নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক প্রাইমারিতে স্টেট অ্যাসেম্বলিম্যান জোহরান মামদানির বিজয়ে আমেরিকান ইহুদি জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিভাজন রেখা সুস্পষ্ট হয়ে গেছে বলে নিউইয়র্ক টাইমসের এক রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।
ইসরায়েলের বাইরে নিউইয়র্ক সিটিতে বিশ্বের সর্বাধিক সংখ্যক ইহুদি বসবাস করে এবং ধনবান আমেরিকান ইহুদিদের একটি বড় অংশের বসবাসও নিউইয়র্কে। গাজায় ইসরায়েলি ধ্বংসযজ্ঞের পর যুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েলের মনস্তাত্ত্বিক অবস্থানের ভিত কিছুটা হলেও নড়বড়ে হয়ে গেছে। নিউইয়র্ক সিটির ডেমোক্রেটরা জোহরান মামদানিকে প্রাইমারিতে বিজয়ী করে ইহুদিদের একটি অংশকে ক্ষুব্ধ করেছে। কারণ মামদানি তার নির্বাচনী প্রচারভিযানে প্রকাশ্যে ইসরায়েল রাষ্ট্র এবং ইসরায়েলি সরকার বিরোধী কঠোর বক্তব্য দিয়েছেন, যা সিটির অতীতের কোনো মেয়র বা মেয়র প্রার্থী করেননি ইহুদি ভোটারদের সমর্থন হারানোর ভয়ে।
নিউইয়র্ক টাইমস ডেমোক্রেটিক প্রাইমারির ওপর পরিচালিত কিছু জরিপে উদ্ধৃতি দিয়ে তাদের রিপোর্টে উল্লেখ করেছে যে সিটির পাঁচজন বিশিষ্ট ডেমোক্রেটের মধ্যে সিটি কম্পট্রোলার ব্র্যাড ল্যান্ডার, যিনি নিজের ডেমোক্রেটিক প্রাইমারি মেয়র প্রার্থী ছিলেন, তিনি মামদানিকে র্যাংকিং ভোটিং এ ক্রস-এন্ডোর্স করে তার হাতকে শক্তিশালী করেছেন। তাছাড়া সিটির বিশিষ্ট ইহুদি নেতা ও নিউইয়র্ক থেকে নির্বাচি ডেমোক্রেটিক কংগ্রেসম্যান জেরল্ড ন্যাডলারও প্রাইমারিতে মামদানিকে সমর্থন করেছেন।
সমর্থন ঘোষণার সময় ন্যাডলার বলেছেন যে, তারা সকল ধর্মীয় উগ্রতা ও ঘৃণার বিরুদ্ধে একসাথে লড়বেন। রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, দেশের সর্বত্র ইহুদি জনগোষ্ঠী, যারা প্রগতিশীল আন্দোলনে তাদের তাদের স্থান টিকিয়ে রাখার জন্য সংগ্রাম করছে, তারা জোহরান মামদানির বিস্ময়কর বিজয়ে ভীত যে, শেষ পর্যন্ত তাদের সবচেয়ে বড় ভীতি বাস্তবে রূপ নিতে যাচ্ছে এবং তা হলো, আমেরিকা বাম ধারার দিকে ঝুঁকছে। ফলে তারা আমেরিকায় এবং বিশেষ করে নিউইয়র্ক সিটিতে তাদের কমিউনিটির নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত, যে সিটিকে গড়ে তুলতে ইহুদি জনগোষ্ঠী বিপুলভাবে সহায়তা করেছে।
সেমিটিক বিরোধিতা মনিটর ও মোকাবিলর উদ্দেশ্যে সাবেক বাইডেন প্রশাসনের বিশেষ দূত ডেবোরা ই লিপস্টাডট নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন যে, বিষয়টা এমন নয় যে, ইহুদি কমিউনিটি নি:শেষ হয়ে যাওয়ার অথবা কোনো সমস্যায় পড়লে নিউইয়র্ক পুলিশ তাদের সহায়তায় এগিয়ে আসবে না বলে ভয় করছে, কিন্তু তারা তাদের চোয়ালে আরেকটি আঘাত বলে ভাবছে যে, তাদের গভীর উদ্বেগকে খুব সহজে মুছে ফেলা সম্ভব নয়। ইসরায়েলের রাজনীতি বছরের পর বছর ধরে ডেমোক্রেটির পার্টির অবস্থানকে ঘোলাটে করে রেখেছে। গাজায় ইসরায়েলি হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ, চরম দক্ষিণপন্থী নেতানিয়াহু সরকারের উত্থান এবং মামদানি কর্তৃক ইসরায়েলের সমালোচনা অনেকটা সেমিটিক বিরোধিতার রূপ নিয়েছে, তখন ইহুদিরা তাদের শঙ্কার বাইরে সহজে যেতে পারে না।
শুদু মামদানি কেন, ডেমোক্রেটদের প্রতি ১০ জনের মধ্যে প্রায় ৭ জনই ইসরায়েলের প্রতি প্রতিকূল দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে। অথচ কয়েক মাস আগে পিউ রিসার্চ সেন্টারের এক জরিপে দেখানো হয়েছে যে, রিপাবলিকানদের মধ্যে ৩৭ শতাংশ ইসরায়েলের ব্যাপারে প্রতিকূল মনোভাব পোষণ করে, যা ডেমোক্রেটদের তুলনায় অনেক কম। তবে একটি বিষয় সত্য যে আমেরিকান তরুণদের মধ্যে ইসরাইয়েলের সমালোচনা বেড়েছে। কিন্তু বয়স্ক আমেরিকান ইহুদিরা ইসরায়েলের যেকোনো পদক্ষেপকে যথার্থ বলে মনে করেন। ইহুদিদের এই বিভাজনের সুস্পষ্ট প্রভাব পড়েছে ডেমোক্রেটিক প্রাইমারিতে।