নিকলীর হাওরে শেষ মুহুর্তে ধান কাটার ধুম

ভালো ফলনে খুশি কৃষক
ডেস্ক রিপোর্ট
  ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৬:১৭

কিশোরগঞ্জের নিকলীর হাওরাঞ্চলে চলছে বোরো ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ। হাওরের বাতাসে দুলছে কিছু পাকা ধানের সোনালি শীষ। এ দৃশ্য এখন নিকলী উপজেলার প্রতিটি হাওরের। 
কৃষকরা ধান কেটে মাঠেই সেদ্ধ করে রোদে শুকাতে শুরু করেছেন। ভারি বর্ষণ ও আগাম বন্যার শঙ্কা না থাকায় স্বস্তিতেই সোনার ফসল ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক-কৃষাণীরা। 
এ বছর হাওরে ধানের ফলন ও দাম ভালো থাকায় খুশি হাওর পাড়ের প্রতিটি কৃষক পরিবার। নিকলী উপজেলায় অর্ধশতাধিক হাওর রয়েছে। এসব হাওরে কৃষকরা আনন্দের সঙ্গে ধান কেটে মাড়াই ও শুকানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। সেই সঙ্গে কৃষাণীরাও বসে নেই। তারাও মনের আনন্দে ধান সেদ্ধ করে তা শুকিয়ে গোলায় তোলার কাজে সাহায্য করছেন। 
নিচু জমিতে শ্রমিকের পাশাপাশি সমতলে কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিনে কম খরচে ও দ্রুত ধান কাটতে পেরে এবং ধানের ফলন ও দাম ভালো হওয়ায় কৃষকের মুখে ফুটেছে হাসি। অনেকে মাঠেই বিক্রি করছেন ধান। ধানের দর বেশি থাকায় উৎপাদন খরচের দ্বিগুণেরও বেশি দাম পাচ্ছেন বলে জানান কৃষকরা। 
নিকলী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র বলেন, উপজেলায় এ বছর ৩৫ হাজার ৯৫০ একর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছে। যা থেকে ১ লাখ ৩ হাজার ৩২৬ টন চাল ধান উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বুধবার (৩০ এপ্রিল) পর্যন্ত ৩৪ হাজার ১৫২ একর জমির ধার কাটা হয়েছে। কৃষি বিভাগের পরামর্শে কৃষকরা এ বছর হাওরে স্বল্পজীবৎ কালীন ও উচ্চফলনশীল জাতের ব্রি-ধান-৮৮, ব্রি-ধান-৯২ হাইব্রিড জাতের ধান রেকর্ড পরিমাণে চাষ করেছেন। তাতে ফলনও পেয়েছেন বেশি এবং বাজারদরও পাচ্ছেন ভালো। এদিকে বোরোর বাম্পার ফলনে মজুরি বেড়েছে ধান কাটা শ্রমিকের। ধানের পাইকারদের দাবি উচ্চ ফলনে কৃষক খুশি মনেই ভালো দামে ধান বিক্রি করছেন।
কৃষি বিভাগ বলছে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বোরো ফসলে রোগ ও পোকার আক্রমণ হয়নি। ফলে ফলনও হয়েছে ভালো। চলতি বৈশাখ শেষ হওয়ার আগেই হাওরের শতভাগ ধান কাটা শেষ হবে বলে আশা করছেন তারা। 
উপজেলার সিংপুর গ্রামের কৃষক হৃদয় মিয়া বলেন, হাওরে বর্তমানে চলছে বোরো ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ। আমরা আনন্দের সঙ্গে ধান কেটে মাড়াই ও শুকানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছি। কৃষাণীরাও মনের আনন্দে ধান সেদ্ধ করে শুকিয়ে গোলায় তোলার কাজে সাহায্য করছেন। মাঠ থেকেই ভালো দরে ধান বিক্রি করতে পারছি।
নিকলী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এই বোরো মৌসুমে হাওরের কৃষকরা যাতে আগাম বন্যা থেকে তাদের ফসল রক্ষা করতে পারেন সেজন্য প্রায় দুই হাজার কৃষি শ্রমিকের পাশাপাশি ৭৭টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন মাঠে কাজ করছে। ইতিমধ্যে ৯৫ ভাগ ধান কাটা হয়েছে। আগামী ৩-৪ দিনের মধ্যে হাওরে শতভাগ ধান কাটা শেষ হবে বলে আশা করছেন কৃষি বিভাগের এ কর্মকর্তা। 
তিনি আরও বলেন, আগাম বন্যাসহ শিলাবৃষ্টি না হলে শতভাগ ধান তুলতে পারবেন হাওর পাড়ের কৃষকরা।
নিকলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রেহেনা আক্তার মুক্তি বলেন, ধান উদ্বৃত্ত উপজেলা হিসেবে নিকলীর খ্যাতি রয়েছে। হাওর উপজেলা হিসেবে এ উপজেলায় বোরো আবাদ বেশি হয়। এখন পর্যন্ত বোরো ফসলের কোনো সমস্যা দেখা দেয়নি।
তিনি আরও বলেন, বোরো আবাদের সময় বীজ ও সার মনিটরিং কমিটির সভায় সার ডিলার প্রতিনিধিদের নিয়ে সমন্বয় সভা করে কোনো ডিলার যাতে সারের কোনো কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করতে না পারেন, সেজন্য তাদের সতর্ক রাখা হয়েছিল।