আওয়ামী লীগের মাঠ দখলে ঘোষণা

নিজস্ব সংবাদদাতা
  ১০ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:৫৪

মিত্রদের সঙ্গে নিয়ে বিএনপি ধারাবাহিক কর্মসূচির মাধ্যমে মাঠ গরম করে রাখছে। এসব কর্মসূচির মধ্য দিয়ে তারা নিজেদের অবস্থান জানান দেওয়ার পাশাপাশি ক্ষমতাসীন দলকে চাপে রাখতে চাচ্ছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ বিএনপির কর্মসূচির বিপরীতে শান্তি সমাবেশ, অবস্থান কর্মসূচি, শোডাউন ও মিছিলের মধ্য দিয়ে মাঠ দখলে রাখার চেষ্টা করছে। এর অংশ হিসেবে আগামীকাল বুধবার বিএনপির ‘গণঅবস্থান কর্মসূচি’র দিনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের রাজধানীর প্রবেশদ্বার ও পাড়া-মহল্লাগুলোতে সতর্কাবস্থানে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ নেতার ভাষ্য- বিএনপির আন্দোলনে বাধা নেই; কিন্তু আন্দোলনের নামে সহিংসতা করলে ছাড় নয়। আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন- রাজধানীর পল্টন, প্রেসক্লাবসহ হাতেগোনা কয়েকটা এলাকা ছাড়া বিএনপিকে রাজধানীতে সেভাবে দাঁড়াতে দেবে না আওয়ামী লীগ। তবে সরাসরি কোনো আক্রমণেও যাবে না দলটির নেতাকর্মীরা। বিএনপি নেতাকর্মীরা মাঠে নামার আগেই তারা মাঠ দখলে রাখার চেষ্টা করবে বলে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাধিকবার বিএনপিসহ অন্যান্য দলকে ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনের আহ্বান জানিয়েছেন। প্রয়োজনে তিনি সহায়তা করবেন বলেও বলেছেন। কিন্তু আন্দোলনের নামে জনগণের জানমাল পোড়ালে কোনো ছাড় দেওয়া হবে বলেও হুশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর এক সদস্য বলেন, বিএনপি ও তার মিত্র দলগুলোকে নিয়ে এবার মাঠে নামছে ভিন্ন কৌশল নিয়ে। তারা অতীতের মতো জ্বালাও-পোড়াও করে আন্দোলন করছে না। তারা চাচ্ছে তাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা হামলা করুক। যদি হামলা করে, তা হলে তা পুঁজি করে তারা অন্য রাজনীতিতে নামবে।
এর আগে ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশ এবং ৩০ ডিসেম্বর দলটির গণমিছিল কর্মসূচির দিনও রাজধানীর পাড়া-মহল্লার প্রতিটি থানা-ওয়ার্ডে সতর্ক পাহারায় ছিল আওয়ামী লীগ। ওই আন্দোলনগুলোতে পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তবে আওয়ামী লীগ বিএনপিকে সেভাবে মুখোমুখি হতে দেখা যায়নি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি ধারাবাহিক কর্মসূচির মধ্য দিয়ে মাঠে থাকবে। এসব কর্মসূচিতে তারা ২০১৪-১৫ সালের মতো যে কোনো সময় সহিংসতায় যেতে পারে, এমন শঙ্কা আওয়ামী লীগের রয়েছে। এ কারণে নেতারা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েই মাঠে থাকবেন।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন  বলেন, বিএনপির এ ধরনের কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ কোনোভাবেই চাপ মনে করছে না। কারণ এ ধরনের কর্মসূচি বিএনপি এর আগেও দিয়েছে। নানা সময়ে নানাভাবে দিয়েছে। তাদের কোনো কর্মসূচিই সফলতার মুখ দেখেনি। তিনি বলেন, ১১ জানুয়ারির বিএনপির কর্মসূচিতে রাজধানীর প্রতিটি পয়েন্টে অবস্থান নেবেন আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এ ক্ষেত্রে দলের সব নেতাকর্মীকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে, যাতে কোনো অরাজকতা করলে সঙ্গে সঙ্গে প্রতিহত করতে পারে।
আওয়ামী লীগের সদ্য নির্বাচিত সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী আমাদের সময়কে বলেন, ‘আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা ভালো না। অতীতে তো জ্বালাও-পোড়াও করে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে- শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী ও আওয়ামী লীগ নেতা কেউ বিএনপির হাত থেকে ছাড় পায়নি। কিন্তু আর বিএনপিকে এ সুযোগ দেওয়া হবে না। যেখানেই অন্যায়, সেখানেই প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ করতে আওয়ামী লীগ বদ্ধপরিকর।’
জানা গেছে, ১১ জানুয়ারি রাজধানীতে শান্তি সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি পালন করবে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। এ ছাড়া ১০ ডিসেম্বর ও ৩০ ডিসেম্বরের মতো প্রতিটি থানা ওয়ার্ডে সতর্ক অবস্থানে থাকবে ক্ষমতাসীন দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান বলেন, ‘১১ জানুয়ারি আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। আমরা সমাবেশের মতো কর্মসূচির কথা ভাবছি। এ কর্মসূচিকে সামনে রেখে তারা বর্ধিতসভা করছে বলেও জানান তিনি।
অন্যদিকে ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের সামনে সকাল ১০টা থেকে দিনব্যাপী সমাবেশ করবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক রিয়াজউদ্দিন রিয়াজ এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ‘কেউ যেন কোনো অরাজকতা সৃষ্টি করতে না পারে, সে জন্য প্রতিটি থানা ওয়ার্ডে আমাদের নেতাকর্মীরা সতর্ক থাকবেন।’
যুবলীগের প্রস্তুতি সভা : অন্যদিকে গতকাল সোমবার বিকালে রাজধানীর খামারবাড়ি মিল্কি অডিটরিয়ামে যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশের নির্দেশ ও ঢাকা মহানগর যুবলীগ উত্তরের উদ্যোগে দেশব্যাপী দেশবিরোধী বিএনপি-জামায়াতের নৈরাজ্য ও তা-ব মোকাবিলায় করণীয় শীর্ষক এক প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিল। সভায় সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর যুবলীগ উত্তরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাকির হোসেন বাবুল এবং সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক মো. ইসমাইল হোসেন। এ সময় আরও বক্তব্য দেন যুবলীগের প্রচার সম্পাদক জয়দেব নন্দী, কার্যনির্বাহী সদস্য তারিখ আল মামুন প্রমুখ।