সর্ষের মধ্যে ভূত রেখে সংস্কার হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ। নির্বাহী আদেশে যেসব সংস্কার করা সম্ভব দ্রুত সেগুলো বাসতবায়ন করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার (২৯ মে) বিকালে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় সালাহ উদ্দিন আহমেদ এই দাবি জানান।
তিনি বলেন, চ্যারিটি বিগিনস অ্যাট হোম। আমরা বলেছি, আপনার (প্রধান উপদেষ্টা) উপদেষ্টা পরিষদ সংস্কার করুন। আপনার উপদেষ্টা পরিষদ নিরপেক্ষ নয়। এখানে দুইজন ছাত্র উপদেষ্টা বসে আছে, তারা একটা দলের। আরেকজন উপদেষ্টা বসে আছেন। বিদেশভ্রমণ করেছেন ২০ বছর, তিনি এখন বাংলাদেশ উদ্ধার করতে এসেছেন। তার বিতর্কিত ভূমিকার কারণে বাংলাদেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে একটা দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। তিনি আর কী পরিকল্পনা নিয়ে এসছেন জানিনা আল্লাহ মা'বুদ। আরও কয়েকজন ফ্যাসিবাদের দোসর আপনার উপদেষ্টার মধ্যে আছেন। সংস্কার করুন, নাম বলতে চাই না…বিব্রত হবেন। আমরা তার কাছে ইচ্ছা প্রকাশ করেছি। যদি সর্ষের মধ্যে ভূত রেখে আপনি সংস্কার সংস্কার করেন, সংস্কার হবে না।
রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপির উদ্যোগে এই আলোচনা সভা হয়। এই আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন।
যেসব সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্য হবে, একটা ন্যাশনাল কনসেনসাস হবে- সেসব সংস্কার এক সপ্তাহ থেকে এক মাসের ভেতরে বাস্তবায়ন করা সম্ভব বলে মনে করেন সালাহ উদ্দিন আহমেদ। সরকারের প্রতি বিএনপির এই নেতা বলেন, যদি আপনি না পারেন তাহলে আমাদের বলেন। শুধুমাত্র যেসব সাংবিধানিক সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্য হবে সেসব সাংবিধানিক সংশোধন গুলো নির্বাচিত সংসদের মধ্যেই করতে হবে। এটাই হলো আমাদের পরিষ্কার বক্তব্য। সুতরাং সংস্কার সংস্কার বলে যে আপনারা ফেনা তুলছেন মুখে, কয়টা সংস্কার করেছেন?
তিনি বলেন, কোন ডিপার্টমেন্টে কোন আইনে যে সংস্কারগুলো আপনারা আনতে চান! যেগুলো নির্বাহী আদেশে সম্ভব ওইসব করে দেন। জুডিশিয়ারি সংস্কারে তো প্রায় ঐকমত্য হয়ে গেছে। অপেক্ষা করার কোনো দরকার নেই। জুডিশিয়ারি ভার্ডিক্টের মধ্য দিয়ে অনেক সংস্কার এরইমধ্যে করে ফেলেছেন। যেসব জুডিশিয়ারি সংস্কার দরকার সেগুলো হচ্ছে- একটা জাস্টিস নিয়োগের আইন করা, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মধ্যে আরও বেশি সংস্কার করা…. এটা আর্টিকেল ৯৬ অনুসারে, আর্টিকেল ১৬ অনুসারে অধীনস্থ আদালতের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা নিয়ে আসা এসব।
নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, প্রশাসনিক কমিশনের যেসব সংস্কার বিষয়ে বিএনপি একমত হয়েছে সেগুলো উল্লেখ করেন সালাহ উদ্দিন আহমেদ।
জাপানে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন বলেন, শুনেছি আজকে নাকি একটা বক্তৃতা দিয়েছেন আমাদের প্রধান উপদেষ্টা। তিনি নিক্কেই ফোরামের আমন্ত্রণে বিদেশে গেলেন। উনি অবশ্য দেশে কম কথা বলেন। বিদেশে গেলেই সাক্ষাৎকার দেন বেশি। ওখানে উনি বলেছেন যে, মাত্র একটি মাত্র দল ডিসেম্বরের মধ্যে চেয়েছে। যদি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দিতে হয় তার বক্তব্যই বলছি, আমি অনলাইনে পড়ে আসলাম। যদি ডিসেম্বরের ভিতরে নির্বাচন দিতে হয় তাহলে নাকি খুব তাড়াহুড়ো করে সংস্কার করতে হবে এটা তার বক্তব্য। আমাদের কথা হলো, চ্যারিটি বিগিন অ্যাট হোম। আমরা বলেছি, আপনি আপনার উপদেষ্টা পরিষদে সংস্কার করুন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে ও প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি বক্তব্য রাখেন বেগম খালেদা জিয়া এবং প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এছাড়া আরও বক্তব্য রাখেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আবদুল মঈন খান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান প্রমুখ।