‘দ্য ইউবিএস গ্লোবাল ওয়েলথ রিপোর্ট ২০২৪’-এ বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যে ডলারে সম্পদ থাকা ধনকুবেরদের সংখ্যা এবছর ১৭ শতাংশ কমে দাঁড়াবে ২,৫৪২৪৬৪ জনে।
২০২৮ সালের মধ্যে যুক্তরাজ্য ছাড়তে পারে মার্কিন ডলারে সম্পদ থাকা প্রায় ৬ জনে একজন ধনকুবের। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও তাইওয়ানসহ অন্যান্য দেশে এই ধনকুবেরদের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে জানানো হয়েছে বুধবার প্রকাশিত এক নতুন প্রতিবেদনে।
‘দ্য ইউবিএস গ্লোবাল ওয়েলথ রিপোর্ট ২০২৪’ এর পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যে ডলারে সম্পদ থাকা ধনকুবেরদের সংখ্যা এবছর ১৭ শতাংশ কমে দাঁড়াবে ২,৫৪২৪৬৪ জনে, আগের বছরে যা ছিল ৩,০৬১,৫৫৩ জন।
নেদারল্যান্ডসেও ধনকুবেরের সংখ্যা আগের বছরের ১,২৩১৬২৫ জন থেকে ৪ শতাংশ কমে ১,১৭৯৩২৮ জনে দাঁড়াবে বলে জানানো হয়েছে প্রতিবেদনে।
ইউবিএস গ্লোবাল ওয়েলথ ম্যানেজমেন্ট এর প্রধান অর্থনীতিবিদ পল ডেনোভান বলেছেন, যুক্তরাজ্য থেকে ধনকুবেরদের চলে যাওয়া এই বাস্তবতারই কিছুটা প্রতিফলন ঘটাচ্ছে যে, বিশ্বে তৃতীয় সর্বোচ্চসংখ্যক ধনকুবেরের এই দেশটি থেকে এখন তাদের চলে যাওয়ার পরিসংখ্যান ‘অস্বাভবিকভাবে বেড়ে গেছে’।
ডেনোভানের মতে, যুক্তরাজ্য তাদের অ-আবাসিক (নন-ডোম) ব্যবস্থা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় এর কিছু প্রভাব পড়েছে। এ ব্যবস্থায় সম্পদশালী মানুষেরা বিশেষত, বিদেশি যারা যুক্তরাজ্যে বাস করে তারা বৈদেশিক আয়ের ওপর কর এড়াতে পারত। এ সুবিধা না থাকায় এখন ভিনদেশি ধনকুবেররা এখন কম কর কোথায় দেওয়া যায় সেসব জায়গাই খোঁজ করবে।
যুক্তরাজ্য বিশ্বে সবচেয়ে বেশি করের দেশ। ধনবান মানুষ, যাদের বছরে আয় ১২৫,১৪০ পাউন্ডের বেশি তাদেরকে ৪৫ শতাংশ হারে কর দিতে হয়। এর মানে, আয়ের প্রায় অর্ধেকই সরকারকে দিতে হয়। এমনকী যুক্তরাজ্যের অধিবাসী না হওয়ার পরও সেদেশে আয়ের ওপর সরকারকে কর দেওয়ার নিয়ম চালু আছে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই।
সম্প্রতি কয়েকবছরে যুক্তরাজ্য সরকার ক্রিপ্টোকারেন্সির ওপরেও কর চালু করেছে। এই করও দিতে হয় ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত। তার ওপর এবছরের নির্বাচনে যুক্তরাজ্যে লেবার পার্টির জয় ধনকুবেরদের দেশ ত্যাগ আরও উস্কে দিয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে।
লেবার পার্টির নেতা কিয়ার স্টারমার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক সরকারের নির্ধারিত বিধি অনুসরণ করার প্রতিশ্রুতি দিলেও দলটির বিভিন্ন খাতে কর বাড়ানোর পরিকল্পনা ধনীদের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
লেবার পার্টি ধনীদের নিশানা করে কিছু খাতে কর বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে। এর মধ্যে রয়েছে বেসরকারি স্কুলগুলোতেও কর চালু করা এবং যুক্তরাজ্যের অস্থায়ী বাসিন্দাদের জন্য করের ফাঁকফোকর বন্ধ করা।
তবে করের বিষয়টি ছাড়াও ব্রেক্সিট ও ইউক্রেইন সংঘাতের মতো অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি যুক্তরাজ্যের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা বিনিয়োগ ও সম্পদ সংরক্ষণের নিরাপদ স্থান হিসেবে দেশটির আবেদন কমাচ্ছে। ফলে ধনকুবেরদের অনেকেই যুক্তরাজ্য ছেড়ে আরও স্থিতিশীল দেশে স্থানান্তরিত হতে চাইছে।
‘দ্য ইউবিএস গ্লোবাল ওয়েলথ রিপোর্ট’ আনুমানিক হিসাব দিয়ে বলেছে, ২০২৮ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ডলারে সম্পদ থাকা ধনকুবেরদের মোট সংখ্যা ১৬ শতাংশ বাড়বে। জার্মানিতে বাড়বে ১৪ শতাংশ, ফ্রান্সে ১৬ শতাংশ, জাপানে ২৮ শতাংশ, স্পেনে ১২ শতাংশ এবং ইতালিতে বাড়বে ৯ শতাংশ।