জেলায় এখন ‘টক অব দ্য টাউন’ শরীয়তপুরের ডিসি মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন কাণ্ডের ঘটনা। শুধু জেলায় নয়, দেশব্যাপী এই ঘটনা নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। মূলত এক নারীর সঙ্গে তার অন্তরঙ্গ ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর থেকেই বিষয়টি নিয়ে আলোড়ন তৈরি হয়। ওই নারী প্রথম থেকেই দাবি করে আসছেন, ডিসি আশরাফ উদ্দিন তাকে বিয়ের প্রলোভনে প্রতারণা করছেন।
তবে অবশেষে বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন ডিসি আশরাফ উদ্দিন। উল্টো তার অভিযোগ, ওই নারী তাকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। চাহিদামতো টাকা না পেয়ে আগের কিছু ভিডিও ও ছবি ভাইরাল করে দেন।
বিষয়টি নিয়ে মধ্যস্থতাকারী আইনজীবীর দাবি, পরকীয়া সম্পর্কের বিষয়টিকে কেন্দ্র করে একপর্যায়ে ডিসির কাছে পাঁচ কোটি টাকা দাবি করেন ওই নারী। ডিসি ওই টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় আপত্তিকর ভিডিও ছড়িয়ে দেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভিডিওতে থাকা ওই নারী টাঙ্গাইল সদরের বাসিন্দা। তিনি ঢাকার মিরপুরে স্বামীর সঙ্গে থাকতেন। অন্যদিকে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন ওই নারীর স্বামীর বড় বোনের জামাই।
জেলা প্রশাসক আশরাফ উদ্দিনের বাসাও মিরপুর এলাকায়। পারিবারিক সম্পর্ক থাকায় এবং বাসায় যাতায়াতের একপর্যায়ে দুজন পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন।
সূত্র জানায়, বেশ কয়েক মাস ধরে তাদের সম্পর্কে টানাপোড়ন চলে আসছিল। দুই মাস ধরে জেলা প্রশাসক ও ওই নারীর মধ্যে মধ্যস্থতার চেষ্টা করছিলেন শরীয়তপুরের এক আইনজীবী।
মোটা অংকের টাকার জন্য ব্ল্যাকমেলের শিকার, দাবি ডিসির
ব্ল্যাকমেইলিংয়ের শিকার হয়ে ওই নারীকে মাসে মাসে টাকা দিতেন বলে দাবি ডিসির। এক লাখ টাকা জমার ভাউচার
ভুক্তভোগী ওই নারী ডিসির বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণার অভিযোগ তুলেছিলেন। তিনি দাবি করে বলেন, উনি (ডিসি) আমার নিকটাত্মীয়। আমাকে বিয়ের কথা বলে আমার স্বামীর সঙ্গে ডিভোর্স করিয়েছেন। তিনি আমার সংসার, সমাজ ধ্বংস করে পথে বসিয়েছেন। এখন আমাকে বিয়ে না করে উল্টো মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছেন।
এদিকে এ ঘটনার পর অবশেষে মুখ খুলেছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন। তার দাবি, ওই নারী তাকে ব্ল্যাকমেল করে মোটা অংকের টাকা দাবি করে আসছিলেন। তাকে কয়েক দফায় ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা দেওয়া হয়েছিল।
শনিবার (২১ জুন) দুপুরের দিকে ডিসি আশরাফ উদ্দিন বলেন, ‘ওই নারী সম্পর্কের সূত্র ধরে বিভিন্ন সময় ব্ল্যাকমেল করে আসছিল। ব্ল্যাকমেলটি যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায়, তখন সে মোটা অংকের টাকা দাবি করে। সেই টাকা মেটানোর সামর্থ্য আমার নেই, তখন সে শরীয়তপুরের এক আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করে কীভাবে টাকা আদায় করা যায়। একপর্যায়ে সে আমার ডিসি পোস্টিংয়ের অনেক আগের কিছু ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়।’
ডিসি আশরাফ উদ্দিন আরও বলেন, ‘ডিসি পোস্টিংয়ের পর থেকে সে টাকার জন্য অনেক চাপাচাপি করছিল। পরে মাসে মাসে তার অ্যাকাউন্টে কিছু টাকা দিতে বাধ্য হয়েছি। সে একেতো আমাকে ব্ল্যাকমেল করেছে, অন্যদিকে এগুলো (গোপন ছবি) সব জায়গায় দিল। আমি আমার আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেবো।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই আইনজীবী বলেন, ‘ওই নারী আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান যে, ডিসি বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে সম্পর্কে তৈরি করে এখন তাকে বিয়ে করছেন না। পরে আমিও জেলা প্রশাসকের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলি। দুজনই আমাকে আইনজীবী হিসেবে মানেন। তখন আমি মধ্যস্থতাকারী হিসেবে দুজনকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেই। তখন ওই নারী বলেন, বিয়ে করলে উনি (ডিসি) আমাকে মারধর করবেন ও তালাক দেবেন। পরে তিনি বিয়ের পরিবর্তে এককালীন পাঁচ কোটি টাকা দাবি করেন। পরে বিষয়টি জেলা প্রশাসক না মানলে প্রতি মাসে এক লাখ করে হাত খরচের টাকা দাবি করেন। টাকা না দিলে ভিডিও ভাইরাল করে দেওয়ার কথা জানান। একপর্যায়ে জেলা প্রশাসক কিছু টাকা তাকে দেন। পরে একপর্যায়ে পুরো পাঁচ কোটি দাবি করেন। তখন জেলা প্রশাসক দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে ব্যক্তিগত ভিডিও ভাইরাল করে দেন।’
আইনজীবী আরও বলেন, ‘কারও ব্যক্তিগত ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া অপরাধের শামিল। দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ও পর্নোগ্রাফি আইনের ৮ ধারা অনুযায়ী এটি একটি অপরাধ। যেহেতু জেলা প্রশাসক ব্ল্যাকমেইলিংয়ের শিকার হয়েছেন, এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক দ্রুততম সময়ের মধ্যেই আইনি পদক্ষেপ নেবেন।’
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন ২০২৪ সালের ৩ নভেম্বর শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক হয়ে যোগদান করেন। এর আগে তিনি ২৭তম বিসিএস ক্যাডারে উত্তীর্ণ হয়ে নিউরো ডেভেলপমেন্ট, প্রতিবন্ধী ট্রাস্টের পরিচালক পদে দায়িত্ব পালন করেন।
এদিকে জেলা প্রশাসক ছুটি নিয়েছেন উল্লেখ করে জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আসলাম হোসাইন বলেন, ‘স্যার কর্মস্থলে নেই। যতদূর জানি উনি দরখাস্ত দিয়ে কমিশনার স্যারের কাছ থেকে ছুটি নিয়েছেন।’