সাইকেল নিয়ে এভারেস্ট বেজক্যাম্পে গেছেন বাংলাদেশের তাম্মাত বিল খয়ের। বেজক্যাম্প ছাড়াও পার্বত্য এই পথের চারটি পর্বতচূড়ায় আরোহণ ও তিনটি গিরিপথ অতিক্রম করার পরিকল্পনা তাঁর আছে। ইতিমধ্যে পাঁচটিতে সফলও হয়েছেন। ২১ নভেম্বর সকালে তাম্মাতের সঙ্গে কথা বলেছেন সজীব মিয়া
গতকাল এভারেস্ট বেজক্যাম্পে থেকে গোরাকশেপে নেমে এসেছি। বেজক্যাম্পে যাওয়ার পথে শেষ গ্রাম এটি।
প্রথম আলো : কথা শুনে মনে হচ্ছে শ্বাসকষ্টে ভুগছেন?
প্রায় দেড় মাস হিমালয়ে আছি। কয়েক দিন হলো বেশ সর্দি লেগে আছে। অতি উচ্চতায় শারীরিকভাবে কিছুটা দুর্বলও হয়ে পড়েছি।
প্রথম আলো : এই অবস্থায় কালা পাথর সামিট করবেন?
জি, মনটা তো দুর্বল হয়নি। একটু পরই কালা পাথরের উদ্দেশে বের হয়ে যাব। ৫৬৪৪ মিটার উচ্চতার এই পর্বতে আরোহণ করতে পারলে আমার লক্ষ্যের কাছাকাছি চলে যাব।
শুরুতে পরিকল্পনা করেছিলাম সাইকেল নিয়ে এভারেস্ট বেজক্যাম্পে যাব। পরে দেখি, পুরো ট্রেইলে চারটা পর্বত আর তিনটা পাস আছে। সেগুলো আরোহণ ও অতিক্রম করার চিন্তা করলাম। আমার এজেন্সি জানিয়েছিল, এভাবে তো কেউ করে না, অনেক কষ্ট হবে। বললাম, কেউ করে না বলেই তো আমি করব!
প্রথম আলো : অভিযান শুরু করলেন কবে?
১৫ অক্টোবর বাংলাদেশ থেকে নেপালে এসেছি। শুরুতে হিমালয়ের সঙ্গে খাপ খেতে অন্নপূর্ণা বেজক্যাম্প ট্রেকিং করি। এ সময় আমার দুই বন্ধু সঙ্গে ছিল। কাঠমান্ডু থেকে বাইসাইকেলে এভারেস্ট বেজক্যাম্পের উদ্দেশে যাত্রা করি ২৯ অক্টোবর।
প্রথম আলো : তারপর...
৫ নভেম্বর সফরের অষ্টম দিনে ৪০০০ মিটার উচ্চতার পিকে পিক নামের পর্বত প্রথম সামিট করি। এরপর বিশতম দিনে ৫৫৪৬ মিটার উচ্চতার চুখুং রি পর্বত, একুশতম দিনে কংমা লা পাস অতিক্রম করি। এরপর তো পৌঁছালাম এভারেস্ট বেজক্যাম্পে।
এভারেস্ট বেজক্যাম্পে গিয়ে ভীষণ ইমোশনাল হয়ে যাই। ২০১৬ সাল থেকে সাইক্লিং করি। বিভিন্ন সময় বাইসাইকেলে নানা ইভেন্ট করেছি। এর মধ্যে ১৪ দিনে ৬৪ জেলায় গেছি, ভারতের কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত সাইকেল চালিয়েছি। অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস নিয়েই আমার ক্যারিয়ার গড়ার চিন্তা ছিল, সেটা নিয়েই এগোচ্ছিলাম। কিন্তু আমাদের দেশের বাস্তবতায় নিজের শখকে পেশায় রূপান্তর করা খুবই কঠিন। কিন্তু আমি লেগে ছিলাম। এভারেস্ট বেজক্যাম্পে পৌঁছে আমার মনে হয়েছে ৯ বছরের চ্যালেঞ্জে আমি সফল হয়েছি।
প্রথম আলো : কবে নাগাদ অভিযান সম্পন্ন হবে?
৯ ডিসেম্বর আমার ঢাকায় ফেরার ফ্লাইট। ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে অভিযান সম্পন্ন করে কাঠমান্ডু পৌঁছানোর পরিকল্পনা আছে।
প্রথম আলো : আপনার নিজের সম্পর্কে কিছু বলুন
আমাদের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জে। তবে জন্ম ও বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামে। আমার বাবা পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নেয়ামত আলী সিকদার, মা গৃহিণী নুরজাহান বেগম। ছয় ভাই, এক বোনের মধ্যে আমি সবার ছোট।
পাদটীকা: নেপাল সময় ২১ নভেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টায় বাইসাইকেল নিয়ে কালা পাথর চূড়ায় আরোহণ করেন তাম্মাত বিল খয়ের।
সূত্র : প্রথম আলোর