শিক্ষকদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে আটকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউআরপি বিভাগের পরীক্ষা

শিক্ষা ডেস্ক
  ২৬ জুলাই ২০২৫, ১৯:৩১

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা (ইউআরপি) বিভাগের স্নাতকোত্তর চূড়ান্ত পর্বের (৪৮তম ব্যাচ) শিক্ষার্থীদের ক্লাস তিন মাস আগে শেষ হলেও শিক্ষকদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে এখনও পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য বিভাগে ৪৮তম ব্যাচের স্নাতকোত্তর পরীক্ষাগুলো সম্পন্ন হয়ে গেছে, কিন্তু তাঁদের পরীক্ষা এখনও শুরু হয়নি। তারা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে বিষয়টি জানালেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।
নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিভাগের স্নাতকোত্তর দুটি পর্বে পরীক্ষা হয়। প্রথম পর্বের পরীক্ষা শেষ হয়েছিল গত বছরের ২১ নভেম্বর। এরপর দ্বিতীয় বা চূড়ান্ত পর্বের ক্লাস ও শ্রেণি মূল্যায়ন (টিউটোরিয়াল) পরীক্ষা শেষ হয় চলতি বছরের ২৩ এপ্রিল। কিন্তু এখনও পরীক্ষা শুরু হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৪৮তম ব্যাচের এক শিক্ষার্থী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘শিক্ষকদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের খেসারত আমাদের দিতে হচ্ছে। দ্রুত সমস্যা সমাধান না হলে আমরা আন্দোলনে যেতে বাধ্য হব।’
জানা গেছে, চলতি বছরের এপ্রিল মাসে বিভাগের ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাজিদ ইকবাল অভিযোগ করেন, তার থিসিসের দ্বিতীয় ও তৃতীয় পরীক্ষক হিসেবে অধ্যাপক শফিক-উর রহমান এবং সহযোগী অধ্যাপক লুৎফর রহমান উদ্দেশ্যমূলকভাবে কম নম্বর দিয়েছেন। সাজিদের অভিযোগ ছিল যে, ওই দুজনকে এ কাজের জন্য প্রভাবিত করেছেন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আফসানা হক। এছাড়া আফসানা হক প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গেও জড়িত বলে অভিযোগ ওঠে। এসব অভিযোগের পর শিক্ষকদের মধ্যে দুটি পক্ষ সৃষ্টি হয়।
বিভাগের ৪৮তম ব্যাচের পরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাসফিয়া নাহরিন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের কাছে প্রশ্নপত্র চাওয়া হয়েছে, সেগুলো পেলে আমরা পরীক্ষা নেব। বিভাগের সভাপতি (অধ্যাপক আনিসা নূরী) হেল্পফুল নন। এ ছাড়া বিভাগের পরীক্ষা–সংক্রান্ত গোপনীয় বিষয় কে বা কারা ফাঁস করে বিভাগের সুনাম নষ্ট করেছেন—এসব নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিষয়গুলো তদন্তে উঠে আসার পর সমাধান হলে শিক্ষকেরা হয়তো প্রশ্নপত্র দেবেন।’
এদিকে, বিভাগের অন্যান্য শিক্ষক যেমন অধ্যাপক শফিক-উর রহমানও একই কথা বলেছেন। তিনি জানান, সম্প্রতি বিভাগের সভাপতির বিরুদ্ধে অতি গোপনীয় বিষয় ফাঁসের সন্দেহ বা অভিযোগে ২-৩ জন ছাড়া অধিকাংশ শিক্ষক পরীক্ষা–সংক্রান্ত বিষয়ে কাজ করছেন না।
নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক আনিসা নূরীর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তাঁর সাড়া পাওয়া যায়নি।
তদন্ত কমিটির প্রধান, গাণিতিক ও পদার্থবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক মাহবুব কবির জানান, তদন্তের কাজ প্রায় শেষের দিকে। দ্রুত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) এবং উপাচার্যের রুটিন দায়িত্বে নিয়োজিত অধ্যাপক মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘শিক্ষকদের মধ্যে দুটো পক্ষের দ্বন্দ্বে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। উপাচার্য দেশের বাইরে আছেন, তিনি দেশে ফিরে এলে আমরা প্রয়োজনে প্রশাসনিক সভা করে বিষয়টি সমাধান করব। এভাবে একটি বিভাগ চলতে পারে না।’