হিলি ইমিগ্রেশনে শূন্যের কোটায় পাসপোর্টধারী যাত্রী, কমেছে রাজস্ব

ডেস্ক রিপোর্ট
  ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৬:১৯

ভারতীয় ভিসা জটিলতার কারণে তিনভাগের একভাগে নেমে এসেছে দিনাজপুরের হিলি চেকপোস্ট দিয়ে ভারত-বাংলাদেশে পাসপোর্টধারী যাত্রী পারাপার। ফলে এই দুই দেশের সরকারের রাজস্ব আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। বেকার হয়ে পড়েছে শতাধিক শ্রমিকেরা। তবে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে।
এদিকে ভুক্তভোগীরা বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বন্ধু-প্রতিম এই দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কে টানাপড়েন সৃষ্টি হয়। আর তখন থেকেই ভারত সরকার বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া বন্ধ করে দেয়।
বুধবার সকালে গিয়ে দেখা গেছে, শত-শত পাসপোর্ট যাত্রীর পদচারণায় মুখরিত সেই চিরচেনা হিলি চেকপোস্ট রোডটি এখন বৈশাখের তপ্ত রৌদ্রে খা খা অবস্থা। দেখে মনে হবে করোনাকালীন সেই সময়ের চিত্র।
ভারতে চিকিৎসা নিতে যাওয়া জয়পুরহাটের সাজিদ আল হাসান জানান, আগে এই চেকপোস্ট দিয়ে দিনে ৬০০-৭০০ যাত্রী চলাচল করতো। এখন সেই চিত্র আর নাই। চেকপোস্টে এসে দেখছি শুনশান অবস্থা। আমি খুব কষ্ট করে ঢাকা থেকে মেডিকেল ভিসা পেয়েছি। একান্তই জরুরী হওয়ায় ভারতে চিকিৎসার জন্য যেতে হচ্ছে। আগে থেকে সেখানে ডাক্তার দেখিয়ে আসছিলাম। তাই আবার চেক আপরে জন্য যেতে হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভারতের ‘রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে’ অধ্যয়নরত বাংলাদেশি এক শিক্ষার্থী জানান, আমরা ভারতে লেখাপড়া করি কিন্তু তেমন কোন ছুটি পায় না। তাই আমাদের অভিভাবকরা আমাদের সাথে দেখা সাক্ষাত করার জন্য টুরিস্ট ভিসা নিয়ে ভারতে যেতেন। কিন্তু এখন টুরিস্ট ভিসা বন্ধ থাকায় তারা দেখা করতে যেতে পারছেন না। 
একজন ভুক্তভোগী বলেন, শত শত যাত্রী ভারতে ঘুরতে বা আত্মীয়-স্বজনের সাথে দেখা করতে যেতেন। এখন ভিসা বন্ধ থাকায় যেতে পারছেন না। প্রতিবেশী দেশের এমন বৈরী ভিসা-নীতি হওয়া ঠিক না। দ্রুত বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত ভালো সম্পর্ক স্থাপন করবে বলে তিনি এই মন্তব্য করেন।
চেকপোস্টে কর্মরত কয়েকজন শ্রমিক বলেন, কয়েক মাস ধরে কাঙ্ক্ষিত কাজ নেই। আগে চেকপোস্টে যাত্রীদের প্রচণ্ড ভীর থাকতো। কাজ করে ভালো ভাবে সংসার চালানো যেত। এখন পরিবার-পরিজন নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। কাজ না থাকায় অনেক শ্রমিক চলে গেছে।
হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের ব্যবসা চালু রয়েছে। তাই ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয়ে আমাদের প্রায় ভারতে যেতে হয়। কিন্তু ৫ আগস্ট পট পরিবর্তনের পর আমাদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। কয়েকবার আবেদন করেও ভিসা পাওয়া যায়নি। রপ্তানিকারকদের মোবাইলে ভিডিও বা ছবি দেখে পণ্যগুলো ভারত থেকে আমদানি করতে হচ্ছে। তাতে পণ্যের মান সঠিক হয় না। এতে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। কিছু সংখ্যক ব্যবসায়ীর আগের ভিসা থাকায় শুধু তারাই ভারতে যেতে পারছেন। ভারতের হাইকমিশনারকে ভিসার ব্যাপারে বলেও কোন সদুত্তর পাইনি। আমরা দ্রুত ভিসা চালুর দাবী জানাচ্ছি।
হিলি স্থলবন্দর ট্রাক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. হযরত আলী সরদার বলেন, সম্প্রতি রাজশাহীতে নিযুক্ত ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার মনোজ কুমার হিলি স্থলবন্দর ও চেকপোস্ট পরিদর্শনে আসেন। এসময় তিনি কাস্টমস কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে ব্যবসায়ীরা তার কাছে ভিসা সহ ব্যবসা সংক্রান্ত নানা বিষয় তুলে ধরেন।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে ভারত সরকার খুব সীমিত পরিসরে স্টুডেন্ট ও জরুরী মেডিকেল ভিসা চালু রেখেছে। এদের মধ্যে কিছু যাত্রী হিলি চেকপোস্ট দিয়ে ভারতে যাচ্ছেন। কিন্তু এখনো পর্যন্ত বিজনেস, টুরিস্ট সহ অন্যান্য ভিসা প্রাপ্তির আবেদন গ্রহণ বন্ধ রাখা হয়েছে। আর একারণে বিজনেস ভিসা না পেয়ে হিলি স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীরা ব্যবসায়িক সংক্রান্ত বিষয়ে ভারতে যেতে পারছেন না। ফলে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতি সহ চরম বিপাকে পড়ছেন। 
অন্যদিকে ভুক্তভোগীরা টুরিস্ট ভিসা না পেয়ে ভারত ভ্রমণ, আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাজে যেতে পারছেন না। 
হিলি স্থল শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা মো. শফিউল আলম বলেন, যাত্রী সংখ্যা শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। ফলে সরকারের রাজস্ব আয়ও কমেছে। পট পরিবর্তনের আগে এই চেকপোস্ট ব্যবহার করে শত শত যাত্রী দুই দেশে আসা-যাওয়া করতেন। ভারত ভিসা বন্ধ রাখায় এই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, গত বছরের ৫ আগস্টের আগে ইস্যু করা বিভিন্ন ক্যাটাগরির ভারতীয় ভিসা নিয়ে পাসপোর্ট যাত্রীরা এই চেকপোস্ট দিয়ে চলাচল করেছেন। কিন্তু সেই সংখ্যা তুলনামূলক অনেক কমে এসেছে।