পর্যটক ভ্রমণে নিরুৎসাহ করছে সরকার

রাঙামাটিতে প্রতিদিন ক্ষতি প্রায় ২ কোটি

ডেস্ক রিপোর্ট
  ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ১৩:২৫

দুর্গাপূজা উপলক্ষে ছুটি ছিল। তবে স্বাভাবিক সময়ে এই ছুটিতে পর্যটক পদচারণায় মুখর থাকে হ্রদ পাহাড়ের এই শহর। কিন্তু তিন পার্বত্য জেলায় ৮ অক্টোবর থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত পর্যটক ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করার সরকারি নির্দেশনার কারণে পর্যটকশূন্য রাঙামাটি। এতে হতাশ ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি, এ কারণে অক্টোবরে প্রায় ৬০ থেকে ৬৫ কোটি টাকার ক্ষতি হবে ব্যবসায়ীদের।
তারা জানান, হ্রদ, পাহাড় আর মেঘের এমন মিতালি উপভোগে ভ্রমণপিপাসুদের বরাবরই পছন্দের শীর্ষে থাকে রাঙামাটি। তাই ছুটির দিনগুলোতে পর্যটকরা ভিড় করেন হ্রদ-পাহাড়ের এই জেলায়। নগরজীবনের ক্লান্তি দূর করতে সবুজ প্রকৃতি ও ঝর্ণার জলে সজীব করে নেয় নিজেদের।
তবে এবারের শারদীয় দুর্গাপূজার ছুটিতে চিত্র একেবারেই ভিন্ন। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কিছু অপ্রীতিকর ঘটনার জেরে পাহাড় ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করে প্রশাসন। ফলে এ বছর সাজেক, রাঙামাটির আশপাশের হোটেল, কটেজ, হাউসবোট ও টেক্সটাইল মার্কেটগুলো তাদের প্রস্তুতি নিলেও প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তে হতাশ খাতসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
রাঙামাটি চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রিজের তথ্যমতে, রাঙামাটিতে পর্যটনসংশ্লিষ্ট খাতের ওপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করেন প্রায় ৩০ হাজার মানুষ। মেঘের রাজ্য সাজেক, সুবলং ঝরনাসহ বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে কোথাও নেই তেমন কোনও পর্যটক। শীত মৌসুমের শুরুতে এমন সিদ্ধান্ত রাঙামাটি পর্যটনশিল্পে দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মত ব্যবসায়ীদের। এতে পুঁজি হারানোর শঙ্কায় আছেন তারা। দ্রুতই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি তাদের।
পুঁজি হারানোর আশঙ্কা ব্যবসায়ীদের
ব্যবসায়ীদের হিসেবে শারদীয় দুর্গাপূজার ছুটিতে হোটেল-মোটেল বুকিং করেও পরে বাতিল করতে হয়। শুধু হোটেল-মোটেল নয়, ট্যুরিস্ট বোট, হাউসবোট ও কটেজগুলো নতুন করে সাজিয়ে তোলা হয়েছিল। তবে এসব খাতে এমন ক্ষতি পুষিয়ে নিতে হিমশিম খেতে হবে ব্যবসায়ীদের। এমন অবস্থায় শীত মৌসুমের আগে কেউ কেউ ব্যবসা বন্ধের চিন্তার কথাও জানান।


গত মাসের ১৮ তারিখ থেকে পাহাড়ে সহিংসতার জেরে সাজেকে তিন দফায় ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে ৪ অক্টোবর পর্যন্ত সাজেকে ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করা হয়। যা পরে পাহাড়ের সার্বিক পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে তিন পার্বত্য জেলায় গত ৮ অক্টোবর থেকে আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত পর্যটকদের ভ্রমণ থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
হাউসবোট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও বার্গি লেকের পরিচালক বাপ্পী তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, ‘শুধু নিরাপত্তার জন্য পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দিলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সবাইকে ভেবে দেখা দরকার। ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত যদি এ নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকে, তাহলে কোটি কোটি টাকা লোকসান হবে।’
দ্রুত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার দাবি পর্যটনসংশ্লিষ্টদের
সাজেকে রিসোর্ট মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মতিজয় ত্রিপুরা জানান, প্রতি শুক্র-শনিবার প্রায় ২ দুই থেকে আড়াই হাজার পর্যটক সাজেক বেড়াতে যায়। সরকারি ছুটির দিনে তা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। এই সময়ে ভ্রমণ নিরুৎসাহিত করায় পর্যটকশূন্য হয়ে পড়েছে সাজেক। সব রিসোর্ট মালিকরা বেকার সময় কাটাচ্ছেন। কর্মচারীদের এই মাসের বেতন দেয়াও সম্ভব হবে না।
রাঙামাটি চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রিজের সহসভাপতি আলী বাবর জানান, শুধু রাঙামাটি শহরে প্রতিদিন প্রায় ১ কোটি টাকার ক্ষতির মুখে ব্যবসায়ীরা। এর মূল কারণ পর্যটক না আসা। রাঙামাটিসহ তিন পার্বত্য জেলায় মানুষ পর্যটন ব্যবসার ওপর নির্ভর করে টিকে আছে। পর্যটক না আসা যদি পুরো মাস ধরে চলে তাহলে প্রায় ৪৫ থেকে ৫০ কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়বে ব্যবসায়ীরা।
পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে পর্যটক ভ্রমণ বন্ধ রাখা প্রয়োজন, তাই বন্ধ রাখা রয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় পরে খুলে দেওয়া হবে। জনগণের আস্থা অর্জনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করতে প্রশাসন কাজ করছে।’