আগামী বৃহস্পতিবার রাতে বাইডেন-ট্রাম্প নির্বাচনি বিতর্ক

আমেরিকার রাজনীতিতে নজিরবিহীন ঘটনার ঘনঘটা

ডেস্ক রিপোর্ট
  ২৪ জুন ২০২৪, ১৩:২০
ডনাল্ড ট্রাম্প ও জো বাইডেন

যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে একের পর এক নজিরবিহীন ঘটনা ঘটছে। ক্রিকেট জনপ্রিয় না হলেও, আমেরিকার রাজনীতিতে ক্রিকেট খেলার মতো নতুন নতুন রেকর্ড গড়ে উঠছে। প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের রাজনৈতিক বিতর্কের আরেকটি মাইলফলক হয়ে উঠেছে ১৭ জুন বৃহস্পতিবার। এর আগে আমেরিকার কোন জাতীয় নির্বাচনের এতো আগে প্রার্থীদের সরাসরি কোন বিতর্ক হয়নি। এমন বয়স্ক দুই প্রার্থীর দেড় ঘণ্টা দাঁড়িয়ে বিতর্ক করার কোন পরীক্ষা দিতে হয়নি।দলের জাতীয় কনভেনশনে অনুমোদনের আগেই এর আগে কখনো প্রেসিডেন্ট প্রার্থীরা সরাসরি এমন কোনো বিতর্ক যোগ দেননি। এর আগে কোন বিতর্কে কোন প্রার্থীকে অপরাধ আইনে দণ্ড নিয়ে প্রশ্ন শুনতে হয়নি। আমেরিকার সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ইতিহাসে কোনো প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে তাঁর পুত্রের অপরাধ দণ্ড নিয়েও এর আগে প্রশ্নবাণে জর্জরিত হতে হয়নি।  
৯০ মিনিটের বিতর্ক। একদিকে ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। পুনর্নির্বাচিত হওয়ার মাত্র ৪২ শতাংশ সম্ভাবনা যার এই মুহূর্তে। বিতর্কের অন্যদিকে সাবেক সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইতিহাসের প্রথম দণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট। জনমত জরিপে যার নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা ৫৮ শতাংশ।এসব বিতর্কের আগের সপ্তাহের জনমত জরিপ।
 প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বয়স ৮১ বছর। ট্রাম্পের বয়স ৭৮ বছর। দুই বৃদ্ধ বেশ আগে থেকেই এ বিতর্কের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। প্রথম আলো উত্তর আমেরিকা ছাপা সংস্করণ আসছে শুক্রবারে পাঠকের হাতে পৌঁছবে। এর আগেই বৃহস্পতিবার রাত ৯ টায় আটলান্টায় ৯০ মিনিটের বিতর্ক মঞ্চ উত্তপ্ত হয়ে উঠবে। এ মঞ্চ ঘিরে কোনো দর্শক স্রোতা থাকার কথা নয়। নজিরবিহীন এক শর্তে কোনো দর্শক ছাড়াই এ সরাসরি বিতর্ক। একজন কথা বলার সময় অন্যজনের মাইক বন্ধ। কলম আর লেখার প্যাড ছাড়া কিছুই থাকার কথা নয় বাইডেন বা ট্রাম্পের হাতে। শুধু আমেরিকা নয়, বিশ্বের কোটি কোটি দর্শকের চোখ সিএনএন এর পর্দায় আটকে পড়ার উত্তেজনা।  
নভেম্বর মাসে নির্বাচন। সাধারণত আগস্ট মাসে ডেমোক্র্যাট এবং রিপাবলিকানদের কনভেনশন হয়। কনভেনশনের পরই দুই দলের চূড়ান্ত প্রার্থীর মধ্যে বিতর্ক হয়। এবারেই প্রথম কনভেনশনের নিয়ে কারো কোন আগ্রহ নেই।দুই দলের প্রার্থী এরমধ্যেই নিশ্চিত প্রার্থী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। কনভেনশনে এ প্রার্থীতাকে শুধু আনুষ্ঠানিক অনুমোদন দেবেন ডেলিকেটরা। ফলে জুন মাসের প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্ক আমেরিকার রাজনীতিতে নতুন। এ নিয়ে শুরু থেকেই আগ্রহ শুরু হয়েছে মার্কিন সমাজে।
