নিউইয়র্কে অনেকেই বাসাবাড়িতে স্বর্ণ বা স্বর্ণালংকার রাখেন। আবার কেউ রাখেন ডলার। সেগুলো তারা নিরাপদ মনে করে ঘরে রাখলেও সব সময় নিরাপদ থাকছে না। চুরি হয়ে যাচ্ছে। জ্যামাইকাসহ নিউইয়র্কের বিভিন্ন বাসাবাড়ির ওপর চোর চোখ রাখছে। সুযোগ পেলেই মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে চোরেরা চম্পট দিচ্ছে। চুরির ক্ষেত্রে চোরেরা প্রাধান্য দিচ্ছে স্বর্ণ ও ডলারকে।
স্বর্ণ, অলংকার কিংবা ডলার চুরি করার পর চোরেরা অনেক সময় ধরা পড়লেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ধরা পড়ছে না।
সম্প্রতি জ্যামাইকার একাধিক বাসায় চুরির ঘটনা ঘটেছে। চুরির সময় বেশির ভাগ বাসায় কেউ থাকছেন না। খালি বাসা থাকছে। চোর ও তাদের সোর্সরা যেসব বাড়ি টার্গেট করছে, সেসব বাসাবাড়িতেই চুরি করছে। চুরি করে তারা নিরাপদে চলেও যাচ্ছে।
সূত্র জানায়, চুরির ঘটনাগুলো ঘটছে দিনের বেলায়। এ জন্য নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই। চোরেরা চুরির জন্য যে বাসা টার্গেট করে, ওই বাসার খবরাখবর তারা আগেই বিভিন্নভাবে সংগ্রহ করে। তারা আগেই জেনে নেয় ওই বাসার ভেতরে কোথায় কী আছে। ফলে চুরি করতে তাদের সুবিধা হয়। কখন ওই বাসায় কেউ থাকে না, সেটা জেনেই তারা চুরি করে।
একটি সূত্র জানায়, অনেক সময় বিভিন্ন কারণে বাসার কাজের জন্য বাইরে থেকে লোক আনতে হয়। ওই সব লোকেরা এসে কাজ করে চলে যায়। কাজ করার সময় তারা সবকিছু খেয়াল করে কোথায় কী আছে। যিনি বাসায় কাজ করাচ্ছেন তার পক্ষে বোঝা সম্ভব হয় না, তার বাসা কেউ মনিটরিং করছে কি না বা কোনো কিছু চুরি করছে কি না। এ ব্যাপারে একটি কনস্ট্রাকশন কোম্পানির সিইও ও প্রেসিডেন্ট বলেন, বর্তমানে অনেক মানুষ আছে, যারা এখানে নতুন এসেছে অথবা অবৈধভাবে এসেছে। এখানে আসার পর তারা কাজের সন্ধান করে। তারা অনেক কম মজুরিতে কাজ করে বলে কাজও পেয়ে যায়। এ দেশে যাদের আইনিভাবে কাজ করার অনুমোদন নেই বা কাজ করার জন্য যাদের লাইসেন্স নেই, তারা কম পারিশ্রমিকে কাজ করে। তারা আনডকুমেন্টেড বলে তাদের কোনো নথিপত্রও মেলে না। বেশির ভাগ কনট্রাক্টর কাজ করান কাজের অনুমোদন রয়েছে এমন ব্যক্তিকে দিয়েই। কিন্তু অনেক কনট্রাক্টর কম পারিশ্রমিকে কাজ করানোর জন্য অননুমোদিত ও অবৈধভাবে আসা ব্যক্তিদের কাজে নেন। তারা আজকে এক জায়গায় কাজ করে তো কালকে আরেক জায়গায়। ফলে তাদেরকে খুঁজেও পাওয়া যায় না। এ ধরনের লোকেরাও অপরাধমূূলক কাজ করতে পারে। তিনি বলেন, বাসাবাড়ির মালিককে যেমন সতর্ক থাকতে হবে, তেমনি যিনি কাজের কন্ট্রাক্ট নিচ্ছেন তাকেও সতর্কতার সঙ্গে লোক বাছাই করতে হবে।
সূত্র জানায়, যেসব বাসাবাড়িতে চুরি হচ্ছে, ওই সব বাসায় ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা নেই। এ কারণে চুরি হওয়া বাসায় কে আসছে কে যাচ্ছে, সেটা বের করা সম্ভব হচ্ছে না। ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা থাকলে বাসায় কে কখন আসছে, বের হচ্ছে সেটা ভিডিওতে থাকলে সহজেই চোরকে ধরা সম্ভব হতো।
জ্যামাইকায় সম্প্রতি একটি বাসায় আট ভরির বেশি স্বর্ণালংকার চুরি হয়েছে। আরেকটি বাসা থেকে ১২ ভরির বেশি স্বর্ণ চুরি হয়েছে। ওই বাসা দুটিতে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা ছিল না। চুরির পর পুলিশ রিপোর্ট করা হয়েছে। পুলিশ বিষয়গুলো খতিয়ে দেখছে। তবে চুরির সময় ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা না থাকায় আসামিকে ধরতে সময় লাগছে। চুরির ঘটনার পর ওই সব বাসায় এখন ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। দিনের বেলাতেই চুরির ঘটনা ঘটেছে।
সূত্র আরও জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে কিছু অপরিচিত মুখকে বিভিন্ন বাসার সামনে বা এর আশপাশের গলিতে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। তারা নজরদারি করতে থাকে, মানুষ কখন বাসা থেকে বাইরে বের হচ্ছে আবার বাসায় ফিরছে। টানা কয়েক দিন অনুসরণ করার পর তারা হিসাব করে দেখে, ওই বাসার মানুষ কখন সবাই বাইরে থাকে। কোন বাড়ির মানুষের পোশাক-আশাক কেমন। কোন বাসার নারীরা কেমন গহনা পরছে। এগুলো খেয়াল করে তারা চুরি করার টার্গেট করছে।
ভুক্তভোগীদের বাসার কাছাকাছি থাকেন এমন এক ব্যক্তি বলেন, আসলে কে কাকে অনুসরণ করছে, এটা স্বাভাবিকভাবে বোঝা যায় না। কারণ চলতি পথে কতজন আসছে ও যাচ্ছে। আর বাসা থেকে বাইরে বের হওয়ার সময় কিংবা ফেরার পথে কারও ওইভাবে খেয়াল করা সম্ভব হয় না যে কে তাকে অনুসরণ করছে বা কে তার বাসার দিকে খেয়াল রাখছে। বেশির ভাগই মানুষই বাসা থেকে বের হওয়া ও ফেরার পথে তাড়াহুড়োর মধ্যে থাকেন। ফলে এটা কেউ যদি খেয়াল করেন, তাহলে তার পক্ষে বের করা সম্ভব। তিনি বলেন, স্বর্ণালংকার ছোট জিনিস বলে চুরি করে নিয়ে যাওয়ার সময় কেউ দেখতেও পাচ্ছে না। ফলে চুরির ঘটনা বাড়ছে। তার মতে, অলংকার ছাড়াও বাসায় অপ্রয়োজনীয় নগদ ডলার না রাখাই ভালো। এক থেকে ছয় মাসের খরচ কেউ যদি জরুরি বাজেট কিংবা ইমার্জেন্সি ফান্ড হিসেবে বাসায় রাখতে চান, তা রাখতে পারেন। এর বেশি ডলার বাসায় রাখার কোনো দরকার নেই। নগদ অর্থ ব্যাংকে রাখাই নিরাপদ।