যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ানা অঙ্গরাজ্যের সব পাবলিক স্কুলের শ্রেণিকক্ষে বাইবেলের টেন কমান্ডমেন্টস, অর্থাৎ ‘দশ আজ্ঞা’ লিখে রাখা হবে। অঙ্গরাজ্যের গভর্নর এমন এক প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছেন। লুইজিয়ানায় শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার-কাজ চলছে। তার অংশ হিসেবেই বুধবার একটি প্রস্তাবনায় অনুমোদন দিয়ে তাকে আইনের মর্যাদা দিয়েছেন রিপাবলিকান দলের গভর্নর জেফ ল্যান্ড্রি। আইনটি ২০২৫ সাল থেকে কার্যকর হওয়ার কথা।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম রাজ্য হিসেবে লুইজিয়ানার স্কুলে স্কুলে টেন কমান্ডমেন্ট লিখে রাখার সিদ্ধান্তের বিষয়ে ল্যান্ড্রি বলেন, পাবলিক স্কুলের প্রতি সবার বিশ্বাস বাড়াতে এমন উদ্যোগ খুব জরুরি। তার মতে, ‘‘আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে চাইলে ‘প্রকৃত আইনদাতা’, অর্থাৎ, মোজেস থেকেই শুরু করতে হবে। বাইবেলের দশটি আজ্ঞা লুইজিয়ানার পাবলিক স্কুলগুলোতে শুধু লিখেই রাখা হবে না, লেখাগুলো সহজপাঠ্য করার জন্য বড় বড় হরফে লেখার নির্দেশও দিয়েছে সদ্য অনুমোদিত আইন।
গভর্নরের অনুমোদন পেলেও আইনটি কার্যকর করা নিয়ে অবশ্য ইতিমধ্যে সংশয় দেখা দিয়েছে। অ্যামেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন ইতিমধ্যে আইনটি ঠেকাতে আদালতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তারা মনে করে, এই আইন কার্যকর হতে পারে না, কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট রাষ্ট্র থেকে গির্জাকে আলাদা রাখার যে রুল দিয়েছে, এ আইন তার পরিপন্থি।
অ্যামেরিকান্স ইউনাইটেড ফর সেপারেশন অব চার্চ অ্যান্ড স্টেট এবং দ্য ফ্রিডম ফ্রম রিলিজিয়ন ফাউন্ডেশন নামের দুটি সংস্থা জানিয়েছে, তারাও স্কুলে বাইবেলের দশ আজ্ঞার প্রচারের উদ্যোগকে আদালতে চ্যালেঞ্জ জানাবে। এক যৌথ বিবৃতিতে এ ঘোষণা দিয়েছে তারা। সেখানে বলা হয়েছে, ‘‘পাবলিক স্কুলে শিক্ষার্থী এবং তাদের পরিবারের ওপর নিজেদের পছন্দের ধর্মীয় মতবাদ চাপিয়ে দেওয়ার কোনো অধিকার রাজনীতিবিদদের নেই।”
যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের প্রথম সংশোধনীতে সরকারকে ‘ধর্ম প্রতিষ্ঠা’ থেকে বিরত থাকতে বলা হয়। ১৯৮০ সালে সুপ্রিম কোর্ট স্কুলে টেন কমান্ডমেন্ট প্রচার সংক্রান্ত কেন্টাকি আইনকে সংবিধান-পরিপন্থি ঘোষণা করে। ইহুদি এবং খ্রিষ্টানরা ঐতিহ্যগতভাবে বিশ্বাস করেন, দশটি বিশেষ আজ্ঞা বা নির্দেশনার কথা মোজেসকে সরাসরি জানিয়েছিলেন ঈশ্বর। ওল্ড টেস্টামেন্টে এই টেন কমান্ডমেন্টসের উল্লেখ রয়েছে। দশটি আজ্ঞার মধ্যে হত্যা না করা, চুরি না করা, মিথ্যা না বলা, পিতা-মাতাকে সম্মান করা, অন্যের সম্পত্তি দখল না করার মতো এমন কিছু বিষয়ের উল্লেখ রয়েছে, যেসব যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় আইনের সঙ্গেও সঙ্গতিপূর্ণ। তবে অ্যামেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন, অ্যামেরিকান্স ইউনাইটেড ফর সেপারেশন অব চার্চ অ্যান্ড স্টেট এবং দ্য ফ্রিডম ফ্রম রিলিজিয়ন ফাউন্ডেশন মনে করে বাইবেলকে সামনে নিয়ে এসে এসব প্রচারের উদ্যোগ মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়।