প্রযুক্তিনির্ভর নির্বাচন করতে চায় ইসি

নির্বাচনী রোডম্যাপ আগামী সপ্তাহে
নিজস্ব সংবাদদাতা
  ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১২:২৮

ইভিএমে ভোটগ্রহণ ও নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর বাদানুবাদের মধ্যেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনী কর্মপরিকল্পনা (রোডম্যাপ) চূড়ান্ত করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। রোডম্যাপে এখন থেকে সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত কোন মাসে কী করা হবে, তা তুলে ধরা হবে। এবারের নির্বাচনে অধিকতর প্রযুক্তির ব্যবহারসহ প্রায় এক ডজন বিষয় সামনে রেখে কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করেছে ইসি। এখান থেকে ৭টি বিষয় প্রাধান্য দিয়ে আগামী সপ্তাহে রোডম্যাপ প্রকাশ করা হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল গত মঙ্গলবার বলেছেন, ভোটার তালিকা আগামী বছর মার্চ মাসে চূড়ান্তভাবে প্রকাশ করা হবে। রোডম্যাপ এক বা দুই সপ্তাহের মধ্যে চূড়ান্তভাবে অবহিত করা হবে। ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ১০ থেকে ১২ পাতার নির্বাচনী রোডম্যাপ আগামী সপ্তাহে প্রকাশ করা হতে পারে।
২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির আগে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিচ্ছে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন। দায়িত্বগ্রহণের ৬ মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন ও ইভিএম নিয়ে শিক্ষাবিদ, রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও গণমাধ্যমকর্মীসহ অংশীজনের সঙ্গে কয়েক দফা সংলাপ হয়েছে। এরই মধ্যে গত ২৩ আগস্ট সর্বাধিক দেড়শ আসনে ইভিএমে ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্তের কথা জানায় ইসি। সেই আলোকে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ইভিএমের নতুন প্রকল্প অনুমোদনের লক্ষ্যে কাজ করছে ইসি সচিবালয়।
এ ছাড়া বাকি কাজ সম্পাদনে ছক অনুসারে এগোতে চাইছে ইসি। কর্মপরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে আইনি কাঠামো পর্যালোচনা ও সংস্কার, নির্বাচন প্রক্রিয়া সময়োপযোগীকরণে সংশ্লিষ্ট সবর পরামর্শ গ্রহণ, সংসদীয় এলাকার সীমানা র্নিধারণ, নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও সরবরাহ, বিধিবিধান অনুসরণ করে ভোটকেন্দ্র স্থাপন, নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন ও নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের নিরীক্ষা, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট সবার সক্ষমতা বৃদ্ধির কার্যক্রম গ্রহণ এবং নির্বাচনে অধিকতর প্রযুক্তির ব্যবহার। সেই সঙ্গে রয়েছে দক্ষ নির্বাচনী কর্মকর্তার প্যানেল তৈরি ও প্রশিক্ষণ, ভোটার সচেতনতা বৃদ্ধি কার্যক্রম, পর্যবেক্ষক সংস্থা নিবন্ধন ও নবায়ন কার্যক্রম গ্রহণ। তা ছাড়া নির্বাচনী কার্যক্রমে গণমাধ্যমকে আইনি কাঠামোতে সম্পৃক্তকরণ। এগুলোর মধ্যে থেকে ৭টি বিষয় প্রাধান্য দেওয়া হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন।
জানা গেছে, নির্বাচনে অধিকতর প্রযুক্তির ব্যবহারের মধ্যে রয়েছে জিআইএস পদ্ধতিতে ভোটকেন্দ্রের তথ্য ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত ডাটাবেজ ও অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার প্রণয়ন। নির্বাচনী ক্যালেন্ডার, অনলাইনে মনোনয়ন দাখিল ও গ্রহণ, প্রার্থীর তথ্য ব্যবস্থাপনা, পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম, ভোটগ্রহণ ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ডাটাবেজ তৈরি, কেন্দ্রের তথ্য ব্যবস্থাপনা এবং কেন্দ্র হতে নিরাপদ ও দ্রুত সময়ে নির্বাচনী ফল প্রেরণসংক্রান্ত সিস্টেমের অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার প্রণয়ন। এ কার্যক্রম ২০২৩ সালের অক্টোবরের মধ্যে সম্পন্ন করার পরিকল্পনা রয়েছে ইসির।
