কভিড-১৯ মহামারী-পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে হিমশিম খাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এ সময় শ্রমবাজারের বিভিন্ন খাতে কর্মী চাহিদা ও জোগানের ভারসাম্য স্থাপনে শক্তিশালী ভূমিকা রাখছেন অভিবাসীরা। কেননা বয়সজনিত কারণে আমেরিকানদের বড় একটি শ্রমবাজারের বাইরে চলে যাচ্ছে ও কমছে জন্মহার।
এমন পরিস্থিতিতে সামগ্রিক প্রবৃদ্ধিতে অভিবাসী কর্মীদের ভূমিকাকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন অর্থনীতিবিদ, নিয়োগদাতা ও ফেডারেল রিজার্ভ কর্মকর্তারা। যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যানুযায়ী, ২০২৩ সালে শ্রমবাজারে ১৮ দশমিক ৬ শতাংশ হিস্যা ছিল অভিবাসী কর্মীদের, যা একটি নতুন রেকর্ড। বিশেষ করে কৃষি, প্রযুক্তি ও স্বাস্থ্য খাতের কিছু পদে আমেরিকানদের অংশগ্রহণ কমছে, সেখানে নিয়োগদাতাদের চ্যালেঞ্জ সহজ করে দিচ্ছে অভিবাসীরা। গত এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজারে নতুন ১ লাখ ৭৫ হাজার কর্মী নিয়োগ পেয়েছে, যা প্রত্যাশার চেয়ে কম। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে, এ সময় বিদেশে জন্ম দেয়া কর্মীর হার আগের চেয়ে সামান্য বেড়েছে, প্রায় ৬৬ শতাংশ। এ বিষয়ে নিম্ন জন্মহারকে সামনে আনেন অলাভজনক পরামর্শক সংস্থা ন্যাশনাল ইমিগ্রেশন ফোরামের সিইও জেনি মারে।
তিনি বলেন, ‘২০২২-২৩ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে জন্মহার কমেছে ২ শতাংশ। শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণ করার মতো পর্যাপ্ত কর্মী নেই। অভিবাসীরা বাজারে প্রয়োজনীয় কর্মী জোগান দিয়ে শ্রমবাজারকে শক্তিশালী ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে সাহায্য করছে।’ অভিবাসীদের অংশগ্রহণে যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন খাতের উৎপাদন বাড়ছে ও আগামী দশকে জিডিপি ৭ ট্রিলিয়ন ডলার বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। গত ফেব্রুয়ারিতে কংগ্রেসনাল বাজেট অফিসের পরিচালক ফিলিপ সোয়াগেল এক বিবৃতিতে এ পূর্বাভাস দেন। তিনি বলেন, ‘৫২ লাখ কর্মী যোগ দেয়ায় ২০৩৩ সালে শ্রমবাজার আরো বড় হবে।
উচ্চ নিট অভিবাসন থেকে বেশির ভাগ কর্মীকে পাওয়া যাবে। শ্রমশক্তিতে এ পরিবর্তনের ফলে ২০২৩-৩৪ সালে জিডিপি প্রায় ৭ ট্রিলিয়ন ডলার ও রাজস্ব প্রায় ১ ট্রিলিয়ন ডলার বাড়বে।’ বিশ্লেষকদের মতে, অভিবাসী কর্মী মজুরি বৃদ্ধির জন্য কোম্পানিগুলোর ওপর থাকা চাপ কমিয়ে দেয়। কেননা উচ্চ শ্রম খরচ শেষ পর্যন্ত গ্রাহকদের ওপরই পড়ে, যা মূল্যস্ফীতিকে প্রভাবিত করে। যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি বর্তমানে প্রত্যাশার চেয়ে ওপরে থাকলেও দুই বছর আগের স্তর থেকে অনেকটাই নেমে এসেছে। ইকোনমিক পলিসি ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট ও যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম বিভাগের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ হেইডি শিয়েরহোলজের মতে, ‘শ্রমবাজারে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি অভিবাসী মূল্যস্ফীতিজনিত ধাঁধা সমাধানে কাজ করে।’ পরিসংখ্যান বলছে, ২৫-৫৪ বছর বয়সী জন্মসূত্রে স্থানীয় আমেরিকানদের সংখ্যা তাদের কমে গেছে। ২০২০ ফেব্রুয়ারি থেকে এ বয়সী শ্রমশক্তি ৭ লাখ ৭০ হাজার সংকুচিত হয়েছে। সে শূন্যস্থান পূরণ হচ্ছে অভিবাসীদের মাধ্যমে। গত চার বছরে চাকরির বাজারে প্রবেশের অপেক্ষায় আছেন বা চাকরি করছেন এমন শ্রমশক্তি বেড়েছে ২৮ লাখ। এদের ২৭ লাখ বা ৯৬ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় পুরোটাই যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে জন্ম নেয়া। কর্মক্ষেত্রগুলোয়ও এর উদাহরণ পাওয়া যায়।
ফ্লোরিডার লজিং কোম্পানি ইন্টারেসান্ট হোটেলস অ্যান্ড রিসোর্ট ম্যানেজমেন্টের সিইও জান গৌতম জানান, ৪৪টি হোটেলে ঘর পরিষ্কার ও লন্ড্রি করার জন্য আমেরিকান বংশোদ্ভূত কর্মীদের খুঁজে পাচ্ছেন। এ সংস্থার ৩ হাজার ৫০০ কর্মীর মধ্যে ৮৫ শতাংশ অভিবাসী। উত্তর ভার্জিনিয়ায় অলাভজনক সংস্থা গুডউইন লিভিং প্রতিদিন আড়াই হাজারের বেশি বয়স্ক মানুষকে সেবা দেয়। সংস্থার সিইও রব লিব্রেচ বলেন, ‘গুডউইনের ১ হাজার ২০০ কর্মীদের মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশের জন্ম বিদেশে। তারা ৬৫টি দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন।’ তিনি বলেন, ‘৬৫ বছর বয়সী আমেরিকানদের মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশেরই ভবিষ্যতে দীর্ঘমেয়াদি যত্নের প্রয়োজন হবে। এ চাহিদা মোকাবেলায় আরো কর্মী প্রয়োজন হবে। এ মুহূর্তে ভালো বিকল্পের একটি হলো অভিবাসীদের মাধ্যমে শূন্যস্থান পূরণ করা।’ ২০১৮ সালে একটি নাগরিকত্ব প্রোগ্রাম চালু করে গুডউইন লিভিং।
এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে নাগরিকত্ব পেতে চাওয়া কর্মীদের জন্য আর্থিক সংস্থান, পরামর্শ ও অন্যান্য সাহায্য দেয়া হয়। এখন পর্যন্ত গুডউইনের এ প্রচেষ্টার মাধ্যমে ১৬০ জন কর্মী ও তাদের পরিবারের ২৫ জন সদস্য নাগরিকত্ব পেয়েছেন বা এ প্রক্রিয়ার মাঝে রয়েছেন। এদিকে সাম্প্রতিক বছরে যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্তে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ঢল বেড়েই চলেছে। একে সমস্যা হিসেবে দেখছে হোয়াইট হাউজ। অভিবাসী প্রশ্নে মার্কিন নাগরিকরা নভেম্বরের দিকে তাকিয়ে আছেন। এ সময় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণায় একটি আলোচিত বিষয় হবে অভিবাসন। বর্তমান ও সাবেক দুই প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ডোনাল্ড ট্রাম্প দুজনই সম্প্রতি দক্ষিণ সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। এ রুট ধরেই দেশটির উদ্দেশে বেড়ে চলা অভিবাসী ঢলকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে সরকার।