পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়ে মেরুগুলোর চারপাশের সমুদ্রের হিমবাহ গলতে শুরু করায় নিউ ইয়র্কসহ তিনটি বড় শহর তলিয়ে যাবার আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞানীরা। মিয়ামি, সাংহাইয়ের মতো নিচু ও উপকূলীয় শহর এবং মুম্বাই শহর তলিয়ে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা করে বাসিন্দাদের স্থানান্তর করতে হতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করছেন তারা। সম্প্রতি ফোর্বসের এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। তলিয়ে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞানীরা।
আন্টার্কটিকার ফ্লোরিডায় ৮০ মাইল প্রস্থের পৃথিবীর সবচেয়ে প্রশস্ত হিমবাহ থোয়াইটস বা ডুমসডে হিমবাহটি দ্রুত গলে যাচ্ছে। হিমবাহটির গলে গিয়ে দ্রুত অবস্থার পরিবর্তনের কারণে মহাসাগরগুলোতে জলের স্তর অতিরিক্ত বেড়ে যাবে, যা গোটা পৃথিবীকে ধ্বংস করে দিতে পারে। এমন ধারণা করছেন বিজ্ঞানীরা। এক গবেষণা অনুসারে বিজ্ঞানীরা বলছেন, আমাদের চিন্তার চেয়েও দ্রুত গতিতে গলছে এই হিমবাহ।
ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সেসের প্রসিডিংসে প্রকাশিত নতুন এক সমীক্ষা অনুসারে, ডুমসডে গ্লেসিয়ার উষ্ণ সমুদ্রজলের সংস্পর্শে এসেছে, যা বিজ্ঞানীরা একবার বিশ্বাস করেছিলেন। গবেষকেরা মহাকাশ থেকে রাডার ডেটার মাধ্যমে হিমবাহটি পরীক্ষা করেছেন এবং খুঁজে পেয়েছেন, নোনা, উষ্ণ জল হিমবাহের নিচে ঠেলে দিচ্ছে এবং প্রবলভাবে গলে যাচ্ছে। হিমবাহটি সাগরে উপরে এবং নিচের দিকে তলিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে উষ্ণ জল এটির তলদেশে ৩.৭ মাইল পর্যন্ত ছুটে যায়। যার ফলে হিমবাহ গলে যাওয়া এলাকাকে বাড়িয়ে দেয়।
বিজ্ঞানীরা অনুমান করছেন, হিমবাহটি একবার ধসে পড়লে ৬৫ সেন্টিমিটার বা দুই ফুটের বেশি হতে পারে, যা কয়েক বছরের মধ্যে বিশ্বব্যাপী সমুদ্রের স্তর বৃদ্ধি পাবে।
বিজ্ঞানীরা জানান, তুলনামূলকভাবে, ১৮৮০ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী সমুদ্রপৃষ্ঠের স্তর ২১ থেকে ২৪ সেন্টিমিটার বা আট থেকে নয় ইঞ্চির মতো বেড়েছে। পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে ঝুঁকিপূর্ণ হিমবাহটির নিচ দিয়ে সমুদ্রের গরম জল প্রবাহিত হচ্ছে।
১৯৪০ এর দশকে বিজ্ঞানীরা উদ্ভাবন করেন, হিমবাহটি শক্তিশালী এল নিনোর প্রভাবে দ্রুততার সাথে গলছে। সম্ভবত মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবে এটি ঘটেছে। গবেষণা অনুসারে, সমুদ্রের স্তরের এই বৃদ্ধি আগামী ১০ থেকে ২০ বছরের মধ্যে একটি বিপর্যয়মূলক স্তরে বাড়তে পারে। তবে ঠিক কখন হিমবাহ গলে যাবে, তা অনুমান করা কঠিন। আমেরিকান জিওফিজিক্যাল ইউনিয়নের একটি অংশের বিজ্ঞানীরা ২০২১ সালে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, হিমবাহের একটি মূল অংশ আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ভেঙে পড়তে পারে।
আরেক গবেষণা অনুসারে, হিমবাহটি পরবর্তী ২০০ থেকে ৯০০ বছরের মধ্যে ভেঙে পড়তে পারে। ড. জেমস কিরখাম, একজন গ্ল্যাসিওলজিস্ট এবং ইন্টারন্যাশনাল ক্রায়োস্ফিয়ার ক্লাইমেট ইনিশিয়েটিভের প্রধান বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা মনে করেন, সমুদ্রপৃষ্ঠের স্তর ২০৭০ সালের মধ্যে তিন ফুট, ২১০০ সালের প্রথম দিকে ১০ ফুট এবং ২৩০০ সালের মধ্যে ৫০ ফুট বাড়তে পারে।