ইমিগ্র্যাশন ক্র্যাকডাউন

নার্সিং হোম কেয়ারে প্রকট হচ্ছে কর্মী সংকট

ডেস্ক রিপোর্ট
  ১৫ জুলাই ২০২৫, ১৮:৪৬

যুক্তরাষ্ট্রের নার্সিং হোম কেয়ারগুলোতে কর্মী সংকট দীর্ঘদিনের। করোনার পরবর্তী সময়ে এ সংকট আরো প্রকট হয়ে ওঠে। কিন্তু এখন তা আরও গভীর আকার নিচ্ছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির কারণে। এই খাতে যারা কাজ করেন, তাদের একটি বড় অংশ অভিবাসী। অনেকেই এখন বৈধ কাগজ ও ওয়ার্ক অথোরাইজেশন হারিয়ে এ কাজ থেকে ছিটকে পড়ছেন। আর ভবিষ্যতের জন্য এ খাতে কর্মী যোগানও ক্রমেই কমে আসছে। এমনটি প্রতিবেদন অ্যাসোসিয়েট প্রেস এপি’র।
এপির প্রতিবেদন বলা হয়, আটলান্টার এ.জি. রোডস নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সিইও ডেক কাতু তার জানান তিনটি নার্সিং হোমে কর্মরত এক-তৃতীয়াংশই অভিবাসী, যাদের অনেকেই এখন অনিশ্চয়তায়। তার প্রতিষ্ঠানের আটজন অভিবাসী কর্মীর ‘টেম্পোরারি প্রোটেকটেড স্ট্যাটাস’ টিপিএস বাতিল করা হয়েছে। তাই তাদেরকে কাজ ছাড়তে হবে ও এ দেশ ত্যাগ করতে হবে। 
সারা দেশে অনেক প্রতিষ্ঠানেই একই ধরনের উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, কর্মীরা আতঙ্কে কাজে আসছেন না, কেউ আবার সন্তানদের স্কুলে পাঠাচ্ছেন না দৌড়ঝাঁপের ভয়ে। আবার কেউ কেউ বলছেন, আবেদনকারীই পাওয়া যাচ্ছে না।
ফ্লোরিডার একটি নার্সিং হোমের সিইও র‌্যাচেল ব্লুমবার্গ জানান, তিনি ইতিমধ্যেই দশজন কর্মী হারিয়েছেন, যারা ‘হিউম্যানিটারিয়ান প্যারোল’ প্রোগ্রামের আওতায় কাজ করছিলেন। আরও ৩০ জনকে হারাতে যাচ্ছেন, কারণ হাইতিয়ানদের টিপিএস বাতিল হয়েছে। এতদিন কাজ করে এরা বেশ অভিজ্ঞ হয়ে গেছিলো। এখন তাদের পরিবর্তে নতুন অভিজ্ঞ কর্মী  নুন্যতম বেতনে পাওয়া দুরূহ ।
যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, প্রায় পাঁচজন বেসামরিক কর্মীর একজন অভিবাসী। কিন্তু নার্সিং অ্যাসিস্ট্যান্ট, হোম হেলথ এইড বা কেয়ার অ্যাইড এইসব খাতগুলোতে অভিবাসী কর্মীদের সংখ্যা আরও বেশি। এই খাতের গড় মজুরি কম, কাজ কঠিন, তবু অনেকেই বিশেষত অভিবাসীরা এ কাজে আগ্রহী বেশি।
কোভিডের পর অনেকেই কাজ ছেড়ে দিয়েছিলেন। কিছু কিছু নার্সিং হোম ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরছিল, কিন্তু নতুন করে অভিবাসন সংকটে আবার ধাক্কা খাচ্ছে। 
মার্ক সানচেজ নিউ ইয়র্কের একটি নার্সিং হোমের অপারেশন প্রধান, বলছেন, বিদেশ থেকে নার্স আনার জন্য যে ভিসা লাগত, এখন সেটা এত দীর্ঘ প্রক্রিয়া হয়ে গেছে যে অনেকেই কানাডা বা জার্মানিতে চলে যাচ্ছেন।
এদিকে উইসকনসিনের লিডিংএইজ-এর রবিন উলজেনবার্গ জানাচ্ছেন, আফগানিস্তান, ইউক্রেন, সোমালিয়া, কঙ্গো থেকে আসা শরণার্থীদের কাজে লাগিয়ে তারা অনেক ভালো ফল পেয়েছিলেন। এই কর্মীদের ধরে রাখতে পারলেও নতুন কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না, কারণ ট্রাম্পের প্রশাসন শরণার্থী গ্রহণও প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে।
জুনিপার কমিউনিটিজের প্রতিষ্ঠাতা লিন কাটম্যান বলছেন, এই কাজ সহজ নয়, আয়ও বেশি নয়। কিন্তু অনেক অভিবাসী এটিকে সম্মানের কাজ হিসেবে বেছে নেন। এখন তাদেরও হারানো হচ্ছে।
যখন যুক্তরাষ্ট্রের বয়স্ক জনসংখ্যা বাড়ছে এবং চাহিদাও বাড়ছে, তখন এই সংকট পুরো সিস্টেমকেই হুমকির মুখে ফেলছে। পরিস্থিতির উন্নতি না হলে আগামী দিনে এই সমস্যা আরও গভীর হবে।