আন্তর্জাতিক পরিবার দিবস

একক পরিবার বনাম একান্নবর্তী পরিবার

ফিচার ডেস্ক
  ১৫ মে ২০২৫, ২০:২৬

পরিবার হলো সমাজের সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম একক। পরিবার থেকেই সমাজ গড়ে উঠেছে এবং এখানে শৈশবেই শিশুরা শেখে নৈতিকতা, শিষ্টাচার ও সামাজিক সহাবস্থান। একক ও একান্নবর্তী পরিবার-এই দুটি পরিবার কাঠামোর মধ্যে দিয়ে আজকের সমাজ এগিয়ে যাচ্ছে। তবে আধুনিকতার ছোঁয়ায় এবং জীবনের দ্রুতগতির চাপে আজ একক পরিবারের প্রচলন বেড়ে চলেছে, আর একান্নবর্তী পরিবার ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। দুই প্রকার পরিবারেরই আছে কিছু সুবিধা এবং কিছু অসুবিধা।

একান্নবর্তী পরিবার
একান্নবর্তী পরিবার বলতে বোঝানো হয় এমন একটি পরিবার যেখানে দাদা-দাদি, চাচা-চাচি, ভাই-বোন সহ একাধিক প্রজন্ম একসঙ্গে বাস করে। একক পরিবারের মতই যৌথ পরিবারে কিছু সুবিধা ও অসুবিধা রয়েছে। একান্নবর্তী পরিবারের সুবিধা আছে। আসুন সেগুলো জেনে নিই-

১. পারস্পরিক সহানুভূতি ও সহায়তা: পরিবারের সদস্যরা পরস্পরের খোঁজখবর রাখেন এবং বিপদে-আপদে একে অপরের পাশে দাঁড়ান।
২. সামাজিক শিক্ষা ও মূল্যবোধ: শিশুরা বড়দের কাছ থেকে আদব-কায়দা, শিষ্টাচার ও পারিবারিক ঐতিহ্য শেখে।
৩. বৃদ্ধদের যত্ন: দাদা-দাদি কিংবা নানা-নানি পরিবারের অভ্যন্তরেই যত্ন পান এবং তাদের জন্য বাড়তি সুরক্ষা তৈরি হয়।
৪. ঘরের কাজ ভাগাভাগি করে করা যায়: একান্নবর্তী পরিবারে বাড়ির কাজগুলো সদস্যদের মধ্যে ভাগ করে নেওয়া যায়, ফলে এককভাবে চাপ পড়ে না।
৫. আনন্দ-উৎসব প্রাণবন্ত হয়: বিভিন্ন উৎসবে একত্রে মিলেমিশে আনন্দ করা যায়, যা একক পরিবারে অনেকটা সীমিত।

অন্যদিকে একান্নবর্তী পরিবারের অসুবিধাও রয়েছে বেশ কিছু। যেমন-

১. স্বাধীনতার সীমাবদ্ধতা: ব্যক্তিগত মতামত, সিদ্ধান্ত বা জীবনযাপন পদ্ধতিতে অন্যদের হস্তক্ষেপ অনেক সময় অসন্তোষ তৈরি করে।
২. সংঘর্ষের আশঙ্কা বেশি: নানা মতের ও স্বভাবের মানুষ একসঙ্গে বসবাস করলে মতবিরোধ দেখা দেয়, যা পরিবারে অশান্তি সৃষ্টি করতে পারে।
৩. আর্থিক চাপ ও বৈষম্য: একটি পরিবারের সব সদস্য আর্থিকভাবে সমান নয়, ফলে অনেক সময় আয়-ব্যয় নিয়ে বিরোধ হয়।
৪.সন্তানের প্রতি পর্যাপ্ত মনোযোগ দেওয়া কঠিন: বড় পরিবারে সন্তানদের প্রতি মনোযোগ কিছুটা বিভক্ত হয় এবং তাদের চাহিদা পুরোপুরি পূরণ নাও হতে পারে।
৫. বাসস্থানের সংকট: যৌথ পরিবারে সদস্য বেশি হওয়ার কারণে অনেক সময় বাসস্থানের সংকট দেখা দেয়। ফলে অনেক ক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যরা একসঙ্গে গাদাগাদি করে থাকেন। যা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো না ।

