ডেস্ক ডেস্ক 

আমেরিকান ভাইস প্রেসিডেন্টের যত ক্ষমতা
  ২১ জুন ২০২৪, ২০:১৮

যুক্তরাষ্ট্রে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদটি খুব একটা ক্ষমতাধর নয়, যদিও ব্যালটে প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর পাশে তাঁকেও দেখা যায়। নির্বাচনী প্রচারের সব আয়োজনেই প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর পাশে তাঁকে রাখা হয়। কারণ, একজন ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী নির্বাচনী প্রচারে ভোটারদের মধ্যে নিজেদের নির্বাচনী বার্তা ছড়িয়ে দিতে এবং প্রচারণার গতি বাড়াতে সহায়তা করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রধান দুই দলের প্রার্থী কে হচ্ছেন, তা এখন অনেকটাই নিশ্চিত। বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তাঁর দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি থেকে এবারও প্রার্থী হচ্ছেন। রানিং মেট হিসেবে তিনি তাঁর ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের ওপরই আস্থা রেখেছেন।
তবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না এলেও রিপাবলিকান দল থেকে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পই প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী হচ্ছেন।
আগামী জুলাই মাসে রিপাবলিকান দলের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। ওই সম্মেলনে বা অল্প কয়েকদিন আগে ট্রাম্প তাঁর রানিং মেটের নাম ঘোষণা করতে পারেন।ভোটাররা প্রেসিডেন্টের সঙ্গেই তাঁর ভাইস প্রেসিডেন্টকে বেছে নেবেন। আলাদা করে ভাইস প্রেসিডেন্টের কোনো ভোট হবে না। তাই ট্রাম্প বা বাইডেনকে ভোট দেয়ার অর্থ তাঁদের ভাইস প্রেসিডেন্টকেও ভোট দেয়া। যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনী প্রচার এখন তুঙ্গে। যুক্তরাষ্ট্রের সরকারব্যবস্থায় ভাইস প্রেসিডেন্টের অবস্থান এবং কীভাবে তাঁদের বেছে নেয়া হয়, সে সম্পর্কে আসুন জেনে নেয়া যাক-
সংবিধানে ভাইস প্রেসিডেন্টের গুরুত্ব : যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে একজন ভাইস প্রেসিডেন্টকে ‘খুবই অল্প কিছু দায়িত্ব’ দেয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেন ডেটন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ক্রিস্টোফার ডেভিন। আল–জাজিরাকে এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বলেন, যদি প্রেসিডেন্ট মারা যান, পদত্যাগ করেন অথবা কোনো কারণে দায়িত্ব পালনে অক্ষম হয়ে পড়েন, তখন ভাইস প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। এটা তাঁর বড় দায়িত্বের একটি। এ ছাড়া সিনেটে কোনো ভোট টাই হলে ভাইস প্রেসিডেন্টের ভোট সেই টাই ভাঙে। বাইডেনের মেয়াদের প্রথম দুই বছর কমলা হ্যারিসকে নিয়মিত এ কাজ করতে হয়েছে। সেসময় কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে ১০০ আসন ৫০টি করে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে ভাগ হয়েছিল।
ভাইস প্রেসিডেন্ট সিনেটের প্রধান। তবে কয়েক দশক ধরে ভাইস প্রেসিডেন্টরা অধিকাংশ সময় আইন প্রণয়নসংক্রান্ত কার্যক্রমে সভাপতিত্ব করা বন্ধ করে দিয়েছেন। এ কারণে এটা এখন মূলত একটি আনুষ্ঠানিক পদে পরিণত হয়েছে।আনুষ্ঠানিক দায়িত্বের বাইরে ভাইস প্রেসিডেন্ট কী করেন : বর্তমানে ভাইস প্রেসিডেন্ট মূলত প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেন। যখন প্রেসিডেন্ট বড় কোনো সিদ্ধান্ত নেন, তখন ‘তাঁর কক্ষে থাকা সর্বশেষ ব্যক্তিটি ভাইস প্রেসিডেন্ট হবেন’ বলে প্রত্যাশা করা হয় বলে জানান অধ্যাপক ডেভিন। এখন পদটি আনুষ্ঠানিক হলেও আধুনিক যুক্তরাষ্ট্র ডিক চেনির মতো প্রভাবশালী ভাইস প্রেসিডেন্টকে দেখেছে।
