যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী অনেক প্রবাসী বাংলাদেশির একটিমাত্র কন্যাসন্তান রয়েছে। ওই পরিবারের বাড়ি-গাড়িসহ অনেক সম্পদ রয়েছে। উত্তরাধিকারসূত্রে তাদের একমাত্র সন্তানই এসব সহায়-সম্পদের মালিক। আর যাদের এত সম্পদ রয়েছে, তারা চান না তাদের মেয়েকে এমন কোনো পরিবারে বিয়ে দিতে, যেখানে মেয়েকে শ্বশুরবাড়ি গিয়ে থাকতে হবে। বেশি সম্পদ থাকা মেয়ের বাবা-মা চাইছেন বিয়ের পর যাতে তার সন্তান তাদের সঙ্গে একই বাড়িতে থাকে। এ জন্য তারা ঘরজামাই হতে ইচ্ছুক এমন পাত্র খুঁজছেন। সঙ্গে এটাও বলে দিচ্ছেন পাত্রকে কেবল একাই এ দেশে থাকতে হবে। যেসব ছেলের পরিবার এখানে থাকে, তাদেরকে ঘরজামাই করে রাখা সম্ভব হবে না এমন চিন্তা করে অনেকেই এ দেশে যে ছেলের কেউ নেই তাকে মেয়ের জামাই হিসেবে পেতে চাইছেন। বিষয়টি অনেকটাই নতুন। বর্তমানে কারও কারও মধ্যে এটি এক ধরনের প্রবণতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঘরজামাই রাখার এই প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। তবে সিঙ্গেল পাত্র খোঁজা হলেও বিয়ের কথাবার্তা আবার পাত্রের অভিভাবকের সঙ্গেই বলতে চান।
আর কোনো সন্তান না থাকায় কিছু কিছু পরিবারের অভিভাবকেরা মেয়েকে বিয়ে দিয়ে নিজেদের কাছেই জামাই-মেয়েকে রেখেছেন। মেয়ের সন্তানসন্ততি হয়ে গেলেও নিজেদের কাছেই রাখছেন। আবার অনেকের সিটিতে বাড়ি থাকার পরও তারা সিটির বাইরে গিয়ে মেয়ের সংসারে থাকছেন। এসব বাবা-মা বিয়ের পরও মেয়েকে কাছছাড়া করতে রাজি নন।
বাংলাদেশে বাবা-মায়েরা প্রায় সবাই চান বিয়ের পর মেয়ে শ্বশুরবাড়ি যাবে এবং সেখানেই শ্বশুর-শাশুড়িসহ স্বামীর বাড়িতে থাকবে। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট ও পরিস্থিতি আর নিউইয়র্কের প্রেক্ষাপট ও পরিস্থিতি এক নয়। এখানে ভিন্ন পরিস্থিতি, ভিন্ন পরিবেশ। এখানে বিয়ের পর অনেক ছেলে কিংবা মেয়ে তাদের বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকতে চায় না। নিজেদের মতো করেই আলাদা থাকতে চায়। বেশির ভাগই আলাদা বাড়ি বা বাসা কিনে তাদের মতো থাকে আর বাবা-মা আলাদা থাকেন। এমনকি বাবা-মায়ের বাড়ি বা বাসা থাকলেও তারা নিজেরা আলাদা করে বাসা-বাড়ি কেনেন।
সূত্র জানায়, সাধারণত দুই ধরনের পরিবার ঘরজামাই রাখতে চায়। এক হলো যারা দরিদ্র, নিজেরা খরচ চালাতে পারে না, বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকলে তাদের সুবিধা হয়। খরচ কম হয়। সেসব দরিদ্র পরিবারের মেয়েরা বিয়ের পরও বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকে। আরেক শ্রেণি হলো ধনাঢ্য পরিবার, যাদের অনেক সম্পত্তি রয়েছে। উত্তরাধিকারী কেবল একমাত্র মেয়েই, তাই বিয়ের পর তারা বাবা-মায়ের সঙ্গে একই বাড়িতে থাকে। অনেক সময় একই বাড়িতে থাকলেও আলাদা বাসায় থাকে, যাতে বাবা-মা কাছে থেকেই তাদেরকে দেখতে পারেন।
তবে যেসব বাবা-মায়ের নিজের বাড়ি বা বাসা নেই, নিজেদেরই থাকার সমস্যা, তারা বিয়ের পর সন্তানকে কাছে রাখতে পারেন না। বাংলাদেশের মতোই তারা শ্বশুরবাড়িতে যায়। এসব পরিবারের অনেক বাবা-মা আবার সন্তানের বাড়িতেই তাদের সঙ্গে থাকেন। যৌথ পরিবারের সুবিধার চেয়ে সেখানে অনেক সমস্যাও থাকে। তবে সমস্যা থাকলেও তারা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই উপকার পান। বাংলাদেশ থেকে আসা অনেক মা-বাবাই সন্তানের সঙ্গে থাকেন।
বাংলাদেশ থেকে যারা এক দশক, দুই দশক কিংবা এর আগে এ দেশে এসেছেন, তারা ইতিমধ্যে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। কিনেছেন অনেক বাসাবাড়ি। সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। গড়ে তুলেছেন অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। তাদের মধ্যে যাদের একমাত্র সন্তান মেয়ে, তারাই চান মেয়েকে বিয়ে দিয়ে নিজেদের সঙ্গে রাখতে। পাত্র সন্ধানের বিজ্ঞাপনে তারা বলেই দেন তাদের একমাত্র মেয়ে। বিয়ের পর জামাইকে তাদের বাসায় থাকতে হবে। এ ধরনের পাত্রী বিয়ে করতে গিয়ে যারা কেবল ঘরজামাই হিসেবে থাকতে আগ্রহী, তারাই যোগাযোগ করেন। বলা চলে, অনেকটা সম্পত্তির লোভেই তারা বাবা-মায়ের একমাত্র কন্যাকে বিয়ে করে ঘরজামাই হিসেবে শ্বশুরবাড়িতে থাকছেন।