কাল বিএনপির গণঅবস্থান কর্মসূচি

আসছে যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণা

নিজস্ব সংবাদদাতা
  ১০ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:৫১

সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবিতে গণঅবস্থান কর্মসূচির মধ্য দিয়ে আগামীকাল বুধবার বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো যুগপৎ আন্দোলন শুরু করছে। এ নিয়ে দলগুলো ব্যাপক প্রস্তুতিও নিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট দল ও জোট নেতারা জানান। গণঅবস্থান কর্মসূচি থেকে যুগপৎ আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
এই আন্দোলনের মূল দল বিএনপি নতুন কর্মসূচি ঠিক করতে সমমনা দল ও জোটের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। গতকাল সোমবার ১১ দলীয় জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ও ১২ দলীয় জোটের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেছে। এসব বৈঠকে পরবর্তী কর্মসূচি হিসেবে আলোচনায় আছে এক জেলা থেকে আরেক জেলায় লংমার্চ, রোডমার্চ, পদযাত্রা ও পথসভা এবং ২৫ জানুয়ারি ‘বাকশাল দিবস’ পালন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সমমনা দল ও জোটের মতামতের পর পরবর্তী কর্মসূচি চূড়ান্ত করবে বিএনপি। জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায় আমাদের সময়কে বলেন, ‘গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে গণঅভ্যুত্থান ঘটিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটিয়ে দেশে ভোটাধিকার, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা হবে। যত নির্যাতন করা হোক, এখান থেকে পেছনে ফেরার কোনো সুযোগ নেই।’
এদিকে, যুগপৎ আন্দোলনে থাকা জামায়াতের সঙ্গে গত ৩০ ডিসেম্বরের কর্মসূচির পর বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি বলে জামায়াত নেতারা জানিয়েছেন। দলটির নেতারা বলেন, রাজধানী ঢাকার মালিবাগে গত ৩০ ডিসেম্বর গণমিছিলে পুলিশি আক্রমণ করা হলে জামায়াতের বহু নেতাকর্মীকে আহত ও গ্রেপ্তার করা হয়। এ পর্যন্ত বিএনপির
দিক থেকে এ নিয়ে কোনো বিবৃতি দেওয়া হয়নি। এমনকি জামায়াতের সঙ্গে কোনো নেতা যোগাযোগও করেননি। এ নিয়ে জামায়াতের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম আমাদের সময়কে বলেন, ‘এ ঘটনায় জামায়াত নেতাকর্মীদের মাঝে অসন্তোষ আছে। গত ৩০ ডিসেম্বরের পর বিএনপির পক্ষ থেকে কেউই যোগাযোগ করেনি। এর পরও আমরা যুগপৎ আন্দোলনে আছি, দেখা যাক।’
জানতে চাইলে জামায়াতের নায়েবে আমির আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ১১ জানুয়ারি গণতন্ত্র হত্যা দিবস পালন করবে।’ মাওলানা আবদুল হালিম বলেন, ‘১১ জানুয়ারি আমরা বিভাগীয় শহরে আলোচনা সভা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সেখানে যুগপৎ আন্দোলনের ১০ দফাও থাকবে।’
জামায়াতের ঢাকা মহানগর উত্তরের এক নেতা বলেন, ‘যুগপৎ আন্দোলন করব কাদের সঙ্গে? আন্দোলনের মূল দল বিএনপি। তারা কী চায় তা তাদের স্পষ্ট করতে হবে। তারা কী সরকারের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী, নাকি সবার মতামতের ভিত্তিতে আন্দোলন করবে? সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সবার লক্ষ্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটিয়ে নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা করা। ফলে চূড়ান্ত আন্দোলনে যাওয়ার আগে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের বোঝাপাড়া হতে হবে।’
জামায়াতের এক নেতা বলেন, সরকারের দিক থেকে জামায়াত নানা চাপে আছে। যেহেতু তাদের পক্ষে গণঅবস্থান কর্মসূচি করা সম্ভব নয়; সে কারণে গণঅবস্থান কর্মসূচি না করে ১১ জানুয়ারি সেনা সমর্থিত ওয়ান ইলেভেন সরকারের ক্ষমতাগ্রহণের দিনটিকে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করবে জামায়াত।
সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনসহ ১০ দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দল ও জোট। যুগপৎ আন্দোলনের প্রথম কর্মসূচি গত বছরের শেষদিকে ঢাকায় ৩০ ডিসেম্বর ও অন্যান্য জেলা ও মহানগরে ২৪ ডিসেম্বর গণমিছিল করে। যুগপৎ আন্দোলনের দ্বিতীয় দফার কর্মসূচি ও নতুন বছরের প্রথম কর্মসূচি গণঅবস্থান করবে মোস্তফা মোহসীন মন্টু নেতৃত্বাধীন গণফোরাম, ৪ দলের জোট গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য এবং ১৫টি সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত সমমনা গণতান্ত্রিক জোট। যুগপৎ আন্দোলনের প্রথম দফার কর্মসূচিতে ৩২টি রাজনৈতিক দল ও সংগঠন রাজপথে ছিল।
আগামীকাল বুধবার ঢাকাসহ ১০ বিভাগীয় শহরের গণঅবস্থান কর্মসূচি সফল করতে আন্দোলনের মূল দল বিএনপি ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। মূল দল বিএনপি ও অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের জেলা, মহানগর, উপজেলা, পৌর, থানা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড পর্যায়ের বিভিন্ন ইউনিট এরই মধ্যে গণসংযোগ, কর্মিসভা, লিফলেট বিতরণসহ প্রস্তুতিমূলক কর্মকা- প্রায় শেষ করেছে।
এদিকে, দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের জামিনে মুক্ত হওয়ায় নেতাকর্মীদের মাঝে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। এ অবস্থায় ১১ জানুয়ারি নয়াপল্টনে গণঅবস্থান কর্মসূচিতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেবেন। এ ছাড়াও স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মধ্যে কুমিল্লায় ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, সিলেটে গয়েশ্বরচন্দ্র রায়, রাজশাহীতে ড. আবদুল মঈন খান, ময়মনসিংহে নজরুল ইসলাম খান, চট্টগ্রামে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, রংপুরে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যানদের মধ্যে খুলনায় শামসুজ্জামান দুদু, ফরিদপুরে আহমদ আজম খান থাকবেন। এসব কর্মসূচি সফল করতে দফায় দফায় বৈঠক করে নানা দিকনির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।