জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশকে কেন্দ্র করে গতকাল বুধবার দিনভর সংঘর্ষে নিহতের ঘটনায় গোপালগঞ্জে ২২ ঘণ্টার কারফিউ জারি করেছে জেলা প্রশাসন। গতকাল বুধবার রাত ৮টা থেকে শুরু হওয়া এই কারফিউ আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।
এর মধ্যে বুধবার রাতে অভিযান চালিয়ে ১৪ জনকে আটক করেছে যৌথবাহিনী। গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মো. সাজেদুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, আটককৃতদের গোপালগঞ্জ সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে গোপালগঞ্জের ঘটনায় আজ বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত কোনো মামলা দায়ের হয়নি।
জানা গেছে, চলমান কারফিউয়ে জেলায় থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। বুধবার রাত থেকে সীমিত আকারে রিকশা চলাচল করলেও অন্য কোনো যানবাহন চলাচল করতে দেখা যায়নি। বন্ধ ছিল ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাইরে বের হয়নি।
সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বৃহস্পতিবার ভোর থেকে এখন পর্যন্ত রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজারে মানুষের আনাগোনা নেই বললেই চলে। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। জেলা কারাগারের সামনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সদস্য মোতায়েন রয়েছে।
জানা যায়, এনসিপির ঘোষিত ‘জুলাই পদযাত্রা’ ঘিরে বুধবার গোপালগঞ্জে ওই হামলা চালায় আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় চারজন নিহত এবং অন্তত ৯ জন গুলিবিদ্ধসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হন।
গোপালগঞ্জে দিনভর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের নিহতরা হলেন- জেলা শহরের উদয়ন রোডের সন্তোষ সাহার ছেলে যুবলীগ সদস্য দীপ্ত সাহা (২৫), শহরের থানাপাড়ার কামরুল কাজীর ছেলে রমজান কাজী (২৪), সদর উপজেলার আড়পাড়া এলাকার আজাদ তালুকদারের ছেলে ইমন তালুকদার (১৮) ও টুঙ্গিপাড়া উপজেলার ইদ্রিস মোল্যার ছেলে সোহেল মোল্যা।
উল্লেখ্য, বুধবার গোপালগঞ্জে সভা শেষে ফেরার পথে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) গাড়িবহরে আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। এতে হামলাকারী ও পুলিশের মধ্যে দিনভর সংঘর্ষ চলে। এতে পুরো শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পরে বিকেল পাঁচটার দিকে সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির সহায়তায় গোপালগঞ্জ ত্যাগ করেন এনসিপির নেতারা।
জেলা প্রশাসন থেকে মাইকিং করে জনগণকে বাইরে না আসার আহ্বান জানানো হয়। রাত থেকে জেলা সদরে লোকজনের চলাচল কমে গেছে। সকালে দু-একজন করে বের হয়েছে। এ ছাড়া ২-১টি রিকশা চলতে দেখা গেছে। সংঘর্ষের পর শহরে থমথমে ভাব বিরাজ করছে।