মুয়ীদ চৌধুরীর অপসারণ চাইলেন প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা

ডেস্ক রিপোর্ট
  ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০৪

আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধানের পদ থেকে মুয়ীদ চৌধুরীর অপসারণ চাইলেন প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তারা। বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের উপসচিব পদে পদোন্নতির কোটা পুনর্বিন্যাসের খসড়া সুপারিশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সভা করেছেন প্রশাসন ক্যাডারের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তারা।
‘জনপ্রশাসন সংস্কারকে ভিন্নপথে পরিচালিত করে দেশকে অস্থিতিশীল করার গভীর ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে’ তারা এ প্রতিবাদ সভা করেন।
প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন এবং বিসিএস (প্রশাসন) কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড যৌথভাবে এ প্রতিবাদ সভার আয়োজন করেছে।
বিসিএস (প্রশাসন) কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি এ বি এম আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘এ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার জন্য এসেছি। তখন আমাদের দুই ব্যাচমেট অনুরোধ করেছিলেন আজকের কর্মসূচি থেকে যেন আমরা কোনো কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা না করি। আমাদের মনে হলো আজকের প্রতিবাদ অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে কাজ শুরু করেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমি একটি প্রস্তাব দিয়ে রাখি- আপনারা সম্মতি দিলে আগামী ৪ জানুয়ারি আমরা একটা মহাসমাবেশ ডাকতে পারি। যেখানে ৫০০ পাওয়ারের অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হবে। আজ হলো ২০০ পাওয়ারের, ওই দিন দেওয়া হবে ৫০০ পাওয়ারের। তাহলে মনে হয় আর অপারেশনের দরকার হবে না।’
‘আজকে আমাদের আন্দোলনটা শুরু। বিসিএস পরিবারটাকে বাঁচানোর জন্য হয়ত আমাদের আরও কষ্ট করতে হবে। আমরা কলম বিরতি, অনশন কর্মসূচিও ঘোষণা করতে পারি।’
আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘দুটি বিষদাঁত অঙ্কুরিত হয়েছে। এ বিষ দাঁত উপড়ে ফেলতে হবে। একটা বিষ দাঁত হলো মুয়ীদ (জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী) ভাই। তিনি ব্যক্তিগত ও পারিবারিকভাবে একজন কলঙ্কিত ব্যক্তি। চাকরিজীবী ও সুবিধাভোগী হিসেবে তিনি বিতর্কিত একজন কর্মকর্তা। তিনি পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসের একজন কর্মকর্তা। তিনি নিজের জন্ম ভুলে গেছেন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মুয়ীদ ভাইয়ের অপসারণ চাই। সরকার যদি অপসারণ না করে কীভাবে অপসারণ করতে হবে সেই কৌশল আমাদের জানা আছে।’
গত ১৭ ডিসেম্বর সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী জানান, উপসচিব পুলে প্রশাসন ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ কোটা রেখে অন্যান্য ২৫টি ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ পরীক্ষার ভিত্তিতে নিয়োগ এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্যাডারকে সিভিল সার্ভিস হতে আলাদা করার সুপারিশ করা হবে।
বর্তমান বিধিমালা অনুযায়ী, উপসচিব পদে প্রশাসন ক্যাডারের ৭৫ শতাংশ এবং অন্য সব ক্যাডারের ২৫ শতাংশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দেওয়া হয়।

কমিশন অযাচিত সুপারিশ করলে কঠোর কর্মসূচি
প্রতিবাদ সভায় বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আনোয়ার উল্ল্যাহ ছয় দফা ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, ‘প্রথমত, আমরা এক আছি, এক থাকবো। দ্বিতীয়ত, আমরা প্রশাসন ক্যাডারের ওপর কোনো রকমের সার্জারি বা কোটা আরোপ করতে দেবো না। তৃতীয়ত, কমিশন কোনো অযাচিত সুপারিশ করলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে। চতুর্থত, প্রশাসনে কোনো পর্যায়ে অন্ধভাবে বহিরাগত কাউকে বসানোর চেষ্টা হলে তা কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে। পঞ্চম, পদোন্নতি ও পদায়নের ক্ষেত্রে বঞ্চিত কর্মকর্তাসহ সব ধরনের কর্মকর্তাকে সম্মানজনক অবস্থান তৈরি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে অবিলম্বে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ষষ্ঠ, দেশকে কোনোভাবে অস্থিতিশীল করার জন্য যে কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করার জন্য প্রশাসন সারা দেশে সতর্ক থেকে দায়িত্ব পালন করবে।’
বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমানের সঞ্চালনায় প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য দেন- প্রশাসনের ১৯৭৩ ব্যাচের কর্মকর্তা মাহমুদ হোসেন আলমগীর, ১৯৭৯ ব্যাচের এস এম জহিরুল ইসলাম, ১৯৮১ ব্যাচের হেলালুজ্জামান, ১৯৮৪ ব্যাচের এম এ খালেক, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এ এস এম সালেহ আহমেদ, ১৯৮৫ ব্যাচের মোহাম্মদ মসিউর রহমান, ১৯৮৬ ব্যাচের মো. জাকির হোসেন কামাল, ঢাকার জেলা প্রশাসক তানভীর আহমেদ, উপসচিব নূরুল করিম ভুঁইয়া, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিএফইউজে) মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি শহীদুল ইসলাম, দৈনিক যুগান্তরের উপ-সম্পাদক বি এম জাহাঙ্গীর প্রমুখ।