ইসি সচিবালয় আগামী জুনের মধ্যে নির্বাচনবিষয়ক তথ্যসংক্রান্ত অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার প্রণয়ন করবে। জুলাইয়ের মধ্যে সফটওয়্যারের মাধ্যমে অডিট ও বিভিন্ন রিপোর্ট প্রস্তুতকরণ ব্যবস্থা আধুনিকায়ন এবং ২০২৩ সালের আগস্টের মধ্যে কমপ্লেইন্ট এবং কমপ্লায়েন্স ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার প্রণয়ন এবং প্রশিক্ষণ ব্যবস্থাপনা অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার প্রণয়ন করবে।
এ ছাড়া আগামী জুনের মধ্যে ভোটার সংখ্যা, জনশুমারি ও ভৌগোলিক অবস্থানের ভিত্তিতে জিআইএস পদ্ধতিতে সংসদ নির্বাচনের জন্য নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনর্নির্ধারণসংক্রান্ত ডাটাবেজ ও অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার প্রণয়ন করবে। এক্ষেত্রে আগামী বছরের জানুয়ারিতে আগের নীতিমালা পর্যালোচনা করে নতুন একটি নীতিমালা প্রস্তুত করবে। ফেব্রুয়ারিতে জিআইএস সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে চায় ইসি। মার্চে নীতিমালার আলোকে বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় ৩০০ আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করে খসড়া প্রস্তুত করার পরিকল্পনা এবং জুনে ৩শ আসনের সীমানা চূড়ান্ত করে গেজেট প্রকাশ করা হবে।
ইসির কর্মপরিকল্পনার মধ্যে আরও রয়েছে আগামী মাসে নির্বাচন পর্যবেক্ষক ও নির্বাচন পরিচালনা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে ইসির সংলাপ। নভেম্বর মাসে নারী নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সংলাপ। একই মাসে সুপারিশমালার খসড়া চূড়ান্ত করা হবে। ডিসেম্বরে চূড়ান্ত সুপারিশমালা প্রণয়ন করা হবে।
সূত্র জানিয়েছে, সংসদ নির্বাচনের জন্য বিদ্যমান আইন, বিধিমালা পর্যালোচনার পরিকল্পনা করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে চলতি মাসে আইনি কাঠামো সংস্কারের লক্ষ্যে বিশেষজ্ঞদের মতামত গ্রহণ, ডিসেম্বরে আইন সংস্কারের প্রাসঙ্গিক খসড়া প্রস্তুতকরণ এবং আগামী ফেব্রুয়ারিতে আইন প্রণয়নের ব্যবস্থা গ্রহণের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
২০২৩ সালের জুন মাসে ভোটকেন্দ্র চিহ্নিত করে সর্বোচ্চ সুবিধা নিশ্চিতে নির্দেশনা, জুলাই মাসে নির্বাচনী এলাকাভিত্তিক ভোটকেন্দ্রের খসড়া তালিকা প্রকাশ ও রাজনৈতিক দলের স্থানীয় দপ্তরে প্রেরণ। আগস্টে ভোটকেন্দ্রের ওপর আপত্তি নিষ্পত্তিকরণে ব্যবস্থা নেবে। আর ভোটের ২৫ দিন আগে গেজেট প্রকাশ করা হবে। এ ছাড়া আগামী বছরের শুরু থেকে নির্বাচনী প্রশিক্ষণ শুরু হবে। জুনে নতুন রাজনৈতিক দলের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে।
নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেছেন, নির্বাচনের মাঠে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহায়তা করতে মাঠে থাকবে সেনাবাহিনী। গুরুত্বানুসারে তারা ঠিক করে নেবে কোথায় কোথায় থাকবে।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, ২০২৪ সালের ৩০ জানুয়ারি সরকারের মেয়াদ শেষ হবে। সেই হিসেবে পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হয়। যদি ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে নির্বাচন হয়, তা হলে নভেম্বরের ১৫ তারিখের মধ্যে শিডিউল ঘোষণা করা হবে। যদি জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হয় তা হলে নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে তফসিল ঘোষণা করা হবে।
বর্তমানে দেশে ভোটার সংখ্যা ১১ কোটি ৩৩ লাখ। ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আগামী ২ মার্চ হালনাগাদ করা চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। সেক্ষেত্রে প্রতিবছর গড়ে ২.৫ শতাংশ নতুন ভোটার অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে।