সৌদির আরামকো তিনবার এসেছিল, প্রত্যাশিত স্বাগত পায়নি : সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত

ডেস্ক রিপোর্ট
  ০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ২৩:১৯

সৌদি আরবের রাষ্ট্রায়ত্ত তেল-গ্যাস উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান আরামকো, বাংলাদেশে বিপুল অর্থ বিনিয়োগের চেষ্টায় বারবার উদ্যোগী হলেও সফল হতে পারেনি। ২০১৬ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিনিধিদল তিনবার বাংলাদেশ সফর করলেও প্রত্যাশিত স্বাগত পায়নি। তবুও, বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ জ্বালানি উৎপাদনকারী এই প্রতিষ্ঠানটি এখনও বাংলাদেশে তেল শোধনাগার নির্মাণে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করে চলেছে।
রোববার (৫ জানুয়ারি) ঢাকায় নিযুক্ত সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত ঈসা ইউসুফ ঈসা আলদুহাইলান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক আলোচনায় এমন অভিযোগ করেছেন।
সৌদি রাষ্ট্রদূত ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আজ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ‘সৌদি-বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি: প্রবণতা, মূল চ্যালেঞ্জ এবং দীর্ঘমেয়াদি সম্ভাবনা’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন। সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্ভাবনার বিষয়ে নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জের সহায়তায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ওই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে। কোনো দেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনা নিয়ে মন্ত্রণালয় এবারই প্রথম কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করা হলো।
সৌদি রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আরামকোর উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল ২০১৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত তিনবার বাংলাদেশে এসেছিল, কিন্তু তাদের কেউ স্বাগত জানায়নি। যখন তারা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, মন্ত্রী, সচিব ও আমলাদের কাছে যায়— তাদের পথ আটকে দেওয়া হয়। কারণ, কিছু লোক ছিলেন যারা শুধু নিজেদের স্বার্থটাই দেখেছেন। কিন্তু আমরা অতীত নিয়ে কথা বলব না। আমরা ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলব।’
তিনি বলেন, আরামকো বাংলাদেশে আসতে আগ্রহী। সংস্থাটির বঙ্গোপসাগরে একটি তেল শোধনাগার স্থাপন করতে চায়। এখানে একটি তেল শোধনাগার থাকলে এবং তেলজাতীয় পণ্য উৎপাদন করলে সেখান থেকে বাংলাদেশ ও এই অঞ্চলে পণ্য সরবরাহ করতে পারবে।
রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, ‘যদি আমরা চট্টগ্রাম থেকে জেদ্দা বা দাম্মামের মধ্যে একটি সুমদ্রপথ তৈরি করতে পারি, তবে সেটি বাংলাদেশ ও এই অঞ্চলে বড় ধরনের পরিবর্তন আনবে। এই তেল শোধনাগারের পণ্য চীন, ভারত ও প্রতিবেশী দেশগুলোতে পাঠানো সম্ভব।’
একই অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তৃতায় পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছি, আমাদের দেশ সবচেয়ে ভালো বিনিয়োগবান্ধব, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটি সব সময় সত্যি নয়। বর্তমান সরকার অবস্থার পরিবর্তন করার চেষ্টা করছে এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য আমরা ব্যবসা সহজ করার ব্যবস্থা নিচ্ছি।’ এখন যদি সৌদি বিনিয়োগকারীরা আসেন তবে ভালো একটি পরিবেশ দেখতে পাবেন বলে উল্লেখ করেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।
আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, দুর্নীতি ও অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি অতীতে অনেক ভুল নীতি গ্রহণ করা হয়েছিল। এ জন্য মূল্য দিতে হচ্ছে। বিগত সরকারের সময়ে দক্ষিণ কোরিয়ার ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান স্যামসাং কোম্পানিকে বিমানবন্দর থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সৌদি কোম্পানি আরামকোকেও বিমানবন্দর থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বহুমাত্রিক। আমাদের জন্য ব্যবসা-বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক বিবেচনায় সৌদি আরবের গুরত্ব অনেক। অনেক দেশ আমাদের মুক্ত বাণিজ্য করার কথা বলছে। আমরা মুক্ত বাণিজ্য করার জন্য প্রস্তুত হচ্ছি। বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আমাদের অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। সরকারের একার পক্ষে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বেসরকারি খাতের সহায়তা দরকার।’
পররাষ্ট্রসচিব রাষ্ট্রদূত মো. জসীম উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) নজরুল ইসলাম এবং পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ও নির্বাহী পরিচালক এম মাসরুর রিয়াজ।