যুক্তরাষ্ট্রের কোথায় ভারতীয় ব্যবসায়ী নিখিল গুপ্তের বিচার শুরু হয়েছে তা শনাক্ত করেছে ভারত সরকার। তারা জানিয়েছে, নিখিল গুপ্ত কোনো কন্স্যুলার সহায়তা চাননি। তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে সরকারের।
ওদিকে কানাডায় নিহত শিখ নেতা হরদিপ সিং নিজার হত্যাকাণ্ডে কানাডার পার্লামেন্টে নীরবতা পালনের নিন্দা জানিয়েছে ভারত। এ খবর দিয়েছে অনলাইন এনডিটিভি। এতে বলা হয়, খালিস্তানপন্থি আন্দোলনের নেতা গুরপাতওয়ান্ত সিং পান্নুনকে হত্যা যড়যন্ত্রে জড়িত বলে যুক্তরাষ্ট্রে অভিযুক্ত করা হয়েছে ভারতীয় ব্যবসায়ী নিখিল গুপ্তকে। তাকে প্রায় এক বছর আগে চেক প্রজাতন্ত্রে এই ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগে আটক করা হয়। তারপর দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষে তাকে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেয়া হয। এরপর সোমবার নিউ ইয়র্কের এক আদালতে তাকে উপস্থাপন করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর একজন সিনিয়র কর্মকর্তার পক্ষে তিনি পান্নুনকে হত্যা করতে একজন খুনিকে ভাড়া করেছিলেন। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নিখিল গুপ্ত।
তাকে ১৪ই জুন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে প্রত্যর্পণ করা হয়েছে জানিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জৈশওয়াল বলেছেন, গুপ্তর পক্ষ থেকে এখনও আমরা কোনো কন্স্যুলার সহায়তার অনুরোধ পাইনি। তবে তার পরিবার আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আমরাও যোগাযোগ রাখছি। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি কি করা যায়।
ওদিকে এ সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের এটর্নি জেনারেল মেরিক গারল্যান্ড বলেছেন, নিখিল গুপ্তকে এখন যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। এই প্রত্যর্পণ এটাই পরিষ্কার করে যে, মার্কিন নাগরিকদের কণ্ঠকে স্তব্ধ করে দেয়া বা তাদের কোনো ক্ষতি করার কোনো চেষ্টা সহ্য করবে না আইন মন্ত্রণালয়।
ওদিকে বিদেশে খালিস্তানপন্থিদের হত্যা বা তাদেরকে টার্গেট করা ভারতীয় নীতি নয় বলে এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে ভারত সরকার। তবে নিখিল গুপ্তের বিরুদ্ধে অভিযোগ ফাইল করেছে যুক্তরাষ্ট্রের এজেন্সিগুলো নভেম্বরে। এতে নাম উল্লেখ না করে একজন ভারতীয় কর্মকর্তাকে শনাক্ত করা হয়েছে। যদি এই অভিযোগ প্রমাণিত হয় তাহলে ভারতের নিরাপত্তা কাঠামো এবং নেতৃত্বের ওপর এর প্রভাব পড়তে পারে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের উত্থাপিত অভিযোগ তদন্তে উচ্চ পর্যায়ের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ভারত সরকার। কমিটি গঠনের কমপক্ষে ৬ মাস অতিবাহিত হওয়ার পরও কেন তাদের কোনো অনুসন্ধান বা কমিটির বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়নি- এ বিষয়ে গত মাসে প্রশ্ন রাখে দ্য হিন্দু। জবাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, উচ্চ পযায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিনি শুধু এটাই নিশ্চিত করতে পারেন। তিনি আরও জানান, আমাদের সঙ্গে যেসব তথ্য শেয়ার করা হচ্ছে, কমিটি শুধু সেসব বিষয় খতিয়ে দেখছে।
২০২৩ সালের জুনে কানাডার ভ্যানকোভারে হত্যা করা হয় খালিস্তানপন্থি আরেক নেতা হরদিপ সিং নিজারকে। এ হত্যা নিয়ে একই রকমভাবে অভিযোগ অস্বীকার করছে ভারত। উল্টো কানাডা উগ্রপন্থি খালিস্তানি গ্রুপের সহিংসতার জন্য নিরাপদ স্বর্গ হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ করেছে তারা। এ সপ্তাহে নিজার হত্যার প্রথম বার্ষিকী স্মরণে কানাডার পার্লামেন্টে সদস্যরা দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করেন। এ সিদ্ধান্তের বিষয়ে জৈশওয়াল বলেন, উগ্রপন্থিদের যেকোনো রাজনৈতিক সুযোগ করে দেয়া এবং যারা সহিংসতার পক্ষে তাদেরকে স্থান করে দেয়ার বিরোধী ভারত। তিনি আরও বলেন, বাস্তব সমস্যা হলো ভারত বিরোধী এজেন্ডাকে সমর্থন করা। তাই আমরা আবারও কানাডা কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে। এক্ষেত্রে তিনি নিজার হত্যার প্রতিবাদে তার সমর্থকদের র্যালির প্রসঙ্গ টানেন, যারা নিজারকে হত্যার অভিযোগে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে অভিযুক্ত করে প্রতীকী আদালতে বিচার করেছে।
সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সম্প্রচার মাধ্যম এবিসিতে একটি ডকুমেন্টারি প্রকাশিত হয়েছে। এর শিরোনাম- ‘স্পাইস, সিক্রেটস অ্যান্ড থ্রেটস: হাউ দ্য মোদি রেজিম টার্গেটস পিপলস ওভারসিস’। এতে অভিযোগ করা হয় যে, খালিস্তানপন্থি কর্মীদের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তি এবং গোয়েন্দাগিরির অভিযোগে অস্ট্রেলিয়া থেকে ভারতীয় চারজন কূটনীতিককে বহিষ্কার করা হয়েছে। অভিযোগ করা হয়, বিজেপির জোটসঙ্গীরা অস্ট্রেলিয়ার রাজনৈতিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে।
শুক্রবার জৈশওয়াল বলেন, এই প্রামাণ্যচিত্র পক্ষপাতমূলক। এতে অপেশাদার রিপোর্টিং প্রতিফলিত হয়েছে। ভারত বিরোধী এজেন্ডা এতে বাস্তবায়ন করা হয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। সন্ত্রাসের এভাবে পক্ষ নেয়া, তাদেরকে উজ্জীবিত করার চেষ্টার সুস্পষ্টভাবে আমরা বিরোধিতা করি।