বিশেষ করে জর্জ ডব্লিউ বুশের প্রথম মেয়াদে চেনি তাঁর ক্যারিশমা দেখিয়েছেন। তবে ট্রাম্পের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের মতো গুরুত্বপূর্ণ কোনো প্রশাসনিক কাজ না করা এবং আলোচনার বাইরে থাকা ভাইস প্রেসিডেন্টদের দেখাও মিলেছে। অবশ্য ভাইস প্রেসিডেন্ট সরকার পরিচালনায় কতটা প্রভাব বিস্তার করতে পারবেন, তা অনেকটা তাঁর নিজস্ব অভিজ্ঞতা এবং অন্যদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের ওপর অনেকটা নির্ভর করে বলে মনে করেন প্রেসিডেন্টশিয়াল ইতিহাসবিদ লিন্ডসে চেরভিনস্কি। উদাহরণ হিসেবে তিনি ডিক চেনির কথা বলেন, যিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে প্রতিরক্ষামন্ত্রী, কংগ্রেসের সদস্য ও হোয়াইট হাউসের চিফ অব স্টাফ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
যেভাবে ভাইস প্রেসিডেন্টকে বেছে নেয়া হয় : প্রেসিডেন্টের মতো ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে দলীয় প্রাথমিক বাছাইয়ের লড়াইয়ে নামতে হয় না। প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ঠিক হওয়ার পর তাঁর পছন্দে ভাইস প্রেসিডেন্টকে বেছে নেয়া হয়। প্রেসিডেন্ট প্রার্থী প্রথমে তালিকা থেকে নিজের রানিং মেট বেছে নেন এবং পরে দলীয় সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়া হয়।
কী কী যোগ্যতা দেখা হয় : চেরভিনস্কি বলেন, সাধারণত ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে ভালো বক্তাকে বেছে নেয়া হয়। তবে কেউ যদি প্রতিপক্ষকে ‘আক্রমণ করে কথা বলতে সিদ্ধহস্ত হন’, সেটা তার বাড়তি যোগ্যতা বলে বিবেচনা করা হয়।
তথাকথিত ভারসাম্য রক্ষার স্বার্থে জাত, বয়স, লিঙ্গ ও অভিজ্ঞতা অনেক সময় বিবেচনায় নেয়া হয়।
যেমন কমলা হ্যারিসকে বেছে নিয়েছিলেন বাইডেন। কমলা একজন কৃষ্ণাঙ্গ নারী এবং বয়সে তরুণ। বিপরীতে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা যখন প্রার্থী হন, তখন মাত্র একবার তিনি সিনেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ভারসাম্য বজায় রাখতে তিনি রানিং মেট হিসেবে সিনেটে ৩৫ বছরের অভিজ্ঞ বাইডেনকে বেছে নেন। বাইডেন বর্তমানে প্রেসিডেন্ট।
চেরভিনস্কি বলেন, কে নির্বাচনে জয়ে সাহায্য করতে পারেন, তাঁরা সেটাই দেখেন।
কাকে বেছে নেবেন ট্রাম্প : গতবারের নির্বাচনে বাইডেনের জয় আটকাতে ট্রাম্পের আহ্বানে সাড়া দেননি তাঁর ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স। কংগ্রসে ইলেকটোরাল কলেজ ভোট গণনার দিন ফলাফল আটকে দিতে পেন্স তাঁর সাংবিধানিক ক্ষমতার ব্যবহার করতে অস্বীকৃতি জানান। চেরভিনস্কি বলেন, এটা পরিষ্কার, এবার ট্রাম্প এমন কাউকে চাইছেন, যিনি এমনকি সাংবিধানিক দায়িত্বের বাইরে গিয়ে হলেও তাঁর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করবেন।
তিনি একজন নারী অথবা বৈচিত্র্যময় কাউকে বেছে নিতে পারেন। ট্রাম্পের সম্ভাব্য রানিং মেট হিসেবে এবার কংগ্রেস সদস্য এলিস স্টেফানিক, সিনেটর টিম স্কট, সিনেটর জে ডি ভান্স এবং নর্থ ডাকোটার ডগ বার্গামের নাম শোনা যাচ্ছে। স্কট সিনেটে একমাত্র কৃষ্ণাঙ্গ রিপাবলিকান। তবে ট্রাম্পের যে চরিত্র, তাতে শেষ পর্যন্ত তিনি কাকে বেছে নেবেন, তা অনুমান করা কঠিন বলেই মনে করেন চেরভিনস্কি। আগামী নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।