২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা

দ্বিতীয়বার জবানবন্দিতে সাজা ৪০০ বছরের ইতিহাসে নেই: শিশির মনির

ডেস্ক রিপোর্ট
  ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩:৩৯

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলায় দণ্ডিত সব আসামিকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট। তবে, মামলায় দ্বিতীয়বার জবানবন্দি দিয়ে আসামিদের সাজা দেওয়ার ঘটনা ৪০০ বছরের ইতিহাসে ভারতীয় উপমহাদেশে ঘটেনি বলে দাবি করেছেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির।
এই আইনজীবী বলেন, দ্বিতীয়বার জবানবন্দি দিয়ে ৪০০ বছরে কাউকে সাজা দেওয়ার নজির নেই।
রোববার (১ ডিসেম্বর) এই মামলার রায় ঘোষণার পর আইনজীবী শিশির মনির এসব কথা বলেন।
শিশির মনির বলেন, বিচারিক আদালতে যে বিচারটা করেছিল সেটা ছিল অবৈধ। আইনের ভিত্তিতে বিচার হয়নি। সাক্ষীদের মধ্যে কোনো কোলাবোরেশন নেই। শোনা সাক্ষীর ওপর ভিত্তি করে সাজা দেওয়া হয়েছে। এজন্য সবার আপিল মঞ্জুর করে ডেথ রেফারেন্স রিজেক্ট করে বেকসুর খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট। তারেক রহমানসহ লুৎফুজ্জামান বাবর এবং সবাইকে মামলা থেকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন।
তিনি বলেন, হাইকোর্ট তারেক রহমানসহ যারা আপিল করতে পানেনি সবাইকে খালাস দিয়েছেন। এটাও নজিরবিহীন বলে জানিয়েছেন অন্য আইনজীবীরা।
শিশির মনির বলেন, এই মামলার ২২৫ জন সাক্ষীর কেউ বলেননি কে গ্রেনেড মেরেছে বা তারা কেউ মেরেছে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এ মামলার বিচার করা হয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে কে সংশ্লিষ্ট তা দেখাতে হবে। ভারতীয় উপমহাদেশের ৪০০ বছরের ইতিহাসে দ্বিতীয় স্বীকারোক্তি ও দ্বিতীয় চার্জশিটের ভিত্তিতে কাউকে সাজা দেওয়া হয়নি।
আদালত কোনো পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আদালত পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন এই বলে, এ ধরনের মামলায় পরস্পর কেউ দেখেছেন, কেউ স্বচক্ষে দেখেছেন, এই মর্মে কোনো এভিডেন্স নেই। যাদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে, তাদের টর্চার করে জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, একই সঙ্গে মুফতি হান্নান দুটি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আমরা বলেছিলাম, ৪০০ বছরের ইতিহাসে ভারতীয় উপমহাদেশে দ্বিতীয় জবানবন্দির ওপর ভিত্তি করে কাউকে সাজা দেওয়ার নজির নেই। আজ আদালত বললেন, দ্বিতীয় জবানবন্দি তিনি যেটি করেছিলেন, সেটিও পরে তিনি প্রত্যাহার করেন। এজন্য এ জবানবন্দির কোনো আইনগত ভিত্তি নেই।
বিচারিক আদালতে আইনের ভিত্তিতে বিচারটা হয়নি: শিশির মনির
হাইকোর্টের রায়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে: রিজভী
রায় ঘোষণার পর আসামিপক্ষের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান বলেন, ২০০৮ সালে এই মামলার শুরু থেকে আজ পর্যন্ত ১৬ বছর আমি এটির সঙ্গে আছি। আজ হাইকোর্টে মামলাটি নিষ্পত্তি হলো। আমরা আদালতকে ধন্যবাদ জানাই। আমরা ন্যায়বিচার পেয়েছি। সাক্ষ্য এবং আইন, কোনো দিক থেকেই বিচারিক আদালতে মামলা প্রমাণিত হয়নি।