একক পরিবার
একক পরিবার বলতে সাধারণত সেই পরিবারকে বোঝানো হয়, যেখানে স্বামী-স্ত্রী এবং তাদের অবিবাহিত সন্তানরা বসবাস করে। এটি একটি ক্ষুদ্র পরিসরের পরিবার। শহরাঞ্চলে এই পরিবারের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে একক পরিবারে বেশ কিছু সুবিধাও আছে। যেমন-

১. স্বাধীনতা ও ব্যক্তিগত পরিসর: একক পরিবারে প্রত্যেক সদস্যের স্বাধীনতা বজায় থাকে। সিদ্ধান্ত গ্রহণে স্বচ্ছতা থাকে, এবং মতভেদ কম হয়।
২. বিষয়ভিত্তিক মনোযোগ: সন্তানদের প্রতি বাবা-মার মনোযোগ বেশি থাকে, ফলে তারা অধিক যত্ন পায় এবং মানসিকভাবে সুস্থ থাকে।
৩. পরিচ্ছন্নতা ও নিয়ম বজায় রাখা সহজ: ছোট পরিবার হওয়ায় ঘর পরিচ্ছন্ন রাখা, নিয়ম-কানুন মানা এবং রুটিন অনুযায়ী চলা সহজ হয়।
৪. আর্থিক সাশ্রয়: খরচ তুলনামূলকভাবে কম হয়, এবং পরিবার নিজের চাহিদা অনুযায়ী বাজেট নির্ধারণ করতে পারে।
৫. স্থানান্তরের সুবিধা: একক পরিবার সহজেই স্থান পরিবর্তন করতে পারে, যেমন কর্মস্থলের কারণে অন্য শহরে চলে যাওয়া ইত্যাদি।

একক পরিবারের অসুবিধাও রয়েছে তেমনি। যেমন-
১. সম্মিলিত সহানুভূতির অভাব: আত্মীয়-স্বজন ও পরিবারের প্রবীণ সদস্যদের সঙ্গে সম্পর্ক দুর্বল হতে পারে।
২. সন্তানের সামাজিক শিক্ষা সীমিত: শিশুরা অনেক সময় অন্য আত্মীয়দের সঙ্গে বেড়ে না ওঠায় পারিবারিক মূল্যবোধ ও সামাজিক আচরণ শেখার সুযোগ কম পায়।
৩. সহায়তার অভাব: অসুস্থতা, আর্থিক সমস্যা বা জরুরি অবস্থায় পাশে দাঁড়ানোর মতো ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ের অভাব অনুভব হয়।
৪. বৃদ্ধ বাবা-মায়ের অবহেলা: একক পরিবারে অনেক সময় পিতামাতাকে রেখে সন্তানরা আলাদা হয়ে যায়, ফলে তারা একাকীত্বে ভোগেন।
৫. মানসিক চাপ: একক পরিবারের বাবা- মাকে সংসারের সব কিছু দেখতে হয়। যা অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাবা- মাকে মানসিক চাপের সৃষ্টি করে।

একক এবং একান্নবর্তী-উভয় ধরনের পরিবারেরই আছে নিজস্ব সুবিধা ও চ্যালেঞ্জ। আধুনিক জীবনে স্বাধীনতা ও গোপনীয়তা গুরুত্বপূর্ণ, সেক্ষেত্রে একক পরিবার অনেকের জন্য আকর্ষণীয়। অপরদিকে, সামাজিক বন্ধন ও পারস্পরিক সহানুভূতির ক্ষেত্রে একান্নবর্তী পরিবার এখনও অমূল্য। জীবনযাপন ও পারিবারিক চাহিদার ভিত্তিতে মানুষ যে কোনো কাঠামো বেছে নিতে পারেন। তবে আমাদের উচিত পারিবারিক বন্ধন, শ্রদ্ধাবোধ ও মূল্যবোধকে বজায় রেখে যে কোনো কাঠামোতে সহানুভূতিশীল ও দায়িত্ববান থাকা।