ও স্পষ্ট প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায় শুক্রবার সন্ধ্যায়। ওই দিন টেক্সাসে ভেনেজুয়েলার একদল অভিবাসীকে এক দিনের সতর্কবার্তা দিয়ে বিতাড়নের চেষ্টার কারণে ট্রাম্প প্রশাসনকে ভর্ৎসনা করে সুপ্রিম কোর্ট। ওই অভিবাসীদের ১৮ শতকের যুদ্ধকালীন আইনের সম্প্রসারিত এখতিয়ারের আওতায় বিতাড়নের উদ্যোগ নেয় প্রশাসন।
লিখিত রায়ে বিচারকরা বলেন, ‘বিতাড়নের মোটামুটি ২৪ ঘণ্টা আগে নোটিশ পাঠানো, এ বিতাড়নের বিরুদ্ধে যথাযথ প্রক্রিয়ার অধিকার প্রয়োগ সংক্রান্ত তথ্যের অনুপস্থিতি নিশ্চিতভাবেই ন্যূনতম মানদণ্ড পূরণ করে না।’
আদালতের অবস্থানকে স্বাগত জানালেন বিশেষজ্ঞ
ট্রাম্পের বিতাড়ন পরিকল্পনা নিয়ে অনেক প্রশ্নের উত্তর এখনও মেলেনি। এর মধ্যেই যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণের বিষয়ে আদালতের অবস্থানকে স্বাগত জানিয়েছেন একজন আইন বিশেষজ্ঞ। একই সঙ্গে তিনি বিতাড়ন প্রক্রিয়ার শুরুতেই নীতির লঙ্ঘন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
হার্ভার্ড ল স্কুলের অধ্যাপক মাইকেল ক্লারম্যান বলেন, সংবিধানের আওতাধীন মৌলনীতিগুলোর একটির পক্ষে আদালত দাঁড়াচ্ছে। এটি বড় ব্যাপার।
নীতিটি হলো জীবন, স্বাধীনতা কিংবা সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত করার আগে যেকোনো ব্যক্তিকে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণের সুযোগ দিতে হবে। সে ব্যক্তি নাগরিক না হলেও এ সুযোগ পাবেন।
হার্ভার্ডের ওই অধ্যাপক আরও বলেন, এ ধরনের নীতি লঙ্ঘন থেকে প্রশাসন বিরত থাকলে আরও ভালো হতো।
অভিবাসী বিতাড়নে ট্রাম্প প্রশাসনের অবস্থান
বিতাড়নের অপেক্ষায় থাকা অভিবাসীদের যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণের সুযোগের বিষয়টিকে প্রকাশ্যে অবজ্ঞা করেছেন ট্রাম্প ও তার শীর্ষ একাধিক সহযোগী। এমন বাস্তবতায় সুপ্রিম কোর্ট শুক্রবার তার অবস্থান জানাল।
চলতি মাসে সিবিএস নিউজকে ট্রাম্প বলেন, ‘আমাদের এখানে অবৈধভাবে আসা মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষ আছে। আমরা প্রত্যেক ব্যক্তিকে বিচারের মুখোমুখি করতে পারি না।’
সাম্প্রতিক বক্তব্যে ট্রাম্পের চেয়ে আরেক ধাপ এগিয়ে ছিলেন প্রেসিডেন্টের প্রধান অভ্যন্তরীণ নীতিবিষয়ক উপদেষ্টা স্টিফেন মিলার। তিনি জানান, হেবিয়াস কর্পাস রিটের সুযোগ স্থগিতের চিন্তা করছে প্রশাসন।
বেআইনি আটকের বিরুদ্ধে অ্যামেরিকার সংবিধান প্রদত্ত অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রক্ষাকবচ হেবিয়াস কর্পাস।
হোয়াইট হাউজের সম্ভবত রিটটি স্থগিতের ক্ষমতা নেই। সুপ্রিম কোর্ট ইতোপূর্বে এক আদেশে যুদ্ধকালীন আইন এলিয়েন এনিমিজ অ্যাক্ট ব্যবহার নিয়ে অভিমত দেয়।
সে অভিমতে বলা হয়, এলিয়েন এনিমিজ অ্যাক্টের অধীনে বিতাড়ন চ্যালেঞ্জ করতে হেবিয়াস কর্পাসের আশ্রয় নিতে হবে অভিবাসীদের।
ল্যাটিন পরিভাষা হেবিয়াস কর্পাসের অর্থ হলো ‘আমাকে শরীর দেখাও’। হেফাজতে থাকা কোনো ব্যক্তি হেবিয়াস কর্পাসের মাধ্যমে বিচারকের মুখোমুখি হয়ে তাদের আটকের বৈধতা নিরূপণ করতে পারেন।
এলিয়েন এনিমিজ অ্যাক্ট নিয়ে বিচারকদের অভিমত
এলিয়েন এনিমিজ অ্যাক্টের অধীনে বিতাড়নের বিষয়টি সঙ্গত কারণেই অন্য যেকোনো বিতাড়নের ঘটনার চেয়ে বেশি আলোচিত। ১৭৯৮ সালে পাস হওয়া আইনটির মাধ্যমে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও পরবর্তীকালে জাপানি, ইতালীয় ও জার্মানদের তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হয়।
অ্যামেরিকাজুড়ে এ আইনের অধীনে আদালতে প্রায় ১০টি মামলা চলছে। এসব মামলার শুনানি শেষে কয়েকজন বিচারকের রায় হলো অবৈধভাবে আইনটি ব্যবহার করেছেন ট্রাম্প।
বিচারকদের প্রায় সবাই একটি বিষয়ে একমত হন। সেটি হলো বিতাড়নের আগে অবশ্যই আইনিভাবে তাকে চ্যালেঞ্জের সুযোগ দিতে হবে অভিবাসীদের।