হিউম্যান রাইটস ওয়াচের রিপোর্ট

বাংলাদেশে মানুষের মৌলিক স্বাধীনতাকে ঝুঁকিতে ফেলেছে অন্তর্বর্তী সরকার

ডেস্ক রিপোর্ট
  ২২ মে ২০২৫, ১২:৫৭

বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলো জনসাধারণের মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতা হুমকির মুখে ফেলেছে বলে উদ্বেগ জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। সংস্থাটি বলেছে, বিচারব্যবস্থা সংস্কারের পরিবর্তে বর্তমান সরকার সাবেক ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগপন্থীদের দমন নীতিতে এগোচ্ছে।
বুধবার (২১ মে) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এইচআরডব্লিউ জানায়, চলতি বছরের ১২ মে সন্ত্রাসবিরোধী আইন প্রয়োগ করে আওয়ামী লীগের সভা, সমাবেশ, প্রকাশনা ও অনলাইন প্রচার কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। সংস্থাটির মতে, আগের সরকারের আমলেও দমনমূলক নীতি ছিল, তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এই সিদ্ধান্ত নতুন করে মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের ইঙ্গিত দেয়।
প্রতিবেদনে জোর দিয়ে বলা হয়, আগের আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে গুমের মতো গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলেও, সেসব অপরাধে জড়িতদের জবাবদিহির বিষয়ে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। গুম প্রতিরোধে প্রস্তাবিত আইন আন্তর্জাতিক মানদণ্ড পূরণে ব্যর্থ বলে মন্তব্য করে সংস্থাটি।
এইচআরডব্লিউ’র এশিয়া বিষয়ক উপপরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, 'গুমের শিকার ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার রক্ষায় যে কাঠামো থাকা দরকার, খসড়া আইনে তা নেই।'
আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সরকারের নিষেধাজ্ঞা ও নিবন্ধন বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েও হতাশা প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকার জানিয়েছে, দলটির নেতাদের বিচার সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে। কিন্তু বিচারপ্রক্রিয়া অনেক বছর ধরে চলতে পারে। এভাবে কার্যত একটি ঐতিহাসিক ও বৃহৎ রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করে দেওয়া হলো।
এইচআরডব্লিউ মনে করে, ১৯৭১ সালের আগে থেকেই সক্রিয় আওয়ামী লীগ এবং তাদের বিপুল সমর্থকগোষ্ঠীর কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করে সরকার জনগণের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করছে। দলটির নিবন্ধন বাতিলের মাধ্যমে কোটি কোটি মানুষের রাজনৈতিক অধিকার ও অংশগ্রহণের সুযোগ সীমিত হয়ে গেছে।
তবে সংস্থাটি আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ঘটে যাওয়া ক্ষমতার অপব্যবহার ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচার দাবির পক্ষে অবস্থান নেয়। তবুও রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের পথে সঠিক পদক্ষেপ নয় বলে মন্তব্য করে এইচআরডব্লিউ। সংস্থাটির মতে, এমন পদক্ষেপ দেশে বিরোধী মত দমনের পুরনো ধারা বহাল রাখারই প্রতিফলন।