আদালত তার রায়ে বলেছেন, শুধু স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির ওপর ভিত্তি করে অন্য আসামিদের সাজা দেওয়া যায় না। একই সঙ্গে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির ওপর ভিত্তি করে ষড়যন্ত্র প্রমাণ করা যায় না।
আইনজীবী শাহজাহান বলেন, মুফতি হান্নানের প্রথম স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির ওপর ভিত্তি করে প্রথম চার্জশিট দেওয়া হয়েছিল। সেখানেও জবানবন্দির বাইরে আর কোনো তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি। দ্বিতীয় চার্জশিটে তারেক রহমান, লুৎফুজ্জামান বাবর, কাজী কায়কোবাদসহ অন্যান্য যাদের আনা হয়েছিল তাদের বিষয়েও স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ছাড়া আর কোনো এভিডেন্স নেই।
এই দুই জবানবন্দিই মুফতি হান্নান জীবদ্দশায় প্রত্যাহার করে গেছেন। ফলে প্রত্যাহার করা জবানবন্দি ও পরবর্তীতে যদি আর কোনো এভিডেন্স না থাকে, তাহলে সাজা দেওয়া যায় না। যে আসামি জবানবন্দি দিয়েছেন, তিনি বেঁচে থাকলে তাকেও সাজা দেওয়া যেতো না।
দ্বিতীয় চার্জশিট নিয়ে আইনজীবী এস এম শাহজাহান বলেন, যেটা রয়েছে, সেটা নিয়েও প্রশ্ন আছে। সাধারণত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা যদি নতুন কোনো তথ্য-প্রমাণ পায়, তাহলে তিনি নতুন চার্জশিট দিতে পারেন। তবে এখানে রাষ্ট্রপক্ষের পাবলিক প্রসিকিউটরের আবেদন মঞ্জুর করে নতুন করে তদন্তে পাঠানো হয়। এই তদন্তের দ্বিতীয় চার্জশিট আসার পর কোনো ম্যাজিস্ট্রেট এটা আমলে নেননি। এটা সরাসরি ১৯৩ ধারায় বিচারিক আদালত আমলে নিয়েছেন।
হাইকোর্ট রায়ে বলেছেন, দ্বিতীয় একটি চার্জশিট এসেছে। তবে আমরা এটা আমলে নিতে পারছি না। কারণ, এই মামলায় সেকেন্ড চার্জশিটের ক্ষেত্রে ১৯১বি প্রযোজ্য হয়নি। ফলে দ্বিতীয় চার্জশিট হাইলি ইলিগ্যাল। এটা আইনের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য নয়। দ্বিতীয় চার্জশিটও গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, সেটা শুধু মুফতি হান্নানের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির ওপর ভিত্তি করে দেওয়া হয়েছিল।
এই জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আরও বলেন, ২২৫ জন সাক্ষীর মধ্যে তদন্ত কর্মকর্তা ও ম্যাজিস্ট্রেট বাদে একজনও বলেননি, গ্রেনেড মারতে দেখেছি বলেছে। এমন কোনো সাক্ষ্য নেই। অথবা কোনো স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতেও এমন কেউ বলেনি যে আমি গ্রেনেড মেরেছি বা আমি গ্রেনেড মারতে দেখেছি। ফলে এখানে ৩০২ ধারা কার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে? প্রকৃত খুনি কে, সেটা স্পষ্ট করা নেই।
তিনি বলেন, অপরাধের গুরুত্ব বা নৃশংসতা যতই হোক না কেন, আসামিকে যদি একটি মামলায় আনতে হয়, তার সংশ্লিষ্টতা কতটুকু সেটা দেখতে হবে। ২১ আগস্টে এই ঘটনাটা হয়েছে, এই ঘটনার আমরা নিন্দা জানাই। কিন্তু রাজনৈতিকভাবে এই মামলার তদন্ত হয়ে যে অভিযোগপত্র এলো, গত ১৬ বছর যে ট্রায়াল আমরা দেখলাম, তাতে হাইকোর্ট সব আসামিকে খালাস করে দিয়েছেন। আদালত রায়ে তারেক রহমান, কাজী কায়কোবাদসহ যারা আপিল করেননি এমন আসামিদেরও খালাস করে দিয়েছেন। আমারা কোর্টের কাছে কৃতজ্ঞ। আমাদের মফস্বল কোর্টে একটা কথা আছে নথি শুদ্ধ খালাস। আজ আমাদের ডিফেন্স টিমের কাছে সবচেয়ে আনন্দ লাগছে, ১৬ বছরের পরিশ্রম সফল হয়েছে। মামলাটি নথি শুদ্ধ খালাস হয়েছে।