মাদারীপুরে সাবেক সংসদ সদস্য শাজাহান খান ও আবদুস সোবহানকে আদালতে হাজির করার সময় তাঁদের অনুসারীরা ভিড় করেন। রোববার বেলা ১২টায় সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে সামনে
মাদারীপুরে সাবেক সংসদ সদস্য শাজাহান খান ও আবদুস সোবহানকে আদালতে হাজির করার সময় তাঁদের অনুসারীরা ভিড় করেন। রোববার বেলা ১২টায় সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে সামনেছবি: প্রথম আলো
মাদারীপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে কলেজছাত্র দীপ্ত দে ও রাজমিস্ত্রি তাওহীদ সন্ন্যামাত হত্যা মামলায় সাবেক দুই সংসদ সদস্য শাজাহান খান ও আবদুস সোবহান ওরফে গোলাপকে আজ রোববার প্রথমবারের মতো জেলার আদালতে হাজির করা হয়। তাঁদের আদালতে তোলার খবরে সকাল থেকেই আদালত চত্বরে ভিড় করেন আওয়ামী লীগের কয়েক শ নেতা-কর্মী। এ সময় দুজনের মুক্তির দাবি জানিয়ে স্লোগান দেওয়া হয়।
আজ বেলা ১১টার দিকে শাজাহান খান ও আবদুস সোবহানকে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে হাজির করা হলে বিচারক সাজিদ-উল-হাসান চৌধুরী আসামিদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান। শাজাহান খান মাদারীপুর-২ (রাজৈর ও সদরের একাংশ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সোবহান মাদারীপুর-৩ (কালকিনি ও সদরের একাংশ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য। তাঁরা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা।
সরেজমিনে দেখা যায়, পুলিশের কড়া নিরাপত্তার মধ্যে বেলা সাড়ে ১১টায় পুলিশের একটি প্রিজন ভ্যান আদালত চত্বরে এসে পৌঁছালে ভ্যানটিকে ঘিরে ধরেন শাজাহান খান ও সোবহানের অনুসারীরা। প্রিজন ভ্যান থেকে নামার পর শাজাহান খান ও সোবহানকে ফুলের মালা পরিয়ে দেন তাঁরা। এ সময় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের কোনো নেতা-কর্মীদের দেখা যায়নি।
শাজাহান খান ও সোবহানকে আদালতের তৃতীয় তলার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে নেওয়া হলে সেখানেও ভিড় করেন তাঁদের অনুসারীরা। আদালতের কাঠগড়ায় অন্য আসামিদের মতো আলোচিত এই দুই নেতাকে তোলা হয়নি। তাঁদের কাঠগড়ার পাশে দুটি কাঠের চেয়ারে বসতে দেওয়া হয়।
পরে শুনানি শুরু হলে দুজনই দাঁড়িয়ে বিচারকের কাছে নিজেদের নির্দোষ দাবি করে মুক্তির আকুতি জানান। আদালতে কমপক্ষে ৩০ আইনজীবী শাজাহান খান ও সোবহানের পক্ষে জামিনের জন্য আবেদন জানান। ১৫ মিনিট জামিন শুনানি শেষে বিচারক দুজনকেই কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আদালত থেকে শাজাহান খান ও সোবহানকে নামানোর সময়েও তাঁদের ঘিরে মুক্তির দাবি জানান নেতা-কর্মীরা।
মাদারীপুরে আদালত পুলিশের পরিদর্শক আনিসুর রহমান বলেন, ‘সাবেক দুই সংসদ সদস্যকে মাদারীপুরের আদালতে প্রথমবারের মতো তোলা হয়েছে। আদালত চত্বরে যেন কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয়, এ জন্য আমরা তিন স্তরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছি। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই শুনানি শেষে আসামি দুজনকে প্রিজন ভ্যানে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আত্মগোপনে চলে যান আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য শাজাহান খান। গত ৫ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকা থেকে শাজাহানকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
এর আগে ২৫ আগস্ট রাজধানীর নাখালপাড়ার একটি বাসা থেকে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহানকে গ্রেপ্তার করে ঢাকার তেজগাঁও থানার পুলিশ। পরে আওয়ামী লীগ সরকারের আলোচিত দুই নেতাকে ঢাকার বিভিন্ন হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। এবার দীপ্ত দে ও তাওহীদ সন্ন্যামাত হত্যা মামলায় তাঁদের কারাগারে পাঠানো হলো।
মাদারীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ্ আল মামুন বলেন, মাদারীপুরে আলোচিত দুটি হত্যা মামলায় শাজাহান খান ও আবদুস সোবহানকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করা হয়। তাঁরা আগামী শুনানিতে এই দুই আসামির রিমান্ডের জন্য আদালতের কাছে আবেদন জানাবেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবী নাফিজ ইকবাল বলেন, শাজাহান খান ও আবদুস সোবহান গোলাপকে মাদারীপুরে যে দুটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে, সে সময় তাঁরা মাদারীপুরে ছিলেনই না। তবুও রাজনৈতিক কারণে তাঁদের আসামি করা হয়। তাঁরা আদালতে দুই আসামির জামিনের জন্য আবেদন জানালে বিচারক দুজনের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।