মানবপাচার নির্মূলে ন্যূনতম মান বাংলাদেশ সম্পূর্ণরূপে অর্জন করতে না পারলেও উল্লেখযোগ্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। সরকার গত বছরের চেয়ে সামগ্রিকভাবে অনেক বেশি চেষ্টা করেছে বলে বাংলাদেশের টায়ার-২ বা দ্বিতীয় শ্রেণির অবস্থান অপরির্বতিত রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। ২৫ জুন (সোমবার) প্রকাশিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানবপাচার প্রতিবেদন-২০২৪ এ এমনটি বলা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ওয়াশিংটন থেকে মানবপাচার পরিস্থিতির ওপর তৈরি করা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকারের গ্রহীত প্রচেষ্টার মধ্যে রয়েছে, ক্রমবর্ধমান তদন্ত, বিচার, এবং পাচারকারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গঠন। পাচারকারীদের শনাক্তকরণে সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম সারির কর্মকর্তাদের জন্য নির্দেশিকা গ্রহণ করেছে এবং পাচারের শিকার আরও বেশি ব্যক্তিকে চিহ্নিত করেছে। সরকার বিদেশি অভিবাসী শ্রমিকদের নীতি সংশোধন করেছে; যাতে নিয়োগকারী এজেন্টদের অধিকতর তত্ত্বাবধানে আনা হয়েছে, যার ফলে জবাবদিহিতা বৃদ্ধি পেয়েছে। উপরন্তু, সরকার প্রথমবারের মতো পাচারের শিকারদের জন্য ক্ষতিপূরণ তহবিলে অর্থ জমা করেছে।
তবে সরকার বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে ন্যূনতম মান পূরণ করতে পারেনি। যদিও সরকার আইন প্রয়োগের প্রচেষ্টা বাড়িয়েছে, তবে এটি যৌনপাচার এবং জোরপূর্বক শিশু শ্রমসহ অভ্যন্তরীণ পাচারের অপরাধগুলো মোকাবিলায় পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নেয়নি বা সরকারি জটিলতা—উভয়ই ছিল। কর্তৃপক্ষ অভিবাসী চোরাচালানের সঙ্গে মানবপাচার অব্যাহত রেখেছে। সরকার রোহিঙ্গা শরণার্থী শোষণের সঙ্গে জড়িত পাচারের মামলাগুলোর পর্যাপ্ত তদন্ত ও বিচার করেনি।
সরকার নতুন কোনো পাচারবিরোধী ট্রাইব্যুনাল গঠন করেনি। ভুক্তোভুগির সুরক্ষার প্রচেষ্টা অপর্যাপ্ত ছিল এবং পাচার থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগের সময় সরকারি কর্মকর্তাদের ভুক্তোভুগি বা নির্যাতিতের অবস্থান থেকে অভিগমনের অভাব ছিল। পাচারের শিকার ব্যক্তিদের জন্য আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে বিশেষ পরিষেবার অভাব ছিল এবং ঢাকার বাইরে বিশেষ করে পুরুষদের জন্য অল্প কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্র ছিল।
সরকার এখনো নিয়োগ ফি অনুমোদন করে, যা পরিশোধ করতে গিয়ে অনেক অভিবাসী কর্মীকে ঋণ করতে হয়। এতে তাঁদের পাচারের শিকার হওয়ার ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়। আদালতে সিংহভাগ পাচারকারীর বিচার বলতে জরিমানা হয়, কারাদণ্ড কমই হয়। এতে মানব পাচার প্রতিরোধে সরকারের সার্বিক উদ্যোগ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, ভূক্তভোগীদের নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগ বাড়ছে।