যুক্তরাষ্টের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয়বার হোয়াইট হাউজে ফেরায় মার্কিনিদের তো বটেই বিশ্ববাসীরও নজর কেড়েছিল ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ধনকুবের ইলন মাস্কের বন্ধুত্ব। তবে সম্প্রতি এ সম্পর্কে ফাটল দেখা দিয়েছে। কিছুদিনের আগেরও ঘনিষ্ঠ এই দুই মিত্র এবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জড়িয়ে পড়েছেন বাক-বিতণ্ডায়।
এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন পর্যন্ত নভোচারী ও রসদ পাঠানোর কাজে ব্যবহৃত ড্রাগন ক্যাপসুল বাতিল করার হুমকি দিয়েছেন মাস্ক।
সামাজিক মাধ্যম এক্সে এক পোস্টে এই হুমকি দেন রকেট কোম্পানি স্পেসএক্সের প্রতিষ্ঠাতা মাস্ক।
এর আগে, স্পেসএক্স ও স্টারলিংক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবায় সরকারি চুক্তি বাতিলের হুমকি দেন ট্রাম্প। এর জবাবে মাস্ক হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন,‘ স্পেসএক্স তার ড্রাগন ক্যাপসুল অবিলম্বে বাতিল করার প্রক্রিয়া শুরু করবে।
অবশ্য মাস্কের হুমকি কতটা বাস্তবসম্মত, তা স্পষ্ট নয়। তবে সরকারি অর্থায়নে তৈরি এই ক্যাপসুলটি আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন সচল রাখার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
এ ছাড়া, বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক অভিযান ও এই দশকের শেষ দিকে চাঁদের পৃষ্ঠে নভোচারী পাঠানোর মতো বড় প্রকল্পের জন্যও স্পেসএক্সের ওপর নির্ভরশীল ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (নাসা)।
এই মুহূর্তে স্পেসএক্সই একমাত্র মার্কিন কোম্পানি, যারা চারজনের ধারণক্ষমতাসম্পন্ন ড্রাগন ক্যাপসুল ব্যবহার করে মহাকাশ স্টেশনে যাতায়াতের সুযোগ দিয়ে আসছে।
বোয়িং-এর স্টারলাইনার ক্যাপসুল এখন পর্যন্ত একবারই নভোচারী নিয়ে উড়েছে। গত বছরের সেই পরীক্ষামূলক মিশন ছিল অত্যন্ত ত্রুটিপূর্ণ। ওই মিশনে গিয়ে মহাকাশে আটকে পড়া দুই নভোচারীকে দীর্ঘ নয়মাস পর এ বছরের মার্চ মাসে স্পেসএক্সের একটি ক্যাপসুলে করে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা হয়। এরপর থেকে স্টারলাইনার এখনও স্থগিত রয়েছে।
স্পেসএক্স তাদের নিজস্ব বেসরকারি মিশনের জন্যও ড্রাগন ক্যাপসুল ব্যবহার করে। পরবর্তী মিশনটি হবে আগামী সপ্তাহে। অ্যাক্সিওম স্পেস নামের হিউস্টনভিত্তিক একটি কোম্পানি এটি ভাড়া করেছে।
তাছাড়া, খাদ্য ও অন্যান্য রসদ পরিবহনের জন্যও ড্রাগনের কার্গো সংস্করণ ব্যবহার করে স্পেসএক্স।
এই মুহূর্তে রাশিয়ার সোয়ুজ ক্যাপসুলই একমাত্র বিকল্প, যা দিয়ে মহাকাশ স্টেশনে ক্রুদের নিয়ে যাওয়া যায়।
অন্যদিকে, প্রতিটি স্পেসএক্স মিশনে একজন রাশিয়ান থাকেন। এই বিনিময় ব্যবস্থার ফলে কোনো জরুরি পরিস্থিতিতে প্রত্যাবর্তনের জন্য প্রতিটি ক্যাপসুলে একজন করে আমেরিকান ও রাশিয়ান থাকা নিশ্চিত করা হয়।
২০২০ সালে স্পেসএক্স নাসার জন্য প্রথম নভোচারী পাঠায়। এর ফলে রাশিয়ার ওপর নির্ভরতা অনেকটাই কমাতে পারে নাসা। এর আগে রুশ ফ্লাইটে প্রতি আসনে যুক্তরাষ্ট্রের খরচ হতো কয়েক কোটি ডলার। রসদের জন্যও রুশ মহাকাশযান ও মার্কিন কোম্পানি নর্থরপ গ্রুম্যানের ওপর নির্ভরশীল ছিল নাসা।
নাসার বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক মিশন এবং সামরিক সরঞ্জাম উৎক্ষেপণের কাজেও ব্যবহৃত হয় এই কোম্পানিটি।
গত বছর মহাকাশ স্টেশন ব্যবহারের অযোগ্য হলে সেটিকে কক্ষপথ থেকে নামিয়ে আনার দায়িত্বও পায় স্পেসএক্স।
এ ছাড়াও, নাসা চাঁদের কক্ষপথ থেকে নভোচারীদের চাঁদের পৃষ্ঠে নামানোর জন্য স্পেসএক্সের স্টারশিপ মেগা রকেট বেছে নিয়েছে। অন্তত প্রথম দুটি ল্যান্ডিং মিশনের জন্য এটি ব্যবহার করবে নাসা।
এদিকে, স্টারশিপ গত সপ্তাহে টেক্সাস থেকে নবমবারের মতো পরীক্ষামূলকভাবে উড্ডয়ন করে, কিন্তু নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ভেঙে পড়ে।
সূত্র: এপি