বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ফ্যাসিবাদী ষড়যন্ত্র মোকাবিলা এবং নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ এই দুই ইস্যুতে মাঠের কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে চায় বিএনপি। সেই ভাবনা থেকেই এবার দশ সাংগঠনিক বিভাগে বড় সমাবেশ করার চিন্তাভাবনা করছে দলটি। এছাড়া মহান বিজয় দিবস ঘিরেও রাজধানীতে বড় ধরনের শোডাউনের পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় আরেকটি বড় র্যালির প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
এছাড়াও আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে নির্বাচন ইস্যু এবং জাতীয় ঐকমত্যের প্রশ্নে যাতে কোনো মনোমালিন্য কিংবা দূরত্ব তৈরি না হয়, সেদিকে দলের নেতাদের মনোযোগী হতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। গত ১১ নভেম্বর রাতে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত হয়। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়ালি লন্ডন থেকে যুক্ত ছিলেন। মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যরা এতে অংশ নেন।
সূত্রগুলো বলছে, বিএনপি মনে করে রাষ্ট্র কাঠামোর সংস্কার এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়া দুটিই সমান্তরালভাবে চলা উচিত। এজন্য সরকারকে অবিলম্বে একটি নির্বাচনী রোডম্যাপ দিয়ে সামনে এগোনো উচিত। যতদিন পর্যন্ত তারা এই রোডম্যাপ না দেবে, ততদিন পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ‘নির্বাচন বিলম্বিত হওয়ার শঙ্কা’ থেকে যাবে। এই শঙ্কা কাটানোর জন্য সরকারের উচিত দ্রুত রোডম্যাপ প্রকাশ করা। বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলো একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে অব্যাহত সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। তাই নির্বাচন নিয়ে জনমনে বিভিন্ন সময় যে শঙ্কা তৈরি হচ্ছে, সেটা কাটিয়ে উঠতে সরকারের উচিত তা খোলাসা করা এবং নির্র্বাচনী রোডম্যাপ প্রকাশ করা। সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখার যে নীতি বিএনপি নিয়েছে তারই অংশ হিসেবে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে গত শুক্রবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিএনপি বর্ণাঢ্য র্যালি করেছে।
স্থায়ী কমিটির নেতাদের মূল্যায়ন হচ্ছে, এই র্যালির মধ্য দিয়ে আবারও প্রমাণিত হয়েছে বিএনপি দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক শক্তি। সুতরাং বিএনপিকে বাইরে রেখে কিংবা এড়িয়ে কোনো কিছু করা যাবে না। বিএনপির সঙ্গে আলোচনা করেই অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত হবে সামগ্রিক সিদ্ধান্ত নেওয়া।
বিএনপির নেতারা বলছেন, গত ৪ নভেম্বর স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে রোডম্যাপ ঘোষণা না করলে আগামী বছরের মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে রাজপথে সোচ্চার হবে। সেই ধারাবাহিকতায় ধীরে ধীরে বিএনপি মাঠের কর্মসূচি বাড়াচ্ছে। ফলে এবার দশ সাংগঠনিক বিভাগে বড় সমাবেশ করার চিন্তা করছে বিএনপি। আগামী মাস থেকে এসব সমাবেশ শুরু হতে পারে। শিগগিরই বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে আলোচনায় সমাবেশ ও সেগুলোর দিনক্ষণ চূড়ান্ত হবে।
বৈঠকে সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে সম্প্রতি তিনজনের অন্তর্ভুক্তি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। বিএনপি নেতাদের অভিমত হলো দুজনকে নিয়ে নানা মহলে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। ইতিমধ্যে ছাত্র-জনতা এটা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে এবং আন্দোলন করছে। যথেষ্ট যাচাই-বাছাই ও চিন্তাভাবনা করে নিয়োগ দিলে এই বিতর্ক সৃষ্টি হতো না। বিতর্কিত কাউকে সরকারে না রাখার পক্ষে বিএনপি নেতারা মত দেন। এর আগে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদারকে উপদেষ্টা করায় প্রশ্ন তুলে তার পদত্যাগ দাবি করেছিল বিএনপি।
বৈঠকে এখন ৫ আগস্টের পরে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে প্রশাসন ও মাঠপ্রশাসনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে পদায়ন নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে নানা আলোচনা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে জামায়াত বিএনপিকে প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবছে কি না সে প্রশ্নও বৈঠকে তুলেছেন স্থায়ী কমিটির সদস্যদের কেউ কেউ। এমন প্রেক্ষাপটে জামায়াতের সঙ্গে যাতে কোনো দূরত্ব তৈরি না হয়, সেদিকে মনোযোগী হতে দলের নেতারা মত দিয়েছেন। তারা বলছেন, অন্তত নির্বাচনের আগে এবং জাতীয় ঐকমত্যের প্রশ্নে এখনই দলটির সঙ্গে মনোমালিন্য কিংবা দূরত্ব তারা তৈরি করতে চান না। এজন্য জামায়াতের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কিংবা অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ অব্যাহত রাখার তাগিদ দেন নেতারা।