আপস্টেট নিউইয়র্কে আইনি সহায়তা সংকট, বিপাকে অভিবাসীরা

ডেস্ক রিপোর্ট
  ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ১৪:২৬


অভিবাসন আইন প্রয়োগ ও অভিযান বেড়ে যাওয়ায় নিউইয়র্কসহ পুরো যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে আইনি সহায়তার চাহিদা এখন তীব্র আকার ধারণ করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, যোগ্য আইনজীবীর অভাব এবং আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে অসংখ্য অভিবাসী ন্যায্য আইনি সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, যা তাদের জীবন ও ভবিষ্যৎকে অনিশ্চিত করে তুলছে।
সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, নিউইয়র্ক রাজ্যে প্রায় ৪৫ লাখ অভিবাসী বসবাস করছেন। এর মধ্যে প্রায় ১৮ লাখ নাগরিক নন এবং প্রায় ৬ লাখ ৭০ হাজার নথিহীন। অথচ পুরো রাজ্যে অভিবাসন আইনের চর্চাকারী আইনজীবীর সংখ্যা মাত্র ১,৬০০ জন, জানিয়েছে আমেরিকান ইমিগ্রেশন লইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন নিউইয়র্ক চ্যাপ্টার। এই চাহিদা ও সরবরাহের বিশাল ব্যবধানই বর্তমানে অভিবাসীদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
নিউইয়র্ক সিটিতে তুলনামূলকভাবে আইনি সহায়তা, তহবিল ও সংগঠন বেশি থাকলেও আপস্টেট অঞ্চলে অভিবাসীরা এসব সেবা পেতে চরম সংকটে পড়ছেন। সিরাকিউজের অভিবাসন আইনজীবী হোসে পেরেজ বলেন, শুধু আইনজীবীর ঘাটতি নয়, অর্থের অভাবও বড় সমস্যা। অনেকের ভাষাগত পার্থক্য পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে।
সেপ্টেম্বর মাসে কেটো অঞ্চলে আইসের অভিযানে ৫৭ জন শ্রমিককে আটক করা হয়। তাদের মধ্যে হেডিবার্তো রামিরেজ বৈধ ওয়ার্ক পারমিট থাকা সত্ত্বেও গুয়াতেমালা পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তিনি জানান, আমাকে আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলার সুযোগও দেওয়া হয়নি। বর্তমানে অনেক আটক ব্যক্তি কোনো আইনি প্রতিনিধিত্ব ছাড়াই বন্দি রয়েছেন।
ভাষা ও যোগাযোগের জটিলতা, বাড়ছে মামলার সংখ্যা
আইনি সহায়তা না পাওয়ার অন্যতম বড় কারণ ভাষাগত প্রতিবন্ধকতা। পেরেজ বলেন, নিউইয়র্ক রাজ্যজুড়ে অভিবাসন আইনে পারদর্শী এবং একই সঙ্গে স্প্যানিশ ভাষাভাষী আইনজীবীর সংখ্যা হাতে গোনা। সিরাকিউজের ওয়ার্কার্স সেন্টার অফ সেন্ট্রাল নিউইয়র্ক-এর নির্বাহী পরিচালক জেসিকা ম্যাক্সওয়েল জানান, আইনজীবীর ঘাটতি এখন ভয়াবহ। আমরা একেকজন অভিবাসীকে একসঙ্গে তিনজন পর্যন্ত আইনজীবীর কাছে পাঠাতে বাধ্য হই যেন অন্তত একজন সাড়া দেন।
সিরাকিউজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা সংস্থা টিআরএসি জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরে আরবি, ক্রেওল ও স্প্যানিশভাষী আসামিদের আইনি প্রতিনিধিত্ব ১০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। যদিও আইন অনুযায়ী ইংরেজি না জানা ব্যক্তিদের জন্য দোভাষী সরবরাহ করা হয়, তবে তাদের আইনি সহায়তা নিশ্চিত করার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।
আমেরিকান ইমিগ্রেশন কাউন্সিলের তথ্য অনুযায়ী, যারা আইনজীবীর সহায়তা পান, তারা মামলা জেতার সম্ভাবনায় ১১ গুণ এগিয়ে থাকেন। অথচ ২০২৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে মাত্র ৩৮ শতাংশ অভিবাসন মামলায় আইনি প্রতিনিধিত্ব ছিল।
সীমিত সুযোগে অতিরিক্ত চাপ!
অভিবাসীদের দারিদ্র্যের হার যুক্তরাষ্ট্রজন্ম নাগরিকদের তুলনায় অনেক বেশি। তাই অনেকেই প্রো বোনো (বিনামূল্যে) আইনজীবীর ওপর নির্ভর করেন। কিন্তু এসব সেবার জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হয়। জেসিকা ম্যাক্সওয়েল বলেন, নিউইয়র্ক রাজ্যে চমৎকার কিছু আইনি সেবা প্রতিষ্ঠান আছে, কিন্তু তারা সক্ষমতার চেয়ে বহুগুণ বেশি চাপের মুখে।
নিউইয়র্ক সিটির প্রায় এক-চতুর্থাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করেন। আপস্টেটের অনোনডাগা, এরি, মনরো, অ্যালবানি ও ওনাইডা—এই পাঁচ কাউন্টিতে অভিবাসীদের সংখ্যা সর্বাধিক, যেখানে ইংরেজি দক্ষতা কম এবং আইনি সেবা অত্যন্ত সীমিত।
সিরাকিউজের ভিয়েতনামি বংশোদ্ভূত ব্যবসায়ী তাই শ’ বলেন, আমার কমিউনিটির মানুষ এখন ভয়াবহভাবে কর্মসংস্থান সংকটে ভুগছে। অনেকে কারখানা বা ক্লিনিং সার্ভিসে কাজ করছেন, কারণ সেখানে ইংরেজি বলতে হয় না।
আইনজীবী পেরেজের মতে, অভিবাসীরা মার্কিন নাগরিকদের চাকরি কেড়ে নিচ্ছেন না; বরং তারা এমন কাজ করছেন যা অনেক স্থানীয় মানুষ করতে চান না। তিনি প্রশ্ন তোলেন, নিউইয়র্কের খামারে ফল বা সবজি তুলতে কয়জন স্থানীয় মানুষকে দেখা যায়?
পেরেজ আরও বলেন, অভিবাসীদের শ্রম যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাদের ছাড়া কৃষি, নির্মাণ ও খাদ্য শিল্পের উৎপাদন থমকে যাবে।
তবে ম্যাক্সওয়েল সতর্ক করেছেন, বর্তমানে অভিবাসন কর্তৃপক্ষ বৈধ–অবৈধ কাউকেই ছাড় দিচ্ছে না। বৈধ পারমিট থাকা সত্ত্বেও তিনজনকে আটক হতে দেখেছি এই সপ্তাহেই।
অভিবাসীরা যেমন কর্মসংস্থানের সীমাবদ্ধতা, দারিদ্র্য ও ভাষা সমস্যায় ভুগছেন, তেমনি আইনি সহায়তার অভাবে তাদের ভবিষ্যৎ আরও অনিশ্চিত হয়ে উঠছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সংকট নিরসনে সরকারি সহায়তা, তহবিল বৃদ্ধি এবং নতুন আইনজীবী প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করা এখন সময়ের দাবি।