গাজীপুরের শ্রীপুরে নারী পোশাকশ্রমিক তাছলিমা খাতুনের (৪০) মৃত্যুজনিত বিমা সুবিধার ৮০ হাজার টাকা তার স্বামী আজিজুল ইসলামের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ওয়ার্ড বিএনপি নেতা ও তার এক সহযোগীর বিরুদ্ধে। আরও ২০ হাজার টাকার জন্য ভুক্তভোগীকে ভয়ভীতি ও হুমকি দিচ্ছেন তারা।
এ ঘটনায় ভয়ে আজিজুল তার তিন সন্তান রেখে বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র রাত্রিযাপন করছেন বলে জানা গেছে। কোনও উপায় না পেয়ে ভুক্তভোগী বিএনপি নেতা ও তার সহযোগীদের কাছ থেকে মুক্তি পেতে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের সহযোগিতা চেয়েছেন। শুক্রবার (২২ আগস্ট) বিকালে তার নিজ বাড়িতে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ অভিযোগ করেন।ভুক্তভোগী আজিজুল ইসলাম গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার বহেরারচালা (মাঝের চালা) এলাকার সাহেদ আলীর ছেলে। তাছলিমা খাতুন একই এলাকার আফাজ উদ্দিনের মেয়ে এবং আজিজুল ইসলামের স্ত্রী। তাদের ঘরে দুই মেয়ে আনিকা আক্তার (১৭), আইরিন আক্তার (১২) এবং এক ছেলে জুনায়েদ মিয়া (৯) রয়েছে। তাছলিমা খাতুন শ্রীপুর পৌরসভার কেওয়া পশ্চিমখণ্ড (বহেরারচালা) এলাকার লান্তাবুর অ্যাপারেলস লিমিটেড পোশাক কারখানায় প্রিন্টিং সেকশনের প্রিন্টিং সহকারী পদে চাকরি করতেন। অভিযুক্ত নছ মিয়া শ্রীপুর পৌরসভার বহেরাচালা এলাকার মৃত আব্দুল কুদ্দুস মিয়ার ছেলে। তিনি পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। তার সহযোগী মাওনা ইউনিয়নের চকপাড়া গ্রামের আশ্রাফ আলীর ছেলে আসাদ মিয়া। তিনি লান্তাবুর অ্যাপারেলস লিমিটেড পোশাক কারখানায় ইট-বালু সাপ্লায়ার।
ভুক্তভোগী আজিজুল ইসলাম জানান, তার স্ত্রী তাছলিমা খাতুন ২০১৯ সালের জুলাই মাসে লান্তাবুর অ্যাপারেলস লিমিটেড পোশাক কারখানায় প্রিন্টিং সেকশনের প্রিন্টিং সহকারী পদে চাকরিতে যোগদান করে। ২০২৪ সালের ৪ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) বিকালে কারখানায় কাজ করার সময় তাছলিমা হঠাৎ অসুস্থতা বোধ করে। ওইদিন কারখানা কর্তৃপক্ষ তাদের ব্যবস্থাপনায় কারখানার মেডিক্যাল সেন্টারে তাছলিমাকে চিকিৎসা দিয়ে ওইদিনের জন্য তাকে ছুটি দিয়ে দেয়। পরদিন ৫ এপ্রিল (শুক্রবার) ভোর সাড়ে ৫টায় তাসলিমা খাতুন স্ট্রোকজনিত কারণে বহেরাচালা নিজ বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন। পরে কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রম আইন অনুযায়ী তাসলিমার সকল পাওনা পরিশোধ করে। পরে কারখানার সহযোগিতায় শ্রমিক কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে মৃত্যুজনিত বিমা সুবিধার এক লাখ ৯৭ হাজার টাকা পায়। ওই টাকা চলতি বছরের ২০ জুলাই ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড শ্রীপুর পৌরসভার মাওনা চৌরাস্তা শাখায় তার তিন সন্তানের পৃথক হিসাবে (অ্যাকাউন্টে) দেওয়া হয়। ওই টাকা কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এনে দিতে অভিযুক্ত আসাদ মিয়া এবং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নছ মিয়া সহযোগিতা করছেন বলে তারা তাছলিমা খাতুনের স্বামী আজিজুল ইসলামকে জানায়। এজন্য তারা আজিজুলের কাছে এক লাখ টাকা দাবি করে। পরে আজিজুল তাদেরকে এক ছেলের অ্যাকাউন্ট থেকে ৬০ হাজার টাকা তুলে আসাদ মিয়াকে দেয়। পরে বাকি ৪০ হাজার টাকার জন্য আজিজুলকে ভয়ভীতি ও হুমকি দিতে থাকে আসাদ। একপর্যায়ে বিএনপি নেতা নছ মিয়া তাকে খবর দিয়ে তার অফিসে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে আসাদকে আরও ২০ হাজার টাকা দিতে বলে। পরে আজিজুল ২০ হাজার টাকা দেন।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, ‘টাকার জন্য আমাকে তারা মারতে চায়। আমি তখন বলি সব টাকা যদি আমি আপনাদেরকে দিয়ে দিই তাহলে আমি মা-মরা তিন সন্তানকে নিয়ে কীভাবে চলবো? এই টাকা দিয়ে একটি অটো কিনে সংসার চালানোর চিন্তা করছিলাম। বিএনপি নেতাদের হুমকির ভয়ে রাতে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে থাকতে হয়।’
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত নছ মিয়া বলেন, ‘শুনেছি আজিজুলের স্ত্রীর মৃত্যুজনিত বিমা সুবিধার টাকা যা উঠাইতে পারে তার অর্ধেক সে (আসাদ) নিয়ে নেবে। পরে শুনলাম আজিজুল আসাদকে ৬০ হাজার টাকা দিয়েছে এবং আরও ৪০ হাজার টাকা দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে আসাদ। কিন্তু আমি আজিজুলের কাছ থেকে কোনও টাকা নিইনি। তাদের দুজনকে আমার অফিসে ডেকে উভয়ের কাছ থেকে ঘটনা শুনে আজিজুলকে বলি ৪০ হাজার টাকা দিতে হবে না, ২০ হাজার টাকা দিয়ে দে। আজিজুল যদি আমাকে বলে তার টাকা আমি নিয়েছি, তাহলে আমি তাকে টাকা দিয়ে দেবো। এরপরে আর আমি কিছু জানি না। আমি তাদের সঙ্গে কোনও কন্ট্রাক্টে যাই নাই বা কন্ট্রাক্টের কোনও আলোচনা করিনি।’