আগামী সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। একই দিনে টেকজায়ান্ট ইলন মাস্কও বাইবেলের ওপর হাত রেখে শপথ নিতে যাচ্ছেন। ওয়াশিংটন থেকে এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
আধুনিক যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সম্পর্কের ক্ষেত্রে এটি নজিরবিহীন যে ট্রাম্প এমন একজন উপদেষ্টার ছায়ায় হোয়াইট হাউসে যাবেন, যিনি শুধু বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিই নন, একই সঙ্গে ট্রাম্পের মতোই তারও রয়েছে আগ্রাসী উচ্চাকাঙ্ক্ষা, কট্টোর ডানপন্থী রাজনীতি ও মিডিয়ার প্রভাব।
জানা গেছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইলন মাস্ক ‘ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি’, অর্থাৎ সরকারি দক্ষতা বিভাগের বিষয়ে মনোনিবেশ করেছেন। এই বিভাগের দায়িত্বে থাকবেন মাস্ক। মাস্ককে ফেডারেল ব্যয় ও নিয়ম-কানুন কমানোর পরিকল্পনার দায়িত্বে নিযুক্ত করা হয়েছে।
উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনাগুলো ডানপন্থী মতাদর্শীদের কাছে জনপ্রিয়।
কিন্তু ট্রাম্প শিবির ব্যাখ্যা করেনি, এই ধরনের ব্যাপক পরিবর্তন কিভাবে স্বার্থের দ্বন্দ্ব এড়াবে। কারণ মাস্ক একজন প্রধান সরকারি ঠিকাদার।
বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ইলন মাস্ক গত বছরের শুরুতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে তার সমর্থন ঘোষণা করেন। অথচ ২০২২ সালে তিনি ট্রাম্পের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের পতনের ইঙ্গিত দিয়ে মন্তব্য করেছিলেন, ‘ট্রাম্পের টুপি খুলে ঝুলিয়ে রাখা ও সূর্যাস্তের দিকে যাত্রা করার সময় এসেছে।
ট্রাম্পের অন্যতম দৃশ্যমান ও সুপরিচিত সমর্থক হিসেবে প্রকাশ্যে আসেন ইলন মাস্ক। ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রার্থী হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সমর্থন করতে ‘আমেরিকা পিএসি’ নামে একটা রাজনৈতিক অ্যাকশন কমিটি গঠন করেছিলেন তিনি। এই নির্বাচনী চক্রের জন্য ১১.৯ কোটি ডলার অনুদান দিয়েছিলেন মাস্ক।
তাদের এই সম্পর্ক যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে বড় বড় ব্যাবসায়িক ব্যক্তিত্ব বা প্রধান নির্বাহীদের (সিইও) প্রচলিত আচরণ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা, যারা তহবিল সংগ্রহের উদ্দেশ্যে সম্ভাব্য দাতাদের খুশি করতে হ্যাম্পটনের বিশাল বাড়িতে ব্যয়বহুল ভোজ আয়োজনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেন। ফলে স্বভাবতই ইলন মাস্ক ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যতিক্রমী সম্পর্ক এবং ট্রাম্পের প্রতি মাস্কের অনুপ্রেরণার পেছনে মাস্কের উদ্দেশ্য সম্পর্কে প্রশ্ন তুলছেন পর্যবেক্ষকরা।
কেউ কেউ এই বলে উপহাস করছেন, মাস্কের অনুপ্রেরণার পেছনে যে পাহাড় প্রমাণ স্বার্থের দ্বন্দ্ব, সেই প্রশ্নে ওভাল অফিস কি দুই ব্যক্তিত্বের জন্য যথেষ্ট বড় হবে?
মধ্যবর্তী নির্বাচনের হতাশাজনক ফল সত্ত্বেও পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য মার্কিনদের একটি ‘কণ্ঠস্বর’ দেওয়ার এবং ‘জাতির কাঠামো পুনরুদ্ধার করার’ প্রতিশ্রুতি দিয়ে ট্রাম্পের শীর্ষ পদে তৃতীয়বার ঝুঁকে পড়াকে সমর্থন করার মাধ্যমে ট্রাম্প-মাস্কের মধ্যে এক রাজনৈতিক বন্ধন সৃষ্টি হয়েছে।
মেসেজিংয়ের ওপর এই জুটির অসাধারণ সম্মিলিত ক্ষমতা রয়েছে। মাস্ক তার এক্স প্ল্যাটফরমকে ডানপন্থীদের জন্য একটি আশ্রয়স্থলে পরিণত করেছেন। ট্রাম্প একটি সম্পূর্ণ রক্ষণশীল মিডিয়া ইকোসিস্টেম থেকে বন্ধুত্বপূর্ণ কভারেজ উপভোগ করছেন। ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক মার্গারেট ও’ মারা বলেন, ‘ট্রাম্পের মতো মাস্কও এমন কিছু কথা এবং কাজের মাধ্যমে মনোযোগ আকর্ষণের মূল্য বোঝেন, যা কিছু লোক আপত্তিকর বলে মনে করে। তিনি চ্যালেঞ্জিং নিয়ম পছন্দ করেন।’
লোজ বলেন, ‘ইলন মাস্ক ধনাঢ্য ও সাহসী এবং তিনি ক্রমাগত ডোনাল্ড ট্রাম্পকে মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ট্রাম্প অত্যন্ত চমৎকার মানুষ। যা শুনতে ডোনাল্ড ট্রাম্প পছন্দ করেন।’
তবে রোমের লুইস গুইডো কার্লির ইতিহাসের অধ্যাপক লরেঞ্জো ক্যাসেলানি সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ‘এতে দীর্ঘ মেয়াদে সংঘর্ষ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।’