আমেরিকায় বাংলাদেশি–আমেরিকান কমিউনিটি দিন দিন শক্তিশালী হচ্ছে। এখন নিউইয়র্ক, নিউ জার্সি, টেক্সাস, ক্যালিফোর্নিয়া কিংবা শিকাগোসহ প্রায় প্রতিটি বড় শহরেই আমাদের উপস্থিতি রয়েছে। এই উপস্থিতি আমাদের স্বপ্নকে আরও বড় করে তোলে। প্রশ্ন হচ্ছে—আমরা কি কেবল প্রবাসে টিকে থাকতে চাই, নাকি নিজের অবস্থানকে এমন পর্যায়ে নিতে চাই যেখানে বাংলাদেশি পরিচয় মর্যাদার সঙ্গে প্রতিষ্ঠিত হয়?
অনেকে কল্পনা করেন, ‘বাংলাদেশনগর’ নামে আলাদা শহর তৈরি হবে। যেখানে মেয়র থেকে বিচারক পর্যন্ত সবাই বাংলাদেশি হবেন। আবার কেউ কেউ ভাবেন, যদি লাখ লাখ বাংলাদেশিকে হঠাৎ করে আমেরিকায় আনা যেত, তাহলে দেশের অর্থনীতিও সমৃদ্ধ হতো। নিঃসন্দেহে এগুলো আমাদের আবেগের জায়গা থেকে আসা স্বপ্ন, কিন্তু বাস্তবে মার্কিন আইন ও সমাজব্যবস্থা এমন কিছু অনুমতি দেয় না। বরং এসব কল্পনা আমাদের বাস্তব করণীয় থেকে মনোযোগ সরিয়ে নেয়।
তাহলে কী করা উচিত?
প্রথমত, কমিউনিটি সংগঠিত করা জরুরি। বাংলাদেশি অ্যাসোসিয়েশন, সাংস্কৃতিক সংগঠন, চেম্বার অফ কমার্স—এসব প্রতিষ্ঠান আমাদের একত্রে দাঁড়াতে সাহায্য করতে পারে। ছোট ব্যবসা থেকে শুরু করে বড় উদ্যোক্তা তৈরি করলে অর্থনৈতিক ক্ষমতা আসবে। অর্থনৈতিক ক্ষমতাই রাজনৈতিক ক্ষমতার ভিত্তি।
দ্বিতীয়ত, রাজনীতিতে প্রবেশ করতে হবে। ভারতীয়, চাইনিজ কিংবা পাকিস্তানি–আমেরিকানরা আজ যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস পর্যন্ত প্রতিনিধি পাঠাতে পেরেছেন। বাংলাদেশিরা কেন পারবে না? ভোটার রেজিস্ট্রেশন বাড়ানো, স্থানীয় সিটি কাউন্সিল বা স্কুল বোর্ডে অংশ নেওয়া—এসব পদক্ষেপের মাধ্যমেই আমরা অগ্রসর হতে পারি।
তৃতীয়ত, সংস্কৃতি ও ভাষাকে মূলধারায় তুলে ধরতে হবে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২১ ফেব্রুয়ারি, বিজয় দিবস ১৬ ডিসেম্বর কিংবা পহেলা বৈশাখ শুধু প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য নয় আমেরিকান সমাজের জন্যও উদযাপনের উপলক্ষ হতে পারে। এতে আমরা নিজেদের গর্বিত ইতিহাস অন্যদের সামনে তুলে ধরতে পারব।
চতুর্থত, মিডিয়া ও শিক্ষাক্ষেত্রে প্রবেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমেরিকার সংবাদপত্র, টেলিভিশন, রেডিওতে যদি বাংলাদেশি–আমেরিকানরা প্রভাবশালী অবস্থান নিতে পারেন, তাহলে আমাদের কণ্ঠস্বর আরও শক্তিশালী হবে। একইভাবে তরুণ প্রজন্মকে আইন, রাজনীতি, প্রযুক্তি ও স্বাস্থ্য খাতে দক্ষ করে তুলতে হবে।
সবশেষে, আমাদের মনে রাখতে হবে আমেরিকা একটি বহুজাতিক সমাজ। এখানে কারো জন্য আলাদা শহর গড়ে তোলার সুযোগ নেই। তবে একত্রে কাজ করলে, ঐক্যবদ্ধ হলে, এবং মূলধারার অংশীদার হতে পারলে বাংলাদেশি–আমেরিকানরা যে কোনো স্বপ্ন পূরণে সক্ষম হবে।
বাংলাদেশিদের ভবিষ্যৎ প্রবাসে কল্পনায় নয়, বাস্তব কর্মে গড়ে উঠতে হবে।