র্যাব-পুলিশের বন্দুকের নল ঘুরে গেলে আওয়ামী লীগকে তলে তলেও খুঁজে পাওয়া যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। আজ বৃহস্পতিবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘এখানেই বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের মধ্যে পার্থক্য। বিএনপির কাছে অবৈধ ক্ষমতা নয়, জনগণের স্বার্থই বড়। এ কারণে বিএনপি ‘তলে তলে কিংবা প্রকাশ্যে’ কোনোভাবেই দেশ এবং জনগণের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে কারও সঙ্গে আপোষ করেনি। আমি আগেও বলেছিলাম, ৭ জানুয়ারী কোনো নির্বাচন ছিল না। ৭ জানুয়ারী ছিল তারেক রহমানের ‘লিফলেট বনাম শেখ হাসিনার ‘ডামি ব্যালট’র লড়াই।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেশের শতকরা ৯৫ ভাগের বেশি মানুষ শেখ হাসিনার ব্যালট প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা বিএনপিসহ গণতন্ত্রের পক্ষের ৬৩টি রাজনৈতিক দলের ‘লিফলেট’ গ্রহণ করে ৭ জানুয়ারী ভোট বর্জন করেছিল। সুতরাং ওবায়দুল কাদের র্যাব-পুলিশের পাহারায় থেকে যত কথাই বলুক, আওয়ামী লীগ বরাবরই ‘তলে তলে আপস করা’ দেশ ও জনস্বার্থ বিরোধী একটি চক্র। সেদিন আর বেশি দূরে নয়, র্যাব-পুলিশের বন্দুকের নল ঘুরে গেলে প্রকাশ্যে তো দূরে থাক, ওবায়দুল কাদেরদের আওয়ামী লীগকে ‘তলে তলে’ও খুঁজে পাওয়া যাবে না।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে দেখলাম, বর্তমান বিনাভোটের সরকার প্রধানের কাছে লেখা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেনের একটি চিঠি নিয়ে প্রায় হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়েছেন। কাদের সাহেব বিএনপির প্রতি প্রশ্ন রেখে বলেছেন, ‘এখন আপনাদের সাহসের উৎস কোথায়? কে সাহায্য করবে? ওবায়দুল কাদের সাহেব আপনার এই উল্লাসেই প্রমাণিত হয়-আওয়ামী সরকারের গণভিত্তি ধ্বসে গিয়ে এর নেতারা আত্মমর্যাদা হারিয়ে ফেলেছেন।’
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘বিএনপির সকল রাজনৈতিক ক্ষমতার উৎস্য দেশের জনগণ। গত বছরের গত অক্টোবরে ওবায়দুল কাদেরের একটি বক্তব্য নিশ্চয়ই সবার মনে আছে, ‘আপস হয়ে গেছে। আমরা আছি, দিল্লিও আছে। দিল্লি আছে, আমরাও আছি’। এই কথার অর্থ দেশের জনগণ নয় পরগাছা আওয়ামী লীগের অস্তিত্ব টিকে আছে দিল্লির করুণার উপর। আওয়ামী লীগের চিরাগত ঐতিহ্যই হচ্ছে নিজ দেশের সার্বভৌমত্বকে দুর্বল করা। বিএসএফের গুলিতে বিজিবি মারা গেলেও আওয়ামী লীগের প্রতিবাদ করার সাহস নেই।’
বান্দরবানের নাইখ্যাংছড়িতে বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্ত অরক্ষিত হয়ে পড়েছে বলে মন্তব্য করেন রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ‘সেখানে বাংলাদেশের নাগরিকরা চরম নিরাপত্তাহীনতায়। সীমান্তে বাংলাদেশী এলাকায় নারী-পুরুষ কেউ নিরাপদ নয়। জীবন যাচ্ছে মর্টারের সেলে। বাংলাদেশের চারিদিকে সীমান্ত এলাকায় এখন রক্তক্ষয়ী খেলা চলছে প্রতিবেশী দেশগুলোর ছোঁড়া অস্ত্রের আঘাতে। বাংলাদেশের মানুষের জীবন এবং ভূমি এখন অরক্ষিত। পাশ্ববর্তী দেশ থেকে দলে দলে লোক এবং অস্ত্র বাংলাদেশে অনুপ্রবিষ্ট হচ্ছে। আর বাংলাদেশ সরকারের অভিসন্ধিপ্রসূত নীরবতা মূলত: দেশের মানুষকে নতজানু করার এক গভীর চক্রান্ত। প্রধানমন্ত্রীর শান্তির বাণী এখন দেশের সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ফেলেছে। আমাদের সীমান্তরক্ষী বাহিনী প্রতিদিনই পিছু হটছে আর তাতে বাংলাদেশের মানুষ বিপদের সম্মুক্ষীণ হচ্ছে। অথচ শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়ার শাসনামলে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকা ছিল সুরক্ষিত এবং জনগণ ছিল নিরাপদ।’
মিয়ানমার প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে সরকারের রহস্যজনক ভূমিকা। যদি সত্যিকারের জনসমর্থিত সরকার থাকতো তাহলে আমরা সরকারের দিক থেকে সকল প্রস্তুতি দেখতে পেতাম। এখানে দুটি জিনিস, একটা কূটনৈতিক যুদ্ধ; আরেকটা হচ্ছে সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য বাস্তবিক নিরাপত্তা বাহিনীর অবস্থানের মধ্যদিয়ে দেশের মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া সরকারের সময়ে কিন্তু দ্রুত কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করেছেন। কিন্তু নতজানু সরকারের পক্ষে তা সম্ভব হয় না।’
রাজনৈতিক চরিত্র হারিয়ে আওয়ামী লীগ তার ছাত্র সংগঠনকে সারাদেশে নারী নির্যাতনের ভয়ংকর দানবরুপে গড়ে তুলেছে বলে মন্তব্য করেন রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ‘চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে সারাদেশে কমপক্ষে ২৫৮টি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে ধর্ষণের ঘটনা ৩১টি, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ১৪টি, ২টি ঘটনা যা ধর্ষণের পর ধর্ষিতাকে হত্যা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে কেউ নিরাপদ নয়। বর্তমান দুঃসময় সামাজিক নৈরাজ্যের চরম দৃষ্টান্ত। আর এর জন্য দায়ী দখলদার আওয়ামী সরকার।’
এ সময় সারাদেশে নেতাকর্মীদের ওপর হামলা, মামলা ও গ্রেপ্তারের বিবরণ তুলে ধরেন রুহুল কবির রিজভী।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপি নেতা তাহসিনা রুশদির লুনা, আবদুল খালেক, শামীমুর রহমান শামীম, বেলাল আহমেদ, আমিনুল ইসলাম,তারিকুল আলম তেনজিং, অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম তালুকদার প্রমুখ।