বেশ কিছুদিন ধরে একটি খবর চাউর হচ্ছে, ছাত্রদলের কমিটি ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। এই খবরের উৎপত্তিস্থল হিসেবে কখনো বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কথা বলা হচ্ছে; আবার কখনো তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ নেতাদের নাম ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে খবরের সত্যতা যাচাই-বাছাই না করেই ছাত্রদলের বর্তমান ও সাবেক কয়েক নেতা সংগঠনের বর্তমান কমিটি ভাঙতে একাধিক বৈঠকও করেছেন। তারা বেনামে সংগঠনের বর্তমান কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে নানা অভাব-অভিযোগ দাঁড় করানোর চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে।
ছাত্রদলের বিভিন্ন বিষয় দেখভাল করছেন সংগঠনটির সাবেক সভাপতি এবং বিএনপির তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল। তিনি বলেন, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল দেশের সবচেয়ে বড় সংগঠন। এই সংগঠন নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে কথা হবেই। এটা স্বাভাবিক। কিন্তু ছাত্রদলের বর্তমান কমিটি (পূর্ণাঙ্গ) কেবল ছয় মাস হয়েছে। তাদের কার্যক্রম সুন্দরভাবেই চলছে। ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে তারা রাজপথেও আছে। বড় একটি সংগঠন হিসেবে ছাত্রদলে নিজেদের মধ্যে আন্দোলনের কৌশল বা রূপরেখা নিয়ে সমস্যা থাকতে পারে। কিন্তু ছাত্রদলের কমিটি ভাঙার খবর- এটা একটা অপপ্রচার।
জানা গেছে, ‘বিশেষ সিন্ডিকেট’-এর বাইরে গত বছরের ১৭ এপ্রিল কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণকে সভাপতি এবং সাইফ মাহমুদ জুয়েলকে সাধারণ সম্পাদক করে সুপার ফাইভ কমিটি ঘোষণা করা হয়। গত ১১ সেপ্টেম্বর ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। পূর্ণাঙ্গ হওয়ার পর থেকেই কমিটির বিরুদ্ধে দলের একটি অংশ অপতৎপরতা চালায়। ঘোষিত ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটির ৭০-৭৫ জন নেতার বিরুদ্ধে নামে-বেনামে নানা অভিযোগ দেওয়া হয়। এই অভিযোগের তদন্ত ছাড়াই ৩২ জন নেতার পদ স্থগিত করা হয়।
ছাত্রদলের পদ স্থগিত হওয়া একাধিক নেতা বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে একটি বড় ধরনের ষড়যন্ত্র হয়েছে। আমরা দলের কাছে প্রকৃত সত্য তুলে ধরেছি। যতদূর জানি, আমাদের বক্তব্যে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সন্তুষ্ট হয়েছেন। পদ স্থগিত থাকলেও চলমান আন্দোলনে তো আমরা আছি।
বিএনপির প্রভাবশালী এক নেতা বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির বিরুদ্ধে ‘বড় ধরনের’ বিদ্রোহ তৈরির চেষ্টা টের পেয়ে শুরুতেই তা থামিয়ে দিতে ৩২ পদ স্থগিতের সিদ্ধান্ত দেন। এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িতরা গত কয়েক মাস ‘চুপচাপ’ থাকলেও ফের সক্রিয় হয়েছেন। বরং এর সঙ্গে নতুন করে কিছু বিএনপি নেতাও যুক্ত হয়েছেন। তারা নিজেদের তারেক রহমানের লোক হিসেবে দলের মধ্যে পরিচয় দেন।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি রাজধানীর নয়াপল্টনের এক নেতার ব্যক্তিগত অফিসে ও গুলশানে একটি রেস্তোরাঁয় এসব নেতা বৈঠক করেন। উভয় বৈঠকেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরের তৃতীয় শক্তির উত্থান চান- এমন কিছু বিএনপি নেতাও অংশ নেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তারেক রহমানের কৌশলের কাছে তাদের গত সেপ্টেম্বরে কমিটি ভাঙার প্রথম মিশন ব্যর্থ হয়। এর পর উভয় বৈঠকেই অংশ নেওয়া নেতারা দ্বিতীয় মিশন শুরু করেন। ওই বৈঠকে ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল- এই তিন সংগঠনকেই টার্গেট করা হয়। প্রথম টার্গেট হিসেবে বেছে নেওয়া হয় ছাত্রদলকে। ছাত্রদল মিশন সফল হলে যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল নিয়ে এই অংশটি মাঠে নামবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত বছরের জানুয়ারিতে উত্তরায় একটি বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে বিএনপি, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, যুবদলের বেশকিছু নেতা অংশ নেন। এই অভিযোগে ওই বৈঠকে অংশ নেওয়া অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের নতুন কমিটিতে স্থান হয়নি।
এ অবস্থায় ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির সভাপতি শ্রাবণ ও সাধারণ সম্পাদক জুয়েলের বিরুদ্ধে বেনামে কিছু অভিযোগ তোলা হয়। তাতে অভিযোগ করা হয়, যোগ্যদের বাদ দিয়ে বর্তমান কমিটির দুই শীর্ষ নেতা নিজ বলয়ের নেতাদের দিয়ে বিভিন্ন ইউনিট কমিটি গঠন করেছেন এবং করার প্রক্রিয়ায় করছেন। তবে ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির একজন সহসভাপতি বলেন, কোনো কমিটির শীর্ষ পদে কাউকে আনতে গেলে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পূর্ণাঙ্গ অনুমোদন নিতে হয়। এ ছাড়াও স্থানীয় বিএনপির সুপারিশ থাকতে হয়। অতএব এককভাবে কমিটি করার সুযোগ শ্রাবণ বা জুয়েলের পক্ষে সম্ভব নয়।
এ বিষয়ে ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ ও সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রায় একই সুরে বলেন, ছাত্রদল দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বড় সংগঠন। এই সংগঠনের প্রতিটি ইউনিটের শীর্ষ পদের বিপরীতে একাধিক যোগ্য ও মেধাবী পদপ্রত্যাশী থাকেন। এদের মধ্যে একজন সভাপতি ও একজন সাধারণ সম্পাদক করা সম্ভব হয়। বাকিদের মধ্যে সাময়িক কিছুটা ক্ষোভ থাকলেও থাকতে পারে। তবে প্রকৃত ছাত্রদলের সৈনিক যারা, তারা কেউ সংগঠনের ক্ষতি হোক তা চান না। আমরা মনে করি, এই মুহূর্তে ছাত্রদল যে কোনো সময়ের চেয়ে ঐক্যবদ্ধ।