৮১ বছর বয়সের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শারীরিক সক্ষমতা নিয়ে দলের মধ্যে এবং দলের বাইরে সংশয় সন্দেহ বিরাজমান। ৯০ মিনিটের বিতর্কে মাথা সোজা করে দাঁড়িয়ে থাকতে পারাকেই বিতর্কে জয় হিসেবে দেখা যেতে পারে। পারিবারিক কেলেঙ্কারিতে পেয়ে বসেছে প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে। নিজের ক্ষমতায় থাকার সময়েই পুত্র হান্টার বাইডেন অপরাধ আইনে দণ্ড লাভ করেছেন। আগে এক পুত্রকে ক্যান্সারে হারিয়েছিলেন।২০২০ সালের নির্বাচনে আমেরিকার মানুষের সহানুভূতি পেয়েছিলেন পুত্র হারানোর কথা বলে। এবারে পুত্রের অপরাধ ও দণ্ডপ্রাপ্তি নিয়ে ট্রাম্পের হামলার মোকাবেলা তাঁকে করতে হচ্ছে।
বাইডেন পারিবারিকভাবে দুর্নীতিবাজ, একথাটি ট্রাম্প বলে আসছিলেন বেশ আগে থেকেই। সরাসরি বিতর্কে এ বিষয়টি অবধারিতভাবে সামনে নিয়ে আসছেন। ইমিগ্রেশন সমস্যা , দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, সীমান্ত সমাস্যার সমাধান না করা, ইউক্রেন যুদ্ধ, গাজা ইসরাইল পরিস্থিতির দায় নিয়ে কঠিন হামলার জন্য প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে প্রস্তুত করা হয়েছে বেশ আগে থেকেই। ডনাল্ড ট্রাম্প জনমত জরিপে এগিয়ে আছেন, তাঁর রক্ষণশীল সমর্থকদের অনড় অবস্থানের পরও বাইডনকে বিতর্কে হালকা করে না দেখার কথা জানিয়েছেন এক সপ্তাহ আগেই। একজন ক্যারিয়ার রাজনীতিবিদ হিসেবে জো বাইডেন একদম তৃণমূল থেকে ক্রমান্বয়ে উঠে এসে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। রাজনৈতিক বিতর্কে সবসময়ই তিনি ভালো করেছেন। যদিও সময় ও বয়স এখন তাঁর পক্ষে নেই। এরপরও ট্রাম্প সবকিছুকে সহজ হিসেবে নিলেও এ বিতর্ককে গুরুত্ব দিতে দেখা গেছে।
ডোনাল্ড  ট্রাম্পের জন্য সমর্থকদের আশঙ্কা হচ্ছে , বিতর্কের মঞ্চে তিনি নিজেকে কতটা স্বাভাবিক একজন রাষ্ট্রনায়কের মতো কথা চালিয়ে যাবেন কি না। ট্রাম্প পেশাদার রাজনীতিবিদদের মতো হিসেব করে কথা বলতে পারেন না। মাপা কথায় দীর্ঘ সময় স্থির থাকতে পারেন না। আগের প্রস্তুত করা বক্তৃতা বা কথা থেকে বেরইয়ে নিজের স্বভাবসুলভ বাগাড়ম্বরে জড়িয়ে পড়েন। বিতর্কের আগে থেকে ট্রাম্প সমর্থকদের একটাই কামনা করতে দেখা গেছে, তিনি যেন একজন স্বাভাবিক মানুষের মতো কথা বলেন। তাঁর বিরুদ্ধে অপরাধ দণ্ডের প্রশ্নবাণ, নৈতিকতার দায়, গর্ভপাত নিয়ে দোদুল্যমানতা, সমাজে বিভেদ সৃষ্টির অভিযোগ বিতর্কে নিশ্চিত থাকছে। বৃহস্পতিবার রাতে দুই বয়স্ক প্রার্থীর আচরণ কতটা 'প্রাপ্ত বয়স্ক' মানুষের বিতর্কের সীমারেখায় থাকবে, এ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে বেশ আগে থেকেই।
২৭ জুনের পর দুই প্রার্থী আবার মুখোমুখি হবেন সেপ্টেম্বর মাসে। এরমধ্যে আমেরিকার রাজনীতি কতটা নিজেদের পক্ষে ঘুরিয়ে নিতে পারেন, তা নির্ভর করছে ২৭ জুন রাতের বিতর্কের উপর।