জলদস্যুদের হাতে অপহৃত জাহাজের বাংলাদেশি ২৩ নাবিক মুক্ত

ডেস্ক রিপোর্ট
  ১৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৩১

বুধবার দুপুর ১২টার দিকে সোমালিয়ার উপকূলে নোঙর করা জাহাজটির ডেকে ঈদুল ফিতরের নামাজ পড়েন জিম্মি নাবিকরা বুধবার দুপুর ১২টার দিকে সোমালিয়ার উপকূলে নোঙর করা জাহাজটির ডেকে ঈদুল ফিতরের নামাজ পড়েন জিম্মি নাবিকরা দীর্ঘ একমাস পর ভারত মহাসাগরে সোমালিয়া জলদস্যুদের কবলে পড়া জাহাজ এমভি আবদুল্লাহসহ ২৩ নাবিক মুক্ত হয়েছেন। শনিবার মধ্যরাতের পর নাবিকরা মুক্তি পেয়ে জাহাজটি দুবাইয়ের দিকে রওনা দিয়েছেন। রবিবার (১৪ এপ্রিল) সকাল হওয়ার আগেই একে একে তা জেনে গেল সব নাবিকের পরিবার। দস্যুদের কবল থেকে মুক্তির খবরে স্বস্তি ফিরেছে স্বজনদের মাঝে। এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে ওয়েলার পদে কর্মরত মো. শামসুদ্দিনের স্ত্রী রিমা আক্তার বলেন, ‘আজ (রবিবার) ভোর সাড়ে ৫টার দিকে শামসুদ্দিন ফোন করেছে। জানিয়েছে, তারা দস্যুদের কবল মুক্তি পেয়েছে। এ খবর পেয়ে আমাদের মাঝে স্বস্তি ফিরেছে। মুক্তি পাওয়ার এ খবর শোনার জন্য দীর্ঘ অপেক্ষায় ছিলাম। আল্লাহর দরবারে অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। জাহাজের মালিককেও ধন্যবাদ জানাই নাবিকদের মুক্ত করার জন্য।’
এ প্রসঙ্গে সমুদ্রগামী জাহাজের নাবিক আতিক ইউএ খান বলেন, ‘মুক্তি পাওয়ার পর এমভি আবদুল্লাহ জাহাজ ইতোমধ্যে রওয়ানা হয়েছে দুবাইয়ের দিকে। এক সপ্তাহ পর দুবাই পৌঁছালে সব নাবিককে চট্টগ্রামে ফিরিয়ে নিয়ে আসা হবে। দুবাইতেই নতুন নাবিকরা জাহাজের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন৷’
তিনি আরও বলেন, ‘সোমালিয়ান ইন্টারপ্রেটারের সঙ্গে কথোপকথনের পর নাবিকরা আমাকে জানিয়েছিল, জলদস্যুদের এই মুক্তিপণ সাধারণত তিন ভাগ করা হয়। ৫০ শতাংশ পায় যারা ঝুঁকি নিয়ে জাহাজটা হাইজ্যাক করে তারা। ৪০ শতাংশ পায় যারা এই সম্পূর্ণ অপারেশনের ব্যয়ভার বহন করে অর্থাৎ বিনিয়োগ করে আর অস্ত্র সরবরাহ করে। বাকি ১০ শতাংশ  ভাগাভাগি করে অন্যরা৷ অর্থাৎ যারা লজিস্টিক সাপোর্ট দেয়, জাহাজ পাহারা দেয় তারা।’
জাহাজটির মালিক কবির গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘জাহাজসহ সব নাবিক শনিবার রাত ৩টার দিকে জিম্মিদশা থেকে মুক্তি পেয়েছেন। জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ এখন দুবাইয়ের দিকে রওনা দিয়েছে। সব নাবিক সুস্থ আছেন। এদিকে, কীভাবে বা কত টাকার বিনিময়ে এমভি আবদুল্লাহ জাহাজসহ নাবিকরা মুক্তি পেলেন তা জানা যায়নি।
এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটি কবির গ্রুপের এস আর শিপিংয়ের মালিকানাধীন। এসআর শিপিং সূত্র জানিয়েছে, এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে প্রায় ৫৫ হাজার মেট্রিক টন কয়লা আছে। গত ৪ মার্চ আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিকের মাপুটো বন্দর থেকে এসব কয়লা নিয়ে যাত্রা শুরু করে জাহাজটি। ১৯ মার্চ সেটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের হামরিয়াহ বন্দরে পৌঁছানোর কথা ছিল। এর মধ্যে ১২ মার্চ দুপুর দেড়টার দিকে ভারত মহাসাগরের জলদস্যুর কবলে পড়ে জাহাজটি। অর্থাৎ ভাড়ার বিনিময়ে মোজাম্বিক থেকে দুবাইয়ের আমদানিকারকের কাছে কয়লা পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব ছিল জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর।
এই প্রতিষ্ঠানটির অধীনে মোট ২৪টি জাহাজের মধ্যে সর্বশেষ যুক্ত হয় জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ। ২০১৬ সালে তৈরি এই বাল্ক কেরিয়ারটির দৈর্ঘ্য ১৮৯ দশমিক ৯৩ মিটার এবং প্রস্থ ৩২ দশমিক ২৬ মিটার। ড্রাফট ১১ মিটারের কিছু বেশি। গত বছর জাহাজটি এসআর শিপিং কিনে নেওয়ার আগে এটির নাম ছিল গোল্ডেন হক। মালিকানা পরিবর্তনের পর নতুন নাম হয় এমভি আবদুল্লাহ।