আমেরিকায় বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশিসহ দেড় লক্ষাধিক মানুষের ১০ বিলিয়ন ডলারের অধিক চুরি হয়েছে এ বছরের প্রথম ৬ মাসে। গত বছরের একই সময়ের চেয়ে তা ২৪ শতাংশ বেশি। ফেডারেল প্রশাসনের পক্ষ থেকে আরো জানা গেছে, প্রযুক্তির অপব্যবহার করে ডিজিটাল সিস্টেমে সহজ-সরল আমেরিকানদের গোপন তথ্য অবাধে চুরি হচ্ছে এবং প্রতারকরা চুরিকৃত তথ্য দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে।
জানা গেছে, প্রতিদিনই অজ্ঞাত নম্বর থেকে ফোন আসে অবিরতভাবে। এসব ফোন যারা রিসিভ করে কথা বলতে থাকেন, তারাই ভিকটিম হচ্ছেন। কারণ, কথা বলার সময়েই প্রতারকেরা যাবতীয় তথ্য হাতিয়ে নেয়। আরো জানা গেছে, প্রতারকেরা নানা সংস্থার কর্মী পরিচয়ে নগদ অর্থ সহায়তার (মঞ্জুরি, অনুদান) আশ্বাস দিয়ে থাকে। টেলিফোনেই ব্যাংক একাউন্টে ডলার হস্তান্তরের টোপ দিচ্ছে।
এভাবে কখনোই কোন অনুদানের অর্থ পাওয়া যায় না এবং এটাই বাস্তবতা হলেও অনেকে তা ভুলে যান প্রতারকদের কথার ফুলঝুরিতে। অভাব-অনটনে থাকা মানুষেরা লোভে পড়ে সর্বশান্ত হারাচ্ছেন। অভিযোগ উঠেছে, প্রতারণার অভিযোগ প্রশাসনকে অবহিত করেও প্রতিকার মিলছে না অধিকাংশ সময়েই। ব্যাংক-বিমাসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোও ধীরে চলার নীতি অবলম্বন করেছেন রহস্যজনকভাবে।
অনুসন্ধানকালে জানা গেছে, অনেক আমেরিকানের সাথে বাংলাদেশিদের ব্যাংক একাউন্ট হাতিয়ে নেয়া ছাড়াও ক্রেডিট কার্ড বানিয়ে বিপুল অর্থ ড্র করেছে প্রতারকেরা। জানা গেছে, টেলিফোনের পাশাপাশি ভুয়া ই-মেল অথবা টেক্সট পাঠানো হচ্ছে আইআরএস, পুলিশ অথবা হেলথ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির নামে এবং স্পর্শকাতর তথ্য সংগ্রহ করার পরই প্রতারকেরা অর্থ হাতিয়ে নেয়ার নানা পন্থা অবলম্বন করছে। কখনো কখনো ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেও ক্রেডিট কার্ড/ফুডস্ট্যাম্পের যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। প্রতারক চক্রের কিছু পয়েন্ট থেকে ঐসব কার্ড চার্জ করে অর্থ সরিয়ে নেয়ার ঘটনা ঘটছে।
ইদানিং প্রতারকেরা এতটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে, মোটা অংকের চেক ইস্যু করা হচ্ছে টার্গেটেড ভিকটিমের বরাবরে। বলা হচ্ছে জরুরিভাবে সেই চেক ভাঙানোর আগেই যেন কিছু ডলার পাঠানো হয় (প্রতারকদের লোকজনের কাছে)। সেই চেক পেয়ে যারা মোটা অংকের অর্থ হাতে পেলেন বলে ভাবছেন তারাই ঠকছেন। কারণ, চেকটি জাল। ব্যাংকে জমা দেয়ার কদিন পর তা জানা সম্ভব হয় ‘বাউন্স’র নোটিশ পাবার পর। এফবিআইসহ বিভিন্ন সংস্থার লোকজন মাঠে রয়েছেন কিন্তু এতবেশি ঘটনা ঘটছে, তারাও কুলিয়ে উঠতে সক্ষম হচ্ছেন না। জানা গেছে, অধিকাংশ চক্রই যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে থেকে প্রতারণার ফাঁদ পাতছে। প্রযুক্তির মাধ্যমে তা ক্রমান্বয়ে ব্যাপক হচ্ছে বলেও জানা গেছে।
নিউইয়র্কের সহস্রাধিক প্রবাসী এহেন প্রতারণার ভিকটিম হয়েছেন গত দু’বছরে। তাদের অনেকেই পরবর্তীতে পুরো অর্থ ফিরে পাননি কিংবা মাসের পর মাস ব্যাংকে ধরনা দিতে হচ্ছে।
এমন কয়েক ডজন ভিকটিমের সাথে আলাপ করে এ সংবাদদাতা জানতে পেরেছেন, তথ্য হাতিয়ে নেয়ার পর ঐসব তথ্য দিয়ে টেক্সাস, জর্জিয়া, ক্যালিফোর্নিয়া কিংবা আরিজোনা স্টেটের মত দূরবর্তী স্থানের ঠিকানায় বাড়ি ক্রয়ের লোন নেয়া হয়েছে। কিংবা ক্রেডিট কার্ডের আবেদন করা হয়েছে। এসব তথ্য জানা যায় ক’মাস পর যখোন ক্রেডিট কার্ড/লোনের কিস্তি অনুযায়ী অর্থ পরিশোধ করা না হয়।
ভুয়া ঠিকানায় যোগাযোগে সক্ষম না হওয়ায় সোস্যাল সিকিউরিটি নম্বর ফলো করে কর্তৃপক্ষ সত্যিকারের ঠিকানা পেয়ে ভিকটিমের সাথে যোগাযোগ করার পরই চমকে উঠেন সে সব প্রবাসীরা। অনেকের নামে কয়েক মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত লোন ড্র করা হয়েছে কিংবা লাখো ডলারের ক্রেডিট কার্ড বিল জমেছে। এ নিয়ে পুলিশে অভিযোগ করেও সহজে সাড়া পাচ্ছেন না ঐসব ভিকটিমরা। অর্থাৎ অযথা এক ধরনের টেনশনে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে সকলকেই।
অনুসন্ধানকালে আরও জানা গেছে, নিউইয়র্ক, নিউজার্সি, ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস, পেনসিলভেনিয়া, ওয়াশিংটন মেট্রো, মিশিগান, ফ্লোরিডা, জর্জিয়া, কানেকটিকাটে বসবাসরত কিছু বাংলাদেশি প্রতারণার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ সমীপে অভিযোগ করেও সদুত্তর পাননি। এ অবস্থায় সর্বসাধারণকে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে যে, তারা যেন ঘনঘন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট/ক্রেডিট কার্ড বিল পরখ করেন। অচেনা টেলিফোন কিংবা অজ্ঞাত ফোন থেকে আসা টেক্সট মেসেজে সাড়া না দেন। ভুলে ফোন রিসিভ করলেও যেন কথা না বলেন।
আইআরএস কখনোই তার বকেয়ার জন্যে ফোন করে না। বকেয়া আদায়ের জন্যে ফোন করে কখনো আইআরএস লোক পাঠায় না সেই অর্থ আদায়ের জন্যে। সম্ভব হলে পাসওয়ার্ড ঘনঘন পরিবর্তন করা উচিত। এসব সতর্কতা গত কয় বছর থেকেই সর্বসাধারণকে অবহিত করছে সংশ্লিষ্টরা।