জমির মালিকানা নিয়ে বন কর্মকর্তাকে শাসালেন এসিল্যান্ড

ডেস্ক রিপোর্ট
  ২৬ জুলাই ২০২৫, ২২:৪৯

কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভের প্রসিদ্ধ পর্যটন স্পট হিমছড়ি ঝরনার পাশের জায়গার মালিকানা নিয়ে বিরোধ দেখা দিয়েছে। রামু উপজেলা প্রশাসন ও কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগ এ জায়গার মালিকানা দাবি করছে। বিরোধের জেরে পক্ষে-বিপক্ষে স্থাপনা উচ্ছেদের ঘটনাও ঘটেছে।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) সন্ধ্যায় বনবিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে রামু উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রকাশ্যে বাগবিতণ্ডার ঘটনা ঘটেছে। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর বিষয়টি সবার নজরে আসে। সরকারি দুটি বিভাগের কর্মকর্তাদের এমন আচরণে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। বিষয়টি বিব্রতকর দাবি করে বিরোধ নিরসনে কাজ চলছে বলে জানিয়েছে রামু উপজেলা প্রশাসন।
কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভের হিমছড়ি ঝরনাকে কেন্দ্র করে বনবিভাগের অধীনে হিমছড়ি জাতীয় উদ্যান, বনবিভাগের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নিসর্গসহ নানা অনুষঙ্গ রয়েছে। একইভাবে পর্যটন স্পট হিসেবে পরিচিতির কারণে রামু উপজেলা প্রশাসনের অধীনে হিমছড়ি বাজার, পার্কিং, পাবলিক টয়লেট বিদ্যমান। দীর্ঘদিন সরকারের দুটি বিভাগের নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্য চলে এলেও প্রকাশ্য বিরোধ সৃষ্টি হয়নি। কিন্তু সম্প্রতি একটি স্থাপনা নির্মাণ নিয়ে জায়গার মালিকানা বিষয়ে বিরোধের সৃষ্টি হয়েছে। যা প্রকাশ্যে এসেছে বৃহস্পতিবার।
স্থানীয় ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম সোহেল সাংবাদিকদের জানান, হিমছড়ি ঝরনাটি বনবিভাগের পক্ষে ইজারা দেওয়া হয়। আর এ ঝরনার সামনের বাজার, পার্কিং ইজারা দেয় রামু উপজেলা প্রশাসন। হিমছড়ি বাজারের পূর্বে গত চার বছর আগে এনজিওর অর্থায়নে একটি পাবলিক টয়লেট তৈরি হয়। যা ইজারা দেয় উপজেলা প্রশাসন। সম্প্রতি পর্যটন স্পট ঝরনার কিছু সংস্কার কাজ শুরু করে বনবিভাগ। এ সংস্কারের অংশ হিসেবে নতুন গেট নির্মাণের জন্য পাবলিক টয়লেটের কিছু অংশ বৃহস্পতিবার সকালে ভেঙে ফেলে বনবিভাগ।
বিষয়টি অবহিত হওয়ার পর রামু উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ঘটনাস্থলে এসে টয়লেট ভেঙে দেওয়ার কারণ জানতে চায় বনবিভাগের কর্মকর্তার কাছে। বনবিভাগ গেট নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা এবং টয়লেটটি বনবিভাগের জমিতে রয়েছে বলে দাবি করেন। এরপর সহকারী কমিশনার ভূমি হিমছড়ি ঝরনার উত্তর পাশে বনবিভাগের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নিসর্গের পাশে অবস্থিত কিছু স্থাপনা ১ নম্বর খাস খতিয়ানের দাবি করে তা ভাঙচুর করে। বিষয়টি জানা-জানির পর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে গেলে তর্কের সৃষ্টি হয়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাওয়া ভিডিওটি সহকারী কমিশনার ভূমি প্রকাশ্যে বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তাসহ (ডিএফও) অন্য কর্মকর্তাদের শাসানোর বিষয়টি পরিষ্কার হয়।
কক্সবাজার রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. হাবিবুল হক জানান, নিসর্গ পুরোটাই বনবিভাগের বিএস ২ নম্বর খতিয়ানের অধীনে সংরক্ষিত বনভূমি যা হিমছড়ি জাতীয় উদ্যানের নিমিত্তে রক্ষিত এলাকা হিসাবে ঘোষিত। যেখানে থাকা বন পাহারার গোল ঘর, ঘেরা-বেড়া, হিমছড়ি জাতীয় উদ্যানের সাইনবোর্ডটি ভেঙে দিয়েছেন সহকারী কমিশনার ভূমি। অথচ দীর্ঘদিন বনবিভাগের জমিতে পাবলিক টয়লেটটি পরিচালিত হলেও কোনো হস্তক্ষেপ করা হয়নি। এ জমি উপজেলা প্রশাসনের নামে খতিয়ান সৃজন করা হলেও সেটি ছিল সম্পূর্ণ বিধি বহির্ভূত। কারণ, সংরক্ষিত বনের জমি রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে অবমুক্ত করতে হলে একমাত্র মহামান্য রাষ্ট্রপতির আদেশে সম্ভব। কী এখানে এসিল্যান্ড নিজের মতো এ জমি উপজেলা প্রশাসনের নামে খতিয়ান ভুক্ত করেন। বিষয়টি আন্তঃমন্ত্রণালয়ে লিখিত জানানো আছে। কিন্তু আমরা প্রশাসনিক দ্বন্দ্বে না গিয়ে উপজেলা প্রশাসনকে ভোগদখল করতে দেয়াটায় হিতে বিপরীত হল। অতিথি হিসেবে সম্মান পাওয়ায় এখন অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ করা হল।
বনবিভাগের দক্ষিণ বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. নূরুল ইসলাম জানিয়েছেন, শতভাগ বনবিভাগের জমিতে সহকারী কমিশনার ভূমি ভাঙচুর করেছেন। এতে বনবিভাগের ক্ষতি হয়েছে। ঘটনাস্থলে থাকা বন কর্মকর্তাদের প্রকাশ্যে অপদস্থ করা হয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন মহলকে অবহিত করার পর জেলা প্রশাসক উদ্যোগ নিয়েছেন। কী ব্যবস্থা নেন অবজারভেশন করা হচ্ছে। না হয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঊর্ধ্বতন মহল নির্দেশ দিয়েছেন।
বিষয়টি নিয়ে রামু উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাজ্জাদ জাহিদ রাতুল বলেন, আমাদের কাছে তথ্য ছিল খাস খতিয়ানের জায়গায় অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে জানতে পারি বনবিভাগ সেটি নির্মাণের অনুমতি দেয়। যেখানে রেস্টুরেন্ট তৈরি করা হচ্ছে। পরে বনবিভাগের অফিসে গিয়ে কাউকে না পেয়ে ঠিকাদার কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু নির্দেশ উপেক্ষা করে বনবিভাগের কর্মকর্তারা কাজ করতে বলে।
তিনি আরও বলেন, খবর পেয়ে আবারো সেখানে গিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে উচ্ছেদ অভিযানে গেলে তারা বাঁধা দেয়ায় তর্ক হয়। এ ঘটনায় তারা ইউএনও মহোদয়ের সঙ্গে আলাপ করেছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়।
রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রাশেদুল ইসলাম জানান, এখানে বনবিভাগ ও প্রশাসন উভয় পক্ষের জায়গা রয়েছে। আমরা উভয় পক্ষ সরকারের স্বার্থে কাজ করছি। বিষয়টি নিয়ে আমার এসিল্যান্ডের সঙ্গে বনবিভাগের ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছিল।