নতুন বছরে রাজনীতিতে বড় চ্যালেঞ্জ আওয়ামী লীগের

নিজস্ব প্রতিবেদক
  ০৪ জানুয়ারি ২০২৩, ১৩:০৫

রাজনৈতিক অস্থিরতা, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দাসহ নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ ও সংকট মোকাবিলা করেই ২০২২ পার করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সবক্ষেত্রে শতভাগ সফল হয়েছে বলা না গেলেও এটুকু অন্তত বলা যায় ব্যর্থ হয়নি। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে নতুন বছর। নতুন বছর (২০২৩ সাল) আরও বেশি চ্যালেঞ্জের হবে বলে মনে করছে দলটি। সেজন্য দলীয় নেতৃত্বেও তেমন পরিবর্তন আনা হয়নি। বিশ্বব্যাপী আসন্ন সংকটে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা ক্ষমতাসীনদের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। একই সঙ্গে বিরোধী দলগুলোর আন্দোলন-সংগ্রাম মোকাবিলা করে জাতীয় নির্বাচনের বৈতরণী পার করা বড় চ্যালেঞ্জ হবে দলটির জন্য।
গত বছরের (২০২২) শুরুতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য ছিল করোনা মহামারির ধকল কাটিয়ে জীবনযাত্রা স্বাভাবিক করা। এর মধ্যেই শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। ফলে সারা বিশ্বে শুরু হয় অর্থনৈতিক অস্থিরতা। মাঝে ছিল তৃণমূলে দল গুছিয়ে স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি নির্বাচন। বছর শেষে তাড়া ছিল জেলা-উপজেলা সম্মেলন শেষে কেন্দ্রীয় সম্মেলনের। সবমিলিয়ে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ ও সংকটের মধ্য দিয়ে ২০২২ সাল পার করেছে আওয়ামী লীগ।
 বিশ্বব্যাপী আসন্ন সংকটে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা ক্ষমতাসীনদের কাছে এখন বড় চ্যালেঞ্জ। একই সঙ্গে বিরোধী দলগুলোর আন্দোলন-সংগ্রাম মোকাবিলা করে জাতীয় নির্বাচনের বৈতরণী পার করা বড় চ্যালেঞ্জ হবে আওয়ামী লীগের জন্য। 
এতসব চ্যালেঞ্জ ও সংকট মোকাবিলায় পুরোপুরি সফল বলা না গেলেও বেশ দক্ষতার পরিচয় মিলেছে। বিশেষ করে করোনার টিকাদান ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টা ছিল চোখে পড়ার মতো। পাশাপাশি অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় বিভিন্ন খাতে বিশেষ বরাদ্দ ও প্রণোদনাও বেশ সহযোগিতা করেছে। তবে রক্ত ঝরেছে তৃণমূলের (স্থানীয় সরকার নির্বাচন) ভোটে। যদিও বছর শেষে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে সম্মেলনের মাধ্যমে অন্তত ৫০ শতাংশ কমিটি করে দল চাঙ্গা করে সেটিও পুষিয়ে নিয়েছে আওয়ামী লীগ।
দলটির নেতারা মনে করেন, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগ মুহূর্তের বছর ২০২৩ সাল। ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে নির্বাচন। ফলে নির্বাচনের সব প্রস্তুতি ২০২৩ কে ঘিরেই। আর এই নির্বাচন সামনে রেখে চলতি বছরই আওয়ামী লীগকে জনমনে জায়গা করতে হবে, পুনরায় সমর্থন আদায় করতে হবে। এজন্য সরকারকে জনগণকে স্বস্তিতে রাখা এবং উন্নয়ন ও মানবকল্যাণের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। পাশাপাশি দল হিসেবে আওয়ামী লীগকেও বিরোধীদের সব আন্দোলন-সংগ্রাম মোকাবিলা করে রাজনীতির মাঠ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেই তাদের পক্ষে গড়তে হবে জনগণের ঐক্য।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, সব সময়ই নতুন বছরে আশা-আকাঙ্ক্ষা আর স্বপ্ন থাকে। ভালোর প্রত্যাশা থাকে। জীবনের জয়গানের জন্য আগমনী বার্তা আমরা সবসময় সুস্বাগতম জানাই। উন্নয়ন, অগ্রগতি এবং সমৃদ্ধির এই বাংলাদেশ এগিয়ে যাক, বাংলাদেশের জনগণ এগিয়ে যাক- আমরা সেই স্বপ্ন দেখি। আগামীর বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। সেটি বিনির্মাণে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব শক্তি ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবো। এভাবে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবো আরেকটি পর্যায়ে।
তিনি বলেন, সাম্প্রদায়িক শক্তি, সন্ত্রাসী শক্তি, জঙ্গিবাদী শক্তি বিশ্বকে সবসময় একটা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে রাখে। সেই অপশক্তি, অপরাজনীতি এবং দেশবিরোধী শক্তির হাত থেকে বাংলাদেশের গণতন্ত্র, অসাম্প্রদায়িক চেতনা এবং মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ রক্ষা করাই একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, চলতি বছর আওয়ামী লীগের জন্য হবে চ্যালেঞ্জিং। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবিলা করে জনগণকে স্বস্তিতে রাখা এবং উন্নয়ন ও মানবকল্যাণের ধারা অব্যাহত রাখতে চেষ্টা করবে সরকার। আর দল (আওয়ামী লীগ) ব্যস্ত থাকবে দেশবিরোধী অপশক্তি প্রতিহত করে সব শ্রেণি-পেশার নাগরিককে অন্তর্ভুক্তিমূলক অংশগ্রহণের মাধ্যমে আপামর জনতার জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করতে। বিশ্বসেরা রাজনীতিবিদ, পরীক্ষিত উন্নয়নবিদ ও মানবকল্যাণের সফলতম রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার প্রাজ্ঞ নেতৃত্বে হবে আপামর জনতার জাতীয় ঐক্য।
তিনি বলেন, দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা এখন অপরিহার্য। আমাদের দুর্ভাগ্য যে, ১৯৭১ সাল থেকেই কিছু নাগরিক বিভ্রান্ত হয়ে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। তাদের প্রতিহত করে বাংলাদেশকে সফল রাষ্ট্রে উন্নীত করার জন্য স্বাধীনতা সংগ্রামের মহানায়কের কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই। নতুন বছরে আওয়ামী লীগ এসব কাজে মনোনিবেশ করবে বলেও জানান আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন।