দেশের কয়েকটি জেলার বোরো ধানক্ষেতে ব্লাস্ট রোগের সংক্রমণ দেখা দিয়েছিল। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন কৃষকরা। এরই মধ্যে টানা তাপ প্রবাহে বোরো ক্ষেতে ‘হিট শকের’ শঙ্কার কথা জানালেন তারা। এমন পরিস্থিতে বোরো ধানের ফলন কম হওয়ার আশঙ্কায় দিশেহারা কৃষকরা।
কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামের বিভিন্ন উপজেলার ধানক্ষেতে ব্লাস্ট রোগের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। শীষ আসার আগমুহূর্তে এই সংক্রমণ দেখা দেওয়ায় দিশেহারা কৃষকরা। এর সঙ্গে চলমান তাপ প্রবাহে হিট শকের ঝুঁকির কথা জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।
কৃষি বিভাগ বলছে, দিনে প্রচণ্ড তাপ প্রবাহ এবং রাত ও ভোরে তুলনামূলক আবহাওয়া ব্লাস্ট সংক্রমণের জন্য অনুকূল। বিচ্ছিন্নভাবে জেলার কয়েকটি উপজেলায় ব্রি-২৮ ও ব্রি-৮১ জাতের ধান ক্ষেতে ব্লাস্ট রোগ দেখা দিলেও তা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে চলমান তাপ প্রবাহে হিট শকের ঝুঁকি রয়েছে। এটি নিয়ন্ত্রণে ধানক্ষেতে পর্যাপ্ত পানি রাখার পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ।
জেলা সদরের পৌর এলাকার কয়েকটি জমিতে গিয়ে দেখা গেছে, ধান গাছে শীষ আসলেও বেশিরভাগ অংশ পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। দেখতে পাকার মতো মনে হলেও সেসব শীষের ভেতর দানা নেই।
কৃষকরা বলছেন, সময়মতো ওষুধ ও সার দেওয়ার পরও ব্লাস্ট রোগের সংক্রমণ থেকে তারা ফসল রক্ষা করতে পারেননি। সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লেও কৃষি বিভাগ থেকে কোনও সহায়তা পাননি।
সদর উপজেলার কৃষ্ণপুর জিগাবাড়ি ঘাট এলাকার কৃষক সোহাগ বলেন, ‘আমার ৬০ শতকের দুটি জমিতে ব্রি-৮১ জাতের ধান লাগাইছি। দুটি জমির ধান ব্লাস্টে নষ্ট হয়ে গেছে। শীষে সব চিটা, দানা নেই।’
কুড়িগ্রাম পৌর এলাকার পাইকপাড়া গ্রামের ব্যবসায়ী ফরিদ হোসেন জানান, তার ৬০ শতক জমির বেশিরভাগ ধান ব্লাস্ট রোগে নষ্ট হয়ে গেছে। শুধু তিনি নন, তার এলাকার আরও অনেকের জমির ধান ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়েছে। যারা ব্রি-২৮ কিংবা ব্রি-৮১ জাতের ধান লাগিয়েছেন, সবার একই অবস্থা।
ফরিদ বলেন, ‘কৃষি বিভাগের লোকজন মাঠে আসেন না। আমরা তাদের দেখাও পাই না। চারা রোপণের পর নিয়মিত সার ও কীটনাশক দিয়েছি। কিন্তু শীষ আসার পর ব্লাস্ট আক্রান্ত হয়ে সব শেষ। এলাকায় অনেকের একই অবস্থা।’
তাপমাত্রা বাড়ায় এই সংক্রমণ হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে কৃষকরা বলছেন, তাপ প্রবাহ শুরুর আগেই সংক্রমণ দেখা দিয়েছিল। এখন তাপ প্রবাহে সংক্রমণ বেশি ছড়াচ্ছে।
রৌমারী, রাজারহাট ও চিলমারী উপজেলাসহ প্রায় সব উপজেলায় কমবেশি সংক্রমণের খবর পাওয়া গেছে। তবে রৌমারীতে সংক্রমণের হার বেশি। রৌমারী সদর ইউনিয়নের পশ্চিম মাদারটিলা গ্রামের কৃষক আব্দুল হান্নান বলেন, ‘আমার ৩০ শতক জমিতে ব্লাস্ট সংক্রমণ হয়েছে। ওষুধ দিয়া কাম হয় নাই। কৃষি বিভাগের কেউ মাঠে আসে না, কোনও পরামর্শও পাই নাই। এই গ্রামে অনেকের একই অবস্থা।’
তবে জেলায় বোরো মৌসুমে ব্লাস্ট রোগের সংক্রমণ হলেও তা সীমিত এবং নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে দাবি কৃষি বিভাগের। কর্মকর্তারা বলছেন, বিচ্ছিন্নভাবে জেলার বিভিন্ন এলাকার কিছু ক্ষেতে ব্লাস্ট সংক্রমণ হয়েছে। বিষয়টি নজরে আসার পর কৃষি বিভাগ থেকে ভুক্তভোগী কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ফলে রোগটি নিয়ন্ত্রণে আছে।’
কৃষি বিভাগ জানায়, চলতি মৌসুমে জেলায় এক লাখ ১৬ হাজার ৯১০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ১২ দশমিক ৭৫ হেক্টর জমির ধান ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে শুধু রৌমারী উপজেলায় প্রায় ৪ হেক্টর জমির ধান ব্লাস্টে আক্রান্ত হয়েছে। এই রোগে আক্রান্ত গাছের শীষের গোড়া কালো হয়ে যায়, যাকে গিট ব্লাস্ট বলে। ফলে আক্রান্ত শীষের ওপরের অংশে খাদ্য সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। তখন শীষটি দ্রুত শুকিয়ে যায়। চলমান তাপ প্রবাহে ব্লাস্টের চেয়ে হিট শকের ঝুঁকি বেশি। এজন্য প্রতিটি ধানের জমিতে দুই থেকে তিন ইঞ্চি পানি রাখতে হবে, যেন হিট শক এড়ানো যায়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর কুড়িগ্রামের উপপরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত বলেন, ‘ব্লাস্টের যে সংক্রমণ তা বিগত সময়ের তুলনায় সীমিত। আশা করছি, এটা আর বাড়বে না। তবে যে তাপমাত্রা চলছে তাতে হিট শকের ঝুঁকি রয়েছে। এ জন্য কৃষকদের ধানের জমিতে পর্যাপ্ত পানি রাখার পরামর্শ দিচ্ছি। এতে হিট শক এড়ানো যাবে।’
রাজশাহীতে এখন তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রির ওপরে। এ অবস্থায় ধানে ধরেছে ব্লাস্ট রোগ। এতে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকেরা। উপজেলার তেঁথুলিয়া, নওটিকা, ধন্দহ ও অমরপুর এলাকায় এই সমস্যা বেশি দেখা দিয়েছে।
কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা ওষুধ নিয়ে এসব এলাকার মাঠে দৌড়ঝাঁপ শুরু করে দিয়েছেন। তারা এই সময় জমিতে পানি জমিয়ে রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন। কিন্তু দিনের বেলায় নলকূপে পানি ঠিকমতো উঠছে না। সারা রাত পানি দিয়েও সব জমি ভেজানো যাচ্ছে না। এই সংকটে অনেক কৃষকের জমির ধান চিটা হয়ে যাচ্ছে।
বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, ‘ধানের শিষ বের হওয়ার সময় তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রির ওপরে উঠলে ধান চিটা হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। পুরো জেলাতে এখন তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রির ওপরে। অনেকের জমিতেই পানি নেই। অথচ এই সময়ে পানি জমিয়ে রাখার প্রয়োজন ছিল। এভাবে তাপমাত্রা থাকলে হিট শকের ঝুঁকি আছে।’
সুনামগঞ্জ :
সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার বড় ঘোড়াডোবা ও ছোট ঘোড়াডোবা হাওরে বোরো ক্ষেতে ব্লাস্ট রোগের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বোরো ধানের ফলন কম হওয়ার আশঙ্কায় হতাশা প্রকাশ করেছেন কৃষকরা।
ধর্মপাশা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ধর্মপাশা ও মধ্যনগর উপজেলায় এবার ৩১ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে মধ্যনগর উপজেলার ছোট ঘোড়াডোবা ও বড় ঘোড়াডোবা হাওরে ৩৭৪ হেক্টর জমিতে ব্রি-২৮, ২৯, ৮৮, ৮৯ ও বিভিন্ন হাইব্রিড জাতের ধানের আবাদ করা হয়। এর মধ্যে ওই দুই হাওরের ব্রি-২৮ ধানের ক্ষেতে ব্লাস্ট রোগের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মীর হাসান আল বান্না বলেন, ‘দিনে গরম ও রাতে ঠান্ডা আবহাওয়ার কারণে ব্লাস্ট রোগ দেখা দেয়। সংক্রমণের শুরুতেই প্রতিষেধক দিলে রোগ প্রতিরোধ করা যায়। অনেক কৃষক ব্লাস্ট দেখা দিলেও গুরুত্ব দেন না। রোগ দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে।’
ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ধান ক্ষেতে ব্লাস্ট রোগের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। এতে ধানের শীষ শুকিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে ব্রি-৬৩ ধানে এই রোগ বেশি দেখা দিয়েছে। ধান নষ্ট হয়ে যাওয়ায় দিশেহারা কৃষকরা।
তবে ধানের এ সমস্যার কথা জানেন না সংশ্লিষ্ট এলাকার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা। বিষয়টি তাদের জানালে খোঁজ নিয়ে দেখবেন বলেন তারা।
চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১৫ হাজার ৭১৫ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ব্রি ধান-৬৩ চাষ হয়েছে তিন হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে।
ঝিনাইদহ :
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কালীগঞ্জ উপজেলার রায়গ্রাম ইউনিয়নের খামারমুন্দিয়া গ্রামে তরিকুল ইসলামের এক বিঘা, দলিল উদ্দীনের এক বিঘা, মোমিন উদ্দীনের দুই বিঘাসহ ওই এলাকার বেশ কিছু জমির ধানের শীষ শুকিয়ে যাচ্ছে। একইভাবে ইউনিয়নের রায়গ্রামের মাঠে তপন কুমার মন্ডলের আট শতক ও পরিতোষ ঘোষের এক একর জমির ধান শুকিয়ে যাচ্ছে। ৫ নম্বর শিমলা-রোকনপুর ইউনিয়নের মনোহরপুর গ্রামের মনজের আলীর দুই বিঘা ধান শুকিয়ে যাচ্ছে।
রায়গ্রাম ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জাকারিয়া রায়হান বলেন, ‘অতিরিক্ত গরমের কারণে ধান শুকয়ে চিটা হয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে আমরা কৃষকদের পরামর্শ দেবো।’
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাহবুব আলম রনি বলেন, ‘কোনও কৃষক আমাদের বিষয়টি জানাননি। তবে গরমের কারণে এমনটি হয়েছে।
কৃষকদের সঙ্গে কৃষি কর্মকর্তাদের যোগাযোগ নেই এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কারও সঙ্গে দেখা না হওয়া স্বাভাবিক।’
মৌলভীবাজার : মৌলভীবাজারে বোরো ধানে আক্রমণ করেছে ব্লাস্ট রোগ। জেলার কুলাউড়া, বড়লেখা, জুড়ী, হাকালুকি হাওর, সদর উপজেলার কাউয়াদিঘি হাওর এবং শ্রীমঙ্গল উপজেলার হাইল হাওরের ক্ষেতে ছড়িয়ে পড়েছে এই রোগ। ফলে চিটা হয়ে গেছে ধান। হাকালুকি হাওর ও কাউয়াদিঘি হাওর, হাইল হাওরের কৃষকরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এর মধ্যে হাইল হাওরের কৃষকরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ বছর উপজেলায় ১১ হাজার ৪৫১ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ব্রি-২৮ ধান আবাদ হয়েছে দুই হাজার ৬৫১ হেক্টর জমিতে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ উজ্জ্বল সূত্রধর বলেন, ‘যেভাবে কৃষকরা দাবি করছেন তা সঠিক নয়। আমাদের মাঠ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী কিছু জমিতে ব্লাস্ট রোগে আক্রমণ করেছে। এক মাস আগে এই রোগ যখন দেখা দিয়েছিল, তখন কৃষকদের পরামর্শ দিয়েছিলাম। কিন্তু কৃষকরা সঠিকভাবে তা পালন করেননি।’
শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মহিউদ্দিন বলেন, ‘ব্রি-২৮ জাতের ধান রোপণে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করা হয়েছিল। ব্রি-২৮ অনেক পুরাতন একটি জাত। এটির পরিবর্তে ব্রি-৮৮ বা ব্রি-৮৯ চাষের জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। এরপরও কৃষকরা দুই হাজার ৬৫১ হেক্টর জমিতে ব্রি-২৮ ধান রোপণ করেন। যার মধ্যে বেশিরভাগই এখন ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। উপজেলা পরিষদের সভা হবে। সেখানে সিদ্ধান্ত হবে ক্ষতিগ্রস্তদের কীভাবে প্রণোদনার আওতায় আনা যায়।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক শামছুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ব্লাস্ট রোগে অনেকের ধান নষ্ট হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে প্রণোদনার আওতায় আনা হবে।’
পটুয়াখালী : প্রতি বছর বোরো ধান আবাদ করে সংসার চালিয়ে আসছিলেন পটুয়াখালীর কৃষক মিন্টু রায়। এবার ব্যাংক ও এনজিও থেকে লোন নিয়ে ২৭০ শতাংশ জমিতে ‘ইরি-২৮’ ধান আবাদ করেন। আশা ছিল সংসারের চাহিদা মিটিয়ে লোন পরিশোধ করবেন। কিন্তু মিন্টুর সেই আশায় গুড়েবালি। ব্লাস্ট রোগের সংক্রমণ দেখা দেওয়ায় তার ক্ষেতের অধিকাংশ ধান এখন চিটা। এতে লোন পরিশোধ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। এ অবস্থায় হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন কলাপাড়া উপজেলার লতাচাপলি ইউনিয়নের মম্ভিপাড়া গ্রামের এই কৃষক।
তিনি ছাড়াও একই ইউনিয়নের পোলগোজা গ্রামের কৃষক ব্রোঞ্জ মন্ডলের ১৮০ শতাংশ, হারুন মিয়ার ১০০ শতাংশ এবং জলিল মিয়ার ৫০ শতাংশ জমির ধান ব্লাস্টের আক্রমণে চিটা হয়ে গেছে। এ ছাড়া কলাপাড়া উপজেলার অনেক কৃষকের জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে। এতে কৃষকরা চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
পটুয়াখালী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘জেলায় বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৭ হাজার ৭৫০ হেক্টর আর উৎপাদন হয়েছে ১৯ হাজার ২৫০ হেক্টর। গরম আবহাওয়ার কারণে ব্লাস্ট রোগের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি আমরা।’
পটুয়াখালী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘গরম আবহাওয়ার কারণে ধানে ব্লাস্ট রোগের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে।’
পাতা ব্লাস্ট: ধানের পাতায় প্রথমে ছোট ছোট ধূসর বা সাদা বর্ণের দাগ দেখা যায়। দাগগুলোর মাঝখানে ধূসর চারদিক গাঢ় বাদামি ও মাটির বর্ণের হয়ে থাকে। পরবর্তীতে এই দাগ ধীরে ধীরে বড় হয়ে আঁইশে চোখের আকৃতি ধারণ করে। অনেক দাগ একত্রে মিশে পুরো পাতাটাই মেরে ফেলতে পারে। ফলে পাতায় খাদ্য উৎপাদন কমে যাওয়ায় ফলন কম হয়। আবার পাতা ভেঙে পড়ে ফলন বিনষ্ট হয়।
গিঁট বা নোড ব্লাস্ট: গিঁট বা নোডে পচন সৃষ্টি হয়। ধান গাছের ওখান থেকে শীষ বা থোড় বের হওয়ার পর শুকিয়ে চিটা হয়ে যায়। গিঁটে কালো রঙের দাগ সৃষ্টি হয়। ধীরে ধীরে এই দাগ বেড়ে গিঁট পচে যায়।
নেক বা শীষ ব্লাস্ট: এতে ঘাড়ে পচে যায়। এই রোগ হলে শীষের গোড়া অথবা শীষের শাখা-প্রশাখার গোড়ায় কাল দাগ হয়ে পচে যায়। শীষ অথবা শীষের শাখা-প্রশাখা কেটে কেটে পড়ে যায়। ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করলে এই রোগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।
হিট শক কী এবং করণীয় : ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি তাপমাত্রা ধানের জন্য অসহনীয়। শীষ আসার সময় এই তাপমাত্রা বিরাজ করলে ধান চিটা হয়ে যায়। একে বলে হিট শক।
কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, যখন তাপ প্রবাহ হয় এবং বৃষ্টি না থাকে তখন ধানের জন্য হিট শক হয়। বৃষ্টিহীন তাপ প্রবাহের সময় ধানের শীষ এলে তা শুকিয়ে যায়। এ অবস্থা দেখা দিলে বোরো ধানের জমিতে পর্যাপ্ত পানি ধরে রাখতে হবে।