জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৫১তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ। পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে প্রত্যাবর্তন করেন। এর আগে ৮ জানুয়ারি পাকিস্তানের মিয়ানওয়ালি কারাগারে ৯ মাস কারাভোগের পর মুক্তি পান তিনি। সেখান থেকে তিনি লন্ডন যান। পরে দিল্লি হয়ে ঢাকা ফেরেন। দিবসটি পালন উপলক্ষে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠন।
১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু। এতে সর্বস্তরের জনগণকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানানোর পর পাকিস্তানের সামরিক শাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খানের নির্দেশে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করা হয়। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সৈন্যদের বিরুদ্ধে নয় মাস যুদ্ধের পর চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হলেও ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে জাতি বিজয়ের পূর্ণ স্বাদ গ্রহণ করে।
বঙ্গবন্ধু লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দরে পৌঁছেন ১৯৭২ সালের আট জানুয়ারি ভোরে। বেলা ১০টার পর থেকে তিনি ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ ছাড়াও তাজউদ্দিন আহমদ ও ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীসহ অনেকের সঙ্গে কথা বলেন। ব্রিটিশ বিমানবাহিনীর একটি উড়োজাহাজে ৯ জানুয়ারি দেশের পথে যাত্রা করেন বঙ্গবন্ধু। ১০ জানুয়ারি সকালে তিনি নামেন দিল্লিতে। সেখানে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভিভি গিরি, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীসহ সর্বস্তরের মানুষের কাছ থেকে উষ্ণ অভ্যর্থনা পান। মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অকৃপণ সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন বঙ্গবন্ধু।
১০ জানুয়ারি দুপুরে ঢাকা পৌঁছেন বঙ্গবন্ধু। আনন্দে আত্মহারা লাখ লাখ মানুষ ঢাকা বিমানবন্দর থেকে রেসকোর্স ময়দান পর্যন্ত তাকে স্বতঃস্ফূর্ত সংবর্ধনা জানায়। বিকাল পাঁচটায় রেসকোর্স ময়দানে প্রায় ১০ লাখ লোকের উপস্থিতিতে তিনি ভাষণ দেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘আজ আমি বাংলায় ফিরে এসেছি বাংলার ভাইদের কাছে, মাদের কাছে, বোনদের কাছে। বাংলা আমার স্বাধীন, বাংলাদেশ আজ স্বাধীন।’
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন দেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে বাংলাদেশের মাটিতে প্রত্যাবর্তন করেন। এর আগে সরকার পরিচালনা করে অস্থায়ী প্রবাসী সরকার। ১২ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথগ্রহণ করেন। রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করে ২৩ সদস্যবিশিষ্ট আওয়ামী লীগের মন্ত্রিসভা। ১৯৭২ সালের ২৩ মার্চ জারিকৃত প্রেসিডেন্সিয়াল আদেশবলে গণপরিষদ গঠন করে নভেম্বর মাসের মধ্যেই দেশের জন্য একটি সংবিধান উপহার দেওয়া হয় এবং যা ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে এবারও নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে আওয়ামী লীগ। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আজ সকাল সাড়ে ৬টায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবন ও সারাদেশে সংগঠনের সকল কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল সাড়ে ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে রক্ষিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হবে। বিকাল ৩টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে আওয়ামী লীগের আলোচনাসভা। সভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ ছাড়াও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস যথাযথ মর্যাদায় পালনের জন্য বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা, মহানগর, উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে আওয়ামী লীগ এবং সংগঠনের সকল সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন কেন্দ্রীয় কমিটির অনুরূপ কর্মসূচির আয়োজন করবে।