সবচেয়ে বড় সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণা

ইউক্রেনকে ভয়ঙ্কর ‘হিমার্স’ দিচ্ছে আমেরিকা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  ০৬ আগস্ট ২০২২, ১৫:১২

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের দেশ ইউক্রেনে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ চালাচ্ছে রাশিয়া। এরই মধ্যে দেশটির বেশ কিছু অঞ্চল দখল করে নিয়েছে রুশ বাহিনী। রাশিয়ার বিরুদ্ধে চলমান এই যুদ্ধে ইউক্রেনকে ক্রমাগত সহায়তা করে যাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। 
এর আগেও বেশ কয়েকটি সহায়তা প্যাকেজ প্রদান করেছে আমেরিকা। এবার রাশিয়ার বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে এ যাবতকালের সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা সহাযতা প্যাকেজ ঘোষণা করতে যাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এবারের সহায়তা প্যাকেজটি হবে ১০০ কোটি ডলারের।
নতুন এই সহায়তা প্যাকেজে আওতায় থাকবে এম-১৪২ হাই মোবিলিটি আর্টিলারি রকেট সিস্টেম (ব্যবস্থা) তথা হিমার্স।
হিমার্স হচ্ছে উচ্চপ্রযুক্তির হালকা রকেট লঞ্চার, যা গাড়িতে স্থাপন করা হয়। এটি যুদ্ধক্ষেত্রে দ্রুততম সময়ে ও এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সহজে মোতায়েন করা যায়। প্রতিটি ইউনিটে ছয়টি করে জিপিএস গাইডেড রকেট থাকে। প্রায় এক মিনিটের মধ্যে অল্প কয়েকজন মিলেই পুনরায় রকেট লোড করে ফেলা যায়।
সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমানে ইউক্রেনীয় বাহিনী যেসব রকেট সিস্টেম ব্যবহার করছে, তার চেয়ে এই রকেট সিস্টেম উল্লেখযোগ্যভাবে অনেক বেশি নির্ভরযোগ্য। এই রকেটগুলোর পাল্লা ৮০ কিলোমিটার (৫০ মাইল)।
যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া এম-৭৭৭ হাউইৎজারের চেয়ে হিমার্সের পাল্লা প্রায় দ্বিগুণ বেশি। ইউক্রেন যুদ্ধে মে মাসে এম-৭৭৭ হাউইৎজারের ব্যবহার শুরু হয়।
ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে রুশ বাহিনীর অগ্রযাত্রা ঠেকাতে দীর্ঘদিন ধরে দূরপাল্লার কামান চেয়ে আসছিলেন ইউক্রেনের কর্মকর্তারা। সাধারণত পূর্বাঞ্চলের বিস্তৃত এই সমতল অঞ্চলে হামলা প্রতিহত করা অন্য ঘনবসতিপূর্ণ শহুরে এলাকাগুলোর চেয়ে কঠিন বলে মনে করা হয়।
যুদ্ধক্ষেত্রে রুশ বাহিনীর আরও পেছনের অবস্থানে হামলা চালাতে ইউক্রেনীয় বাহিনীকে সাহায্য করবে এই হিমার্স। আরও সুরক্ষিত দূরত্বে অবস্থান করেও তারা হামলা চালাতে সক্ষম হবে।
রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের গবেষক স্যামুয়েল ক্র্যানি-ইভানস আল-জাজিরাকে বলেন, “বিস্তৃতভাবে বলতে গেলে ইউক্রেনের চেয়ে রাশিয়ার কামানের মজুত দীর্ঘ পাল্লার ও সংখ্যায় বেশি।”
তিনি আরও বলেন, “যদি আরও উন্নত করা হয়, তবে বর্তমানে রুশ বাহিনীর ব্যবহার করা রকেট সিস্টেমগুলো দিয়ে ৯০ অথবা ১২০ কিলোমিটার দূরত্ব পর্যন্ত ব্যাপক ও ধ্বংসাত্মক গোলাবর্ষণ সম্ভব। এসব রকেট সিস্টেমের মধ্যে বিএম-৩০ সিমের্চ (টর্নেডো) রকেট সিস্টেম উল্লেখযোগ্য।”
স্যামুয়েল বলেন, “যদি হাউইৎজারের পাল্লার বাইরে ব্যবহার করা হয়, তাহলে রাশিয়ার এই রকেট সিস্টেমগুলোর দূরত্ব পর্যন্ত পৌঁছাতে এখন প্রথমত হিমার্সই ইউক্রেনকে সক্ষম করে তুলবে। এই দূরপাল্লার রকেট সিস্টেম রুশ সরঞ্জাম ও কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোলের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে পারবে ইউক্রেন। লড়াইয়ে টিকে থাকতে এই সরঞ্জামগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”
হিমার্স রকেট সিস্টেমের কার্যকারিতা প্রসঙ্গে স্যামুয়েল বলেন, “শেষ পর্যন্ত এটা নির্ভর করছে রুশ বাহিনী অভিযানের বিস্তৃতির ওপর নজরদারি ও গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ এবং ব্যবহারে আসা নতুন এই রকেট সিস্টেমের সঙ্গে এর সমন্বয়ে ইউক্রেনের সামর্থ্যের ওপর।”
চলমান সংঘাত ইউক্রেনের সীমানা ছাড়িয়ে যাওয়ার ঝুঁকি আছে, এমন অস্ত্র সরবরাহের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হিমশিম খাচ্ছিল যুক্তরাষ্ট্র। রকেট, ড্রোন কিংবা হেলিকপ্টারের মাধ্যমে রাশিয়ার অভ্যন্তরে ইউক্রেন যেসব হামলা চালিয়েছে বলে বলা হচ্ছে, এ ধরনের স্বল্পপাল্লার কোনও হামলাকেই যুক্তরাষ্ট্র এখন পর্যন্ত প্রকাশ্যে সমর্থন দেয়নি।
যদি সীমান্তের খুব কাছ থেকে ব্যবহার করা হয়, হিমার্সের সঙ্গে সরবরাহ করা গোলা স্বাভাবিকভাবেই রাশিয়া অভ্যন্তরে গিয়ে পড়বে।
তবে মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, “এই রকেট সিস্টেম রাশিয়ার ভূখণ্ডে হামলা চালাতে ব্যবহার করা হবে না বলে ইউক্রেনের কর্মকর্তারা নিশ্চয়তা দিয়েছেন।” সূত্র: আল-জাজিরা