সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। তারা ঢাকার বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করেছেন।
পাশাপাশি রেললাইনও অবরোধ করেছেন তারা। এতে রাজধানী কার্যত অচল হয়ে পড়েছে।
জানা গেছে, রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব, ফার্মগেট, টিএসসি, শাহবাগ, মিরপুর, বনানী, উত্তরা, কুড়িল বিশ্বরোড, নতুন বাজার, বাড্ডা, রামপুরা, মালিবাগ, মৌচাক, শনির আখড়াসহ বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে রেখেছেন।
মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) দুপুরের আগে থেকেই আন্দোলনে শামিল হন শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন স্থানে সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের সঙ্গে কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের খবরও পাওয়া যাচ্ছে।
আগের দিন সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কোটা সংস্কারপন্থী শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হয় ছাত্রলীগ। বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ হয়।
পরে রাতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম মঙ্গলবারের বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
মূল কর্মসূচি মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় হওয়ার কথা থাকলেও শিক্ষার্থীরা আগেই সড়কে নেমেছেন। এর আগে আন্দোলন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও মঙ্গলবার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা যুক্ত হন।
এদিন দুপুরে রাজধানীর নতুন বাজারে অবস্থান নেওয়া ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষ হয়েছে। ডিএমপির বাড্ডা জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) রাজন কুমার সাহা এ তথ্য জানান।
নতুন বাজারে ইউআইইউ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অবরোধ করলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের ছত্রভঙ্গ করতে যান। এতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষ বাঁধে।
রাজধানীর মেরুল বাড্ডা এলাকায় সড়ক অবরোধ করেছেন বেসরকারি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনে মেরুল বাড্ডা এলাকায় সম্পূর্ণ যানচলাচল বন্ধ রয়েছে।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকশ’ শিক্ষার্থী তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়েছেন। এতে সড়কের একপাশে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। অন্য পাশে যান চলাচলে রয়েছে ধীরগতি।
বাড্ডা থানার ডিউটি অফিসার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোজ্জামেল হক জানান, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে রামপুরা থেকে কুড়িল বিশ্বরোডগামী সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে মেরুল বাড্ডা থেকে রামপুরাগামী সড়কে যান চলাচল আংশিক চালু রয়েছে।
এদিকে রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বর, শিয়ালবাড়ি মোড় ও মিরপুর বেড়িবাঁধ এলাকার সড়ক অবরোধ করেছেন শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া ইউল্যাব ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা গাবতলী-মোহাম্মদপুর রাস্তা আটকে রেখেছেন।
রাজধানীর উত্তরা হাউজবিল্ডিং থেকে বিএনএস সেন্টারে পর্যন্ত সড়কে অবস্থান নিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উত্তরা এলাকায় যানচলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। এ সড়ক বন্ধ করায় গাজীপুর থেকে ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রযেছে।
রাজধানীর শনির আখড়া, বনানী, ফার্মগেটসহ আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে শিক্ষার্থীরা সড়কে নেমেছেন।
এদিকে রাজধানীর মহাখালীতে রেললাইনে রেললাইন অবরোধ করেছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনে যুক্ত শিক্ষার্থীরা। এতে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। দুপুরে শিক্ষার্থীরা রেললাইন অবরোধ করেন বলে জানান ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার আনোয়ার হোসেন।
পুরান ঢাকার আদালত এলাকায় গুলিবিদ্ধ ৪
পুরান ঢাকার আদালত এলাকায় কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) চার শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) ঢাকার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত সংলগ্ন স্টার হোটেলের সামনে বিকেল সাড়ে৩টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী এক চা দোকানি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তিনি তিন-চারটি গুলির শব্দ শুনেছি। অনেক ইটপাটকেল ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হতে দেখেছি। এ সময় সরকার সমর্থক কিছু নেতাকর্মীকে আদালত চত্বরেও অস্ত্র হাতে দেখা যায়। সরকার দলের কিছু নেতাকর্মীকে সিএমএম আদালতের সামনে দিয়ে রাজার দেউড়ি এলাকায় চলে যেতে দেখা যায়।
এরপর বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বিপুর সংখ্যক শিক্ষার্থী ফের মিছিল নিয়ে রায় সাহেব বাজারের দিক থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে যান।
প্রত্যক্ষদর্শী আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, রাজধানীর পুরান ঢাকার আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা এ গুলি বর্ষণ করেছেন। এতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী ফেরদৌস, ১৭ ব্যাচের অন্তু, ১৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী অনিকসহ চারজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তাদের ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে কোতোয়ালি জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) নজরুল ইসলাম বলেন, গুলির খবর শুনেছি। তবে আমরা এক গ্রুপই মিছিল করতে দেখেছি। অন্য গ্রুপ দেখিনি।
মঙ্গলবার বিকেল ৩টার দিকে স্ট্যাম্প, লাঠিসোঁটা নিয়ে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীরা- 'আন্দোলনে হামলা কেন? প্রশাসন জবাব চাই', 'কোটা না মেধা, মেধা, মেধা', 'দালালি না রাজপথ, রাজপথ, রাজপথসহ নানা স্লোগান দিতে থাকে।
এ সময় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ছাত্রলীগের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির উদ্দেশ্যে দুপুর ২টা ৪৫ মিনিটের দিকে বাসে করে ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যান। তবে আন্দোলকারী শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেওয়ায় পুরান ঢাকার স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ক্যাম্পাসের সামনে শোডাউন দিতে দেখা